মেয়েলী গীত
মেয়েলী গীত এক প্রকার লোকগীতি। যেকোনো পারিবারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে গ্রামের মেয়েরা একক বা দলবদ্ধভাবে এ গান পরিবেশন করে। তারাই এ গানের রচয়িতা, ধারক ও বাহক। বিভিন্ন বয়সের নারীরা এতে অংশগ্রহণ করে। তারা প্রায়শই অপেশাদার, তবে কোনো কোনো অঞ্চলে পেশাদার শিল্পীও থাকে, যাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘গীদাল’; বিবাহাদি অনুষ্ঠানে তারা অর্থের বিনিময়ে গীত পরিবেশন করে।
মেয়েলী গীতে সাধারণত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় না; তবে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোলক জাতীয় যন্ত্রের ব্যবহার আছে। বেশির ভাগ মেয়েলী গীতের সুর করুণ ও আবেগধর্মী। এ গানের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। এর একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে ‘বিয়ের গীত’। বিয়ে উপলক্ষে যেসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন নামে ও পর্বে বিভক্ত, যেমন: গায়ে হলুদ, মেহেদি তোলা, সোহাগ মাগা, জলভরন, বর-কনে স্নান, কনে সাজানো, বর বরণ, বর-কনে বিদায়, কৌতুক ইত্যাদি। এর প্রায় প্রতিটি পর্বে মেয়েলী গীত পরিবেশিত হয়। পরিবারের কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে মেয়েরা সারারাত জেগে গীত গেয়ে তার নিরাময় কামনা করে। অনুষ্ঠান-উপলক্ষ ছাড়াও গৃহস্থ রমণীরা অবসর মুহূর্তে গীত গেয়ে তাদের আবেগ প্রকাশ করে থাকে।
মেয়েলী গীতে একদিকে যেমন নারী-মনের কামনা-বাসনা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে তেমনি লঘু হাস্যরস, কৌতুক ও ঠাট্টা-মশকরা স্থান পায়। এক কথায় মেয়েলী গীত গ্রামের শিক্ষাবঞ্চিত নারীর মনের অকৃত্রিম প্রকাশ। বর্তমানে গ্রামে শহরের প্রভাব পড়ায় এসব গীতের চর্চা ও ব্যাপকতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। [শাহিদা খাতুন]