মেটাজিনোমিক্স

মেটাজিনোমিক্স (Metagenomics) পরিবেশগত নমুনায় বিদ্যমান নানারকম জীবের কোষ হতে আহরিত মিশ্র ডিএনএ অথবা আরএনএ অণুতে বিদ্যমান নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স অধ্যয়ন, এদের সনাক্তকরণ, জীবসমুহের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া ইত্যাদি জানার এক ধরনের অগ্রসরমান জিনোমিক্স। কোন পরিবেশে বিদ্যমান সমগ্র অণুজীবের বৈচিত্র্য, তাদের সংখ্যানুপাত, জিনের প্রকাশ, কোন রোগজীবাণুকে সনাক্তকরণ, ক্যান্সারসহ নানারকম নন-প্যাথোজেনিক রোগ সনাক্তকরণ, নতুন জিন আবিষ্কার, জীববৈচিত্র্য অনুসন্ধান, মাটির স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ, নতুন প্রজাতির সন্ধান এমনকি নতুন জৈব রাসায়নিক যেমন উপকারী এনজাইম অনুসন্ধানে মেটাজিনোমিক্স একটি আধুনিক প্রযুক্তি ।

মেটাজিনোমিক্স প্রায়শই জীবাণুর একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যার পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এই অণুজীবসমূহ সাধারণত মাটি, জলে বা মানুষের ত্বকে পাওয়া যায়। বর্তমান যুগে আনুজীব নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা মেটাজেনমিক্স-এর উপর নির্ভরশীল। ফলে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটিতে অবস্থিত অণুজীবএর জিনের গঠন জানা যায়। এর ফলে সম্ভাব্য লাইব্রেরি অ্যাক্সেস করা সম্ভব। পরিবেশ থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ ডাটা বের করা হয়, সঠিক ভেক্টরে ক্লোন করা হয় এবং তারপর এই ক্লোন সক্রিয় ই. কোলাই কোষে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরিত ডাটা পরে শারীরবৃত্তীয়, বিপাকীয় এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরীক্ষা করা হয় এবং নতুন তথ্য তৈরি করা হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব কারণেই এই পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

তত্ত্ব অনুসারে, মাইক্রোবিয়াল পপুলেশন এর প্রতিটি জিনের ডিএনএ ক্রমগুলি একটি মেটাজিনোমিক ডাটাবেসে সংরক্ষিত থাকে। তবে, এই জিনগুলি, প্রায়শই সংশ্লিষ্ট হোস্ট সিস্টেমে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়। চিকিৎসাক্ষেত্র থেকে পরিবেশগত, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শিল্পবর্জ্য পর্যন্ত, মেটাজিনোমিক্সর বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। এটি সংক্রমণ সনাক্ত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিবেশগত নমুনায় জীবের বৈচিত্র্য মেটাজিনোমিক্স থেকে শেখা যায়, যা শিল্প গবেষণায়ও সাহায্য করবে। এছাড়াও, বিভিন্ন বাণিজ্যিক জৈবক্যাটালিস্ট, যেমন, ল্যাকেসেস, এস্টেরেস এবং নাইট্রিল হাইড্রেটেজ ইত্যাদি সনাক্ত করতে মেটাজেনমিক্স সিদ্ধহস্ত।

মেটাজিনোমিক্স বায়োরিমিডিয়েশনের একটি হাতিয়ার। মেটাজেনোমিক্সের অধ্যয়ন বিভিন্ন অণুজীব এর উপস্থিতি এবং দূষিত পরিবেশে তাদের সংশ্লিষ্ট ভূমিকা সনাক্তকরণে সহায়তা করে; এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক দূষক অবনমিত করার জন্য প্রকৃতির সবচেয়ে কার্যকর উপায় সম্পর্কে ধারনা দেয়। এগুলি ছাড়াও, মেটাজেনোমিক্সের আরও কিছু কাজ রয়েছে। এটি নতুন জিন আবিষ্কারের জন্য দুর্দান্ত এক উপায় যা পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে বুঝতে, এমনকি আমাদের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে।

গাট বা অন্ত্রে বিদ্যমান উপকারী অণুজীবকে দ্বিতীয় মস্তিষ্ক মনে করা হয়। মেটাজিনোমিক্স গাট-মাইক্রোবায়োম বা অণুজীবসমূহ এবং এদের কার্যকারীতা অধ্যয়নে এক অত্যাবশ্যকীয় টুল। বায়োইনফরমেটিক্সের মাধ্যমে মেটাজিনোমিক্সের সিকোয়েন্স ডাটাকে বিশ্লেষণ করা হয়। সুতরাং মেটাজিনোমিক্স ডাটা থেকে ব্যবহারোপযোগী জ্ঞান পেতে বায়োইনফরমেটিক্স একান্ত প্রয়োজন। বায়োইনফরমেটিক্স হচ্ছে কম্পিউটার সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বিশাল আকারের বায়োলজিক্যাল ডাটা বিশ্লেষণের বিদ্যা। [মো. তোফাজ্জল ইসলাম]