মেটক্যাফ, স্যার চার্লস টি
মেটক্যাফ, স্যার চার্লস টি (১৭৮৫-১৮৪৬) ১৮৩৫ সালের মার্চ থেকে ১৮৩৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর মেজর টমসন মেটক্যাফের পুত্র চার্লস থিওফিলাস মেটক্যাফ ১৭৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রোমলি ও ইটনে শিক্ষালাভের পর ১৮০১ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি কোম্পানিতে কেরানির চাকরি নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন।
তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৮০৯ সালে রণজিৎ সিং-এর সঙ্গে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, যা পাঞ্জাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনে এবং তা ১৮৪৫ সালের প্রথম শিখযুদ্ধ পর্যন্ত বজায় ছিল। শিখদের শক্তি আফগানিস্তান ও সিন্ধুর বিরুদ্ধে পরিচালিত হলে ব্রিটিশ শাসিত এলাকা সুরক্ষিত হয়। এর পুরস্কারস্বরূপ চার্লস মেটক্যাফ ১৮১০ সালে গোয়ালিয়র, ১৮১১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত দিল্লি এবং ১৮২০-১৮২২ সাল এবং ১৮২৫-১৮২৭ সালে হায়দ্রাবাদে রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি সরকারি গুপ্তচর ও রাজনৈতিক বিভাগসমূহের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮১৯ থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত তিনি লর্ড হেস্টিংসের একান্ত সচিব এবং ১৮২৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৮৩৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার সুপ্রীম কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। লর্ড বেন্টিঙ্কের পর তিনি ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ছিলেন (মার্চ ১৮৩৫-মার্চ ১৮৩৬)। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স তাঁর নিয়োগ স্থায়ী করার জন্য সুপারিশ করার বিষয়টি বিবেচনা করছিল, কিন্তু উদার মনোভাবাপন্ন মেটক্যাফ কোর্টের বিরাগভাজন হন, যখন তিনি লর্ড ওয়েলেসলী কর্তৃক ভারতীয় ছাপাখানার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন এবং এভাবে তিনি ভারতীয়দের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। এর পরিণতিস্বরূপ তাঁকে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে (বর্তমান উত্তর প্রদেশ) লেফটেন্যান্ট গভর্নর করে পাঠানো হয় এবং তিনি ১৮৩৬ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত দুবছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদ্রাজের গভর্নর নিযুক্ত হন।
পরিচালকমন্ডলী তাঁর উদার সংস্কারের প্রতিশ্রুতিসমূহ অননুকূলভাবে বিবেচনা করলে মেটক্যাফ হতাশ হয়ে কোম্পানির চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান।
পরে তিনি জ্যামাইকার গভর্নর (১৮৩৯-৪২) ও ক্যানাডার গভর্নর জেনারেল (১৮৪৩-৪৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৫ সালে তাঁকে প্রিভি কাউন্সিলর করা হয় এবং ১৮৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
মেটক্যাফের মতো এত দীর্ঘ দিন আর কোন ইংরেজ ভারতে চাকরি করেননি। তিনি যখন ভারতে আসেন তখন লর্ড ওয়েলেসলীর অধীনে ব্রিটিশ শক্তি ছিল গৌরবের শিখরে। তিনি এদেশে ৩৮ বছর অবস্থান করেছিলেন। সংস্কারের প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে ১৮১২ সালেই দিল্লি এলাকায় দাসপ্রথা, সতীদাহ ও শিশুহত্যা নিবারণে প্রণোদিত করে। কাউন্সিলের একজন সদস্য হিসেবে মেটক্যাফই গভর্নর জেনারেল বেন্টিঙ্ককে দেশ শাসনের কাজে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে অংশিদার রূপে গ্রহণ করতে প্রভাবিত করেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী একজন যোগ্য বেসামরিক কর্মকর্তা। তাঁর উদার প্রেসনীতি তাঁকে ভারতীয়দের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে এবং তারা কলকাতায় মেটক্যাফ হল নির্মাণ এবং সেখানে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে। [কে.এম মোহসীন]