মৃত্তিকা রং
মৃত্তিকা রং (Soil Colour) মৃত্তিকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান ধর্ম, যা প্রায়ই মৃত্তিকার বর্ণনা বা নামকরণ করতে ব্যবহার করা হয়। কোন মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে এর রং থেকে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। একটি গাঢ় রঙের মৃত্তিকা হালকা রঙের মৃত্তিকা থেকে অধিক উৎপাদনশীল বলে ধারণা করা হয়, কারণ একটি গাঢ় রঙের মৃত্তিকাতে অধিক জৈব পদার্থ থাকে। রঙের দিক থেকে মৃত্তিকা ব্যাপক পরিসরে পার্থক্য প্রদর্শন করে। মৃত্তিকার রং সাদা, লাল, বাদামি, ধূসর, হলুদ বা কালো হতে পারে, তা ভূ-পৃষ্ঠে এদের অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিজারিত মৃত্তিকাতে নীলাভ ও সবুজাভ রঙের মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। অধিক জৈব পদার্থ সংবলিত মৃত্তিকা গাঢ় রঙের হয়ে থাকে। বিশুদ্ধ রং মৃত্তিকাতে বিরল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রং মিশ্র হয়। যখন মৃত্তিকা ম্যাট্রিক্সে অন্য রঙের দাগ থাকে তখন এটাকে কর্বুর (mottle) বলা হয়। পর্যায়ক্রমে সিক্ত ও শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে এমন মৃত্তিকাতে প্রচুর পরিমাণে কর্বুর থাকে।
আয়রন অক্সাইড মৃত্তিকার রঙে বিশেষ অবদান রাখে। বিভিন্ন অবস্থাধীনে, যেমন- স্থায়িভাবে সম্পৃক্ত, স্থায়িভাবে অসম্পৃক্ত এবং পার্যায়ক্রমে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে। এ প্রকারের ভিন্নতা বিশেষভাবে আয়রন যৌগকে প্রভাবিত করে। প্রায় সব মৃত্তিকা উৎসবস্ত্ত ও মৃত্তিকাতে আয়রন যৌগ বিদ্যমান। আয়রন যৌগের এই উপস্থিতি মৃত্তিকার রঙকে প্রভাবিত করে। স্থায়িভাবে সম্পৃক্ত অবস্থাধীনে ধূসর মৃত্তিকা পাওয়া যায়, কারণ এ অবস্থায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ফেরাস আয়রন যৌগ উৎপন্ন হয়, যা আয়রন মৃত্তিকা থেকে পানির সঙ্গে নিচে চলে যায়। অসম্পৃক্ত অবস্থাধীনে বায়ুর উপস্থিতিতে ফেরিক আয়রন উৎপন্ন হওয়ার ফলে এ অবস্থায় মৃত্তিকার রং হলুদ, বাদামি বা লাল হয়।বাংলাদেশে মৌসুম মাফিক প্লাবিত অনেক মৃত্তিকাতে বিদ্যমান পর্যায়ক্রমিক সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত অবস্থাধীনে ধূসর এবং হলদে-লাল উভয় প্রকারের দাগ তৈরি হয় যা থেকে কর্বুর সৃষ্টি হয়।
এ কারণে মৃত্তিকার রং সাধারণত মৃত্তিকার নিষ্কাশন অবস্থার একটি উত্তম নির্দেশক। অন্যদিকে, বাংলাদেশে অনেক মৃত্তিকার পুনরাবৃত্ত চাষাবাদ বিশেষ করে রোপা ধানের জন্য মৃত্তিকা কাদা করার (puddling) ফলে অভেদ্য পৃষ্ঠমৃত্তিকার সৃষ্টি করে, যা এ স্তরের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রূপান্তরিত করে এবং অনেক মৃত্তিকাতে রঙেরও পরিবর্তন ঘটায়। [মোহাম্মদ সুলতান হোসেন]