মৃত্তিকা ফেইজ
মৃত্তিকা ফেইজ (Soil Phase) সিরিজ স্তরে মৃত্তিকার বিভাগ। যখন প্রাকৃতিক প্রতিভাস (ভূমিক্ষয়, মিশ্র পললের সঞ্চয়ন, প্রাণী ও গাছপালার ক্রিয়া) বা মানুষের ক্রিয়াকলাপ পৃষ্ঠ ক্ষিতিজের প্রকৃতি, বিন্যাস ও গতিশীলতাকে কখনও কখনও সাময়িকভাবে রূপান্তর ঘটায় তখন এ বিভক্তি করা হয়। এটি গাছ জন্মানোর জন্য মৃত্তিকার পরিবর্তিত অবস্থা বা মৃত্তিকার ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে, কিন্তু মৃত্তিকার উৎপত্তিগত দিক থেকে এর কোন তাৎপর্য থাকে না। আন্তর্জাতিকভাবে ভূমির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে তৃতীয় স্তরে উপবিভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে যার একক মৃত্তিকা ফেইজ। মৃত্তিকার এ বৈশিষ্ট্য ভূমি ব্যবহার ও ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এসব বৈশিষ্ট্য ভূমির পৃষ্ঠ ও অন্তঃপৃষ্ঠ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ভূমি ব্যবহার সীমিতকারী নিয়ামক, যা বিভিন্ন মৃত্তিকা এককে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়।
পৃথিবীর মৃত্তিকা মানচিত্রে ফেইজ নির্দেশক হিসেবে ব্যবহূত শব্দগুলো হলো anthraquic, duripan, fragipan, gelundic, gilgai, inundic, lithic, petric, petrocalcic, petroferric, petrogypsic, phreatic, palcic, rudic, saline এবং sodic।
বাংলাদেশের মৃত্তিকা ফেইজ বলতে মৃত্তিকা সিরিজের উপরিভাগকে বুঝানো হয়। ভূমি ব্যবহার, শস্যের উপযোগিতা, সুপ্ত উৎপাদনশীলতা বা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার জন্য প্রায়োগিক গুরুত্বের কারণে মৃত্তিকা সিরিজের মধ্যে উপরিভাগে পার্থক্য করা হয়। একই সিরিজের মৃত্তিকার মধ্যে প্রায়োগিক দিক থেকে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্যগুলো হলো মৌসুমমাফিক প্লাবনের গভীরতা, বন্যা বা ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস দ্বারা শস্যের ক্ষতি, শুষ্ক ঋতুতে নিষ্কাশনের সময় (স্বাভাবিক সময়ের পূর্বে স্বাভাবিক বিলম্ব), সমতল বা বিষম ভূসংস্থান, মৃত্তিকার গভীরতা, মৃত্তিকার ঢাল, শুষ্ক অবস্থায় মৃত্তিকার লবণাক্ততা, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, গোপালপুর সিরিজে পাঁচটি ফেইজ শনাক্ত করা হয়েছে: গোপালপুর উঁচুভূমি, গোপালপুর মাঝারি উঁচুভূমি, গোপালপুর মাঝারি নিচুভূমি, গোপালপুর মাঝারি নিচুভূমি বন্যা ঝুঁকিপ্রবণ এবং গোপালপুর মাঝারি নিচুভূমি (নদী) ভূমিক্ষয় ঝুঁকিপ্রবণ।
বর্ণিত পাঁচটি ফেইজের চেয়ে আরও অধিক সীমিত পরিসরে ফেইজ শনাক্ত করতে মাঠ পর্যায়ে মৃত্তিকার উর্বরতা নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষণের দরকার হতে পারে। [আমিনুল ইসলাম]