মৃত্তিকা জরিপ

মৃত্তিকা জরিপ (Soil Survey)  মাঠ পর্যায়ে কোন এলাকার মৃত্তিকার প্রকার নির্ণয় এবং মানচিত্রে এসব মৃত্তিকার প্রদর্শন পদ্ধতি। মৃত্তিকা জরিপে অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হলো: (ক) কোন এলাকাতে অনুপ্রস্থভাবে গমন এবং ছকে ব্যাখ্যামূলক বর্ণনার ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে মৃত্তিকার প্রকার নির্ধারণ করা; (খ) মাঠে মৃত্তিকার অঙ্গসংস্থান (morphology) অনুশীলন; (গ) ল্যাবরেটরীতে বিশ্লেষণের জন্য মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করা; (ঘ) অঙ্গসংস্থানীয় ও ল্যাবরেটরী বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মৃত্তিকাকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিতকরণ; (ঙ) আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা শ্রেণীবিন্যাস রীতি অনুসারে মৃত্তিকাকে শ্রেণীবিন্যস্ত ও সহসম্পর্কিতকরণ; (চ) যথোপযুক্ত স্কেল দ্বারা মৃত্তিকা এককের মানচিত্র তৈরি করা এবং (ছ) ব্যাখ্যাসহ মৃত্তিকা জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা।

সংক্ষেপে বলা যায় যে, মৃত্তিকা জরিপের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রকারের মৃত্তিকা শনাক্ত করা, এসব মৃত্তিকার বর্ণনা করা ও মানচিত্রে প্রদর্শন করা এবং ভূমিব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত এদের ধর্মাবলি মূল্যায়ন করা।

মৃত্তিকা জরিপ চার প্রকার: (১) অনুসন্ধানমূলক, (২) প্রাথমিক, (৩) বিস্তারিত প্রাথমিক এবং (৪) বিস্তারিত। প্রত্যক প্রকার মৃত্তিকা জরিপের জন্য যথাযথ স্কেলসহ ভিত্তি মানচিত্রের (base map) প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন প্রকার ভিত্তি মানচিত্রের মধ্যে বিমানচিত্র মৃত্তিকা জরিপের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয়।

১৯৬৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পরিচালিত প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপে স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রযোজনীয় USDA মৃত্তিকা জরিপ ম্যানুয়েলে বর্ণিত এবং মৃত্তিকা বর্ণনার জন্য FAO নির্দেশনা গ্রহণ করা হয়েছিল।

১৯৬১ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্ব খাদ্য কৃষি সংস্থার (FAO) সহায়তায় মৃত্তিকা জরিপ অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ কাজ পরিচালনা করে। দেশের আশি শতাংশেরও অধিক এলাকায় এ জরিপ চালানো হয়। এসব জরিপে মাঠ পর্যায়ে শনাক্ত করা প্রধান একক ছিল মৃত্তিকা সিরিজ। মৃত্তিকা সিরিজ হলো সদৃশ উৎস বস্ত্ত থেকে জাত মৃত্তিকা উৎপত্তির সদৃশ অবস্থার প্রভাবাধীনে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকা এবং সিরিজগুলো এদের প্রধান ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলিতে প্রায় কাছাকাছি সদৃশ্যতা প্রদর্শন করে। মৃত্তিকা সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ উপরিভাগগুলোকে মৃত্তিকা ফেইজ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। স্বতন্ত্র মৃত্তিকা এককের পরিবর্তে মানচিত্র তৈরি করার সময় মৃত্তিকা সংঘ (Soil association) মতবাদ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কারণ স্বতন্ত্র এককের ব্যবহার অত্যন্ত জটিল প্যাটার্ন সৃষ্টি করতে পারতো। এটা দেখা গেলো যে, অধিকাংশ এলাকাতে মৃত্তিকা সমূহের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে কেবল অল্প সংখ্যক মৃত্তিকা বিদ্যমান। এ সম্পর্কটি সাধারণত ভূসংস্থানীয় সংক্রান্ত, অর্থাৎ ভূসংস্থানের বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও স্বতন্ত্র মৃত্তিকার অবস্থান একটি অত্যন্ত জটিল প্যাটার্নের সৃষ্টি করে, তবুও কিছু কিছু মৃত্তিকার সুবিন্যস্ত সম্পর্কের কারণে এদেরকে মৃত্তিকা সংঘে একত্রিত করা সম্ভব হয়েছিল। নোয়াখালী-চাঁদপুর এলাকাতে তেত্রিশটি মৃত্তিকা সিরিজ শনাক্ত করা হলেও এ অঞ্চলে একচল্লিশটি মৃত্তিকা সংঘ বর্ণনা করা হয়েছিল। মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাস ছাড়াও প্রাথমিক জরিপে ভূমিকে কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা ও শস্য উপযোগিতার সম্ভাবনা অনুসারে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়েছিল। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (SRDI) বাংলাদেশের সকল জেলার জন্য প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। [মোহাম্মদ সুলতান হোসেন]