মুহম্মদ আজম, যুবরাজ
মুহম্মদ আজম, যুবরাজ আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে একবছরের সামান্য কিছু বেশি সময়ের জন্য (১৬৭৮-১৬৭৯) বাংলার সুবাহদার ছিলেন। আজম খান কোকার মৃত্যুর পর সুবাহদার নিযুক্ত হয়ে তিনি ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই ঢাকা পৌঁছেন।
যুবরাজ আজমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব ছিল কামরূপ পুনরাধিকার। ইসলাম খান চিশতি কামরূপ অধিকার করেছিলেন, তবে মীর জুমলার মৃত্যুর পর তা হাতছাড়া হয়ে যায়। অহোম রাজ উদয়াদিত্যের মৃত্যুর পর (১৬৭৩) রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাজা নির্বাচনকারীর ভূমিকা পালনকারী উচ্চাভিলাষী ও বিবেকহীন মন্ত্রিগণ দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল প্রাধান্য লাভ করলে অপর দল হতাশ হয়ে বাংলার মুগল সুবাহদারের সাহায্য প্রার্থনা করে। শাহজাদা মুহম্মদ আজম অনতিবিলম্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন এবং হস্তচ্যুত হওয়ার বারো বছর পর ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মুগলরা আবার কামরূপ অধিকার করে।
শাহজাদা আজম লালবাগে একটি চমৎকার দুর্গের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে বদলি করা হয়। দুর্গের ভগ্নাবশেষ দেখে মনে হয় যে, শুধুমাত্র শাহজাদার বাসস্থান হিসেবেই নয়, একটা দুর্গ হিসেবেও এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দুর্গপ্রাচীরের অভ্যন্তরে তিনি একটি সুন্দর মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন।
সম্রাটের পুত্র হওয়ায় কোন সামন্ত প্রধান বা জমিদার তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মাথা তোলার বা কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোন নালিশ করার সাহস পায় নি এবং তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে কিছু লেখার মতো অবিমৃষ্যকারিতাও কোন সরকারি সংবাদ দাতার ছিল না। রাজস্ব আদায়ের জন্য শাহজাদা জনৈক মীর মাওলাকে তাঁর দীউয়ান এবং মুলুক চাঁদকে হুজুর-নবিশরূপে নিয়োগ করে তাদের ওপর প্রশাসনের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে স্বীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন এবং শিকার করে দিন কাটান। সম্রাট তাঁর পুত্রের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত হয়ে তাঁকে দিল্লি ফিরে যাওয়ার আদেশ দেন। শাহজাদা ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকায় লোকজন বলাবলি করত যে, শাহজাদা আজম ঘোড়ায় চড়ে দেশ শাসন করেছিলেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর শাহজাদা আজম সিংহাসন দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু উত্তরাধিকার যুদ্ধে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শাহজাদা মুয়াজ্জমের কাছে পরাজিত হন। [আবদুল করিম]