মুস্তাফা, গোলাম
মুস্তাফা, গোলাম (১৯৩৫-২০০৩) অভিনেতা ও আবৃত্তিকার। গোলাম মুস্তাফা ১৯৩৫ সালের ২ মার্চ খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই গোলাম মুস্তাফার শিল্পী জীবনের সূচনা হয়। ১৯৪৫ সালে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল মঞ্চে বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত পল্লীমঙ্গল নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর বরিশাল জেলা স্কুলে ‘ফাতেহা ইয়াজ দাহাম’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ঐ নাম’ কবিতাটির আবৃত্তির মধ্য দিয়ে তিনি দর্শকদের নজর কাড়েন।
ষাটের দশকের শুরুতে গোলাম মুস্তাফা নাট্যাভিনয় শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে জড়িয়ে পড়েন। সিনেমা ও নাটক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। তিনি বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিনশ চলচ্চিত্রে নায়ক, সহনায়ক, খলনায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু চলচ্চিত্র হচ্ছে পীরিত না জানে রীত, কাজল, চোখাই, চান্দা, তালাশ। বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আলীবাবা চল্লিশ চোর, রাজধানীর বুকে, নিজেকে হারায়ে খুঁজি, রক্তাক্ত বাংলা, রূপালী সৈকতে, সীমানা পেরিয়ে, তিতাস একটি নদীর নাম, সূর্যসংগ্রাম, পদ্মা নদীর মাঝি, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, শুভদা, শ্রাবণ মেঘের দিন, ধীরে বহে মেঘনা, চন্দ্রনাথ, দেবদাস ইত্যাদি। গোলাম মুস্তাফা অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেন।
গোলাম মুস্তাফা ছিলেন একজন নিবেদিত সংস্কৃতিকর্মী। তিনি বিভিন্ন সাময়িকীতে আধুনিক চলচ্চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে নিবন্ধ লিখেন। তিনি কর্নেল মেইগস রচিত ফেয়ার উইন্ড টু ভার্জিনিয়া গ্রন্থের সুপাঠ্য অনুবাদ করেন। ইউসিস, ঢাকা প্রকাশিত এ অনুবাদ গ্রন্থটির বাংলা নাম নতুন যুগের ভোরে। তাঁর অনেক অনুবাদকর্ম বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক সম্মানে ভূষিত হন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।
গোলাম মুস্তাফা ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ মৃত্যুবরণ করেন। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]