মুরতা

মুরতা ‘শিতলপাটি’ নামে পরিচিত বাংলাদেশের এক ঐতিহ্যময় মাদুর তৈরির কাঁচামাল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুরতা পাটিপাতা, পাটিবেত, মোসতাক ইত্যাদি স্থানীয় নামেও পরিচিত। Marantaceae গোত্রের Schumannianthus dichotoma (=Clinogyne dichotoma) প্রজাতির এ উদ্ভিদ আনুভূমিক কান্ডবিশিষ্ট এক গুল্ম।

এর সরল, উজ্জ্বল সবুজ কান্ড দৈর্ঘ্যে হয় ৩-৫ মিটার এবং ব্যাস ২.০ সেমি। কান্ডে পাতা থাকে এবং পাতাগুলি দ্বিধাবিভক্ত। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ এবং মালয় উপদ্বীপ অঞ্চলে মুরতা বিস্তৃত। সিলেটের জলাভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে মুরতা জন্মালেও সিলেট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী এবং চট্টগ্রাম জেলায় এর চাষ হয়। ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষ কারিগররা কান্ডের উপত্বক থেকে লম্বা, পাতলা ফালি নিখুঁতভাবে তৈরি করে। পরে এসব ফালি প্রক্রিয়াজাত করে মাদুর বোনা হয়। জায়নামায, ঝুড়ি, থলে এবং আরও নানা ধরনের সৌখিন দ্রব্য তৈরিতে মুরতার ফালি ব্যবহূত হয়। কান্ডের মধ্যকার কোমল অাঁশ থেকে রশি, দড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়।

মুরতা গাছ

বন বিভাগের এক হিসাব থেকে জানা যায় দেশের প্রায় ৮,০০০ মানুষ শীতলপাটি তৈরির সঙ্গে জড়িত। অতি ভেজা জমি, বিল অঞ্চল এবং জলাভূমি মুরতা চাষের জন্য উপযুক্ত। ঐতিহ্যগতভাবে ভূমি সংলগ্ন কান্ড বা রাইজোমের (rhizomes) মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার করানো হয়; তবে শাখার কাটিং-এর মাধ্যমেও এদের জন্মানো যায়। সাধারণত মে-জুন মাসে বপন করা হয় এবং ২-৩ বছরের মধ্যে আহরণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মুরতা সংগ্রহ করা হয়। বীজ থেকেও এর চাষ হতে পারে। ছায়াঘেরা জায়গাতেই মুরতা ভালো জন্মে। এজন্য অনেক চাষি মাঠে ছায়াদনের জন্য Euthrina গাছ রোপণ করে। আগাছা দমন ছাড়া মুরতা চাষে অন্য কোন ধরনের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না।  [এম খায়রুল আলম]