মুচি

মুচি  জুতা তৈরি এবং জুতা মেরামতের কাজ করেন। ত্রুটিযুক্ত বা পুরানো জুতা-সেন্ডেল মেরামত করে রং মাখিয়ে চাকচিক্য সৃষ্টি করাও এদের কাজ। মুচি ও চামার প্রকৃত অর্থে পৃথক দুটি সস্প্রদায় হলেও তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ। চামার সস্প্রদায় পশুচামড়া সংগ্রহ করেন। এরা গ্রামের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে এমনকি ঈদুল আযহার সময় মুসলিম পরিবারসমূহ থেকেও পশুচামড়া সংগ্রহ করেন।

মুচিরা চামার কর্তৃক সংগৃহীত চামড়া ব্যবহারোপযোগী করে তোলেন অথবা বিক্রির জন্য ট্যানারিতে নিয়ে যান। ঐতিহাসিকভাবে মুচিরা হিন্দু সস্প্রদায়ভুক্ত এবং তারা নিম্নশ্রেণীর ও সামাজিকভাবে ‘অস্পৃশ্য’। তারা গ্রামে বা শহরে মহল্লার এক কোণায় আলাদাভাবে বসবাস করেন। এ ধরনের মহল্লা মুচি পাড়া নামে পরিচিত। এসব মহল্লা উপেক্ষিতই বলা চলে। আগেকার দিনে এদেরকে প্রায়শ ঋষি বলা হতো। এরা জুতা, সেন্ডেল তৈরি, মেরামত ও রং মাখিয়ে পালিশ করার কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে মুচিদের জুতা বানানোর পুরানো পদ্ধতিকে দ্রুত বদলে দিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার। এখন আর এসব পেশা নিম্ন সস্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ নেই।

মুচি

মুসলিমসহ যে কোন সস্প্রদায়ের লোক আজ এসব পেশায় যুক্ত হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক বা সামাজিক প্রেক্ষাপট যা-ই থাকুক, মুচির পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এখনও নীচুশ্রেণির মানুষ বলেই গণ্য।

মুচিদের মূলত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যথা কাশ্যপ এবং শান্ডিল্য। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সস্পর্কে বাধানিষেধ নেই। ব্যভিচারের অভিযোগে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এবং বিবাহ-বিচ্ছেদপ্রাপ্ত বা বিধবা মহিলাদের পুনঃবিবাহের বিধান আছে। অধিকাংশ মুচি শিব সস্প্রদায়ভুক্ত, তবে তাদের একটা বড় অংশ বৈষ্ণব। ধর্মীয় উৎসবাদিতে তারা শূদ্রদের অনুকরণ করেন।

প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজের উচ্চশ্রেণিভুক্ত লোকদের বিভিন্ন ধরনের ও আকারের পুরানো শক্ত পোড়ামাটির জুতা/সেন্ডেল পরতে দেখা যেত। বাংলা সাহিত্যে মুচি এবং তাদের জীবনযাত্রা যেভাবে স্থান করে নিয়েছে তাতে ধরে নেওয়া যায় প্রাচীনকাল থেকে সমাজ জীবনে মুচির একটা প্রয়োজনীয় অবস্থান ছিল। তবে সমাজ কাঠামোতে এই পেশাগত সস্প্রদায় কীভাবে আবির্ভূত হলো তার কোন নিশ্চিত বিবরণ জানা যায় না। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে মুচিদের ঐতিহ্যবাহী পেশা বদলে যাচ্ছে। তারা বাঁশবেতের দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন।  [গোফরান ফারুকী]