মুখোপাধ্যায়, শম্ভুচন্দ্র
মুখোপাধ্যায়, শম্ভুচন্দ্র (১৮৩৯-১৮৯৪) সাংবাদিক। ১৮৩৯ সালের ৮ মে চবিবশ পরগনা জেলার এক মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি ওরিয়েন্টাল সেমিনারি (১৮৪৮-৫৩) এবং হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে অধ্যয়ন করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে ১৮৫৫ সালে তিনি বন্ধু কৃষ্ণচন্দ্র পালের সহায়তায় Calcutta Monthly Magazine প্রকাশ করেন। পরের বছর তিনি Morning Chronicle পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৮৫৯ সালে তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে হিন্দু প্যাট্টিয়ট পত্রিকায় যোগ দেন এবং পরবর্তীতে এর সম্পাদক হন। সে সময়ে তিনি ক্যালকাটা ট্রেনিং একাডেমির প্রধান শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি Mookherjee’s Magazine (১৮৬১) পত্রিকার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন, যা সে সময়কার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের জাগরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এই পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ততাই তাঁকে সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতিমান করে তোলে। তিনি ১৮৮২ সালে সাপ্তাহিক Reis and Rayyet পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন এবং ১৮৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা চালিয়ে যান। তিনি সমাচার হিন্দুস্তানী এবং Hindu Intelligencer পত্রিকার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
শম্ভুচন্দ্র লক্ষ্ণৌর ‘তালুকদারস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহকারী সচিব (১৮৬১-১৮৬৩) ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের রাজনৈতিক উপদেষ্টা, দেওয়ান ও সচিব (১৯৬৪-১৮৬৬) হন। ১৮৬৭ সালে তিনি কাশীপুরের রাজা সিরাজ সিং-এর সচিব নিযুক্ত হন। তিনি ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র দেও-এর মন্ত্রী (১৮৭৮-১৮৮১) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শম্ভুচন্দ্র ব্রিটিশ শাসন সমর্থন করলেও কঠোর ভাষায় তাঁদের অবিচার, দুর্নীতি এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরোধিতা করেন। ১৮৭৫ সালে তিনি স্বল্পস্থায়ী রাজনৈতিক সংগঠন Indian League-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি হ্যোমিওপ্যাথি, তে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ১৮৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং প্রথম শ্রেণীর একজন অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
শম্ভুচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ হলো: On the Causes of the Mutiny (১৮৫৮), The Mutinies and the People (১৮৫৯), Mr. Wilson, Lord Canning and the Income Tax (১৮৬০), The Prince in India (১৮৭১), Travels and Voyages in Bengal between Calcutta and Independent Tipperah (১৮৮৩), The Career of an Indian Princess (১৮৯৬) ইত্যাদি। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]