মীর বখশী

মীর বখশী  সামরিক বিভাগের প্রধান। মুগল আমলে মীর বকশী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। সুলতানি আমলে এ বিভাগের প্রধানকে আরিজ-ই-মমালিক রূপে অভিহিত করা হত।

সম্রাট আকবরের মনসবদারী ব্যবস্থায় মীর বকশী সাধারনত মনসবদারগণের নিয়োগ, পদোন্নতি, সাময়িকভাবে পদচ্যুত এবং  বরখাস্তের কাজসমূহ নিয়ন্ত্রণ করতেন। মীর বকশীর দেয়া প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সামরিক বিভাগে নতুন নিয়োগের কাজ সম্পন্ন হত। সামরিক বিভাগের প্রধান হিসেবে একজন মীর বকশীকে একাধারে শিক্ষিত এবং সামরিক বিষয়ে দক্ষ হতে হত। মীর বকশী প্রতিরক্ষা সচিব এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও কাজ করতেন।

আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন প্রথম শাসক যিনি ভারতে প্রথম ঘোড়ায় দাগ দেয়ার প্রথা প্রবর্তণ করেন (১৩১২-১৩)। এই ব্যবস্থা শেরশাহের (১৫৪১-৪২) সময়ে এবং পরবর্তীতে সম্রাট  আকবর এর সময়ে পুনরায় প্রচলিত হয়। আকবরের সময়ে প্রজনন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ঘোড়ার শ্রেণিবিভাগ করা হত এবং সে সময়ে ঘোড়ায় দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে রাখার জন্য মীর বকশীর অধীনে অন্যান্য কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি পৃথক বিভাগের সৃষ্টি করা হয়। বিভাগের দায়িত্বশীল সহকারী কর্মচারীগণ এই বিষয়ের প্রতিবেদন সমূহ পুনর্বিবেচনা করে সনদপত্র প্রদান করতেন। মীর বকশী তাঁর পূর্ববর্তী উজিরের কিছু দায়িত্বও পালন করতেন। এভাবেই মীর বকশী শুধুমাত্র দীউয়ান বা ওয়াকিলের পরবর্তী দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন। আকবরের সময়ে মীর বকশীর অধীনে একাধিক বকশী নিযুক্ত ছিলেন, কিন্তু তাঁদের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। সম্রাট আওরঙ্গজেব এর শাসনের শেষ পর্যায়ে মীর বকশীকে সহযোগিতা করার জন্য দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ের বকশীও নিযুক্ত করা হয়, যাঁরা প্রধান সেনা উপদেষ্টার ভূমিকাও পালন করতেন। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে তাঁদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হত। যেমন মীর বকশী, সৈন্য বিভাগের নিয়োগ, পুর্বিবেচনা এবং অন্যান্য সমপর্যায়ের কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সহকারী বকশীদের অন্যান্য অঞ্চলে অভিযানকারী প্রত্যেক সেনাদলের সঙ্গে প্রেরণ করা হত। সৈন্যদের বেতন প্রদান করাও ছিল ওই বখশীরদের প্রধান দায়িত্ব। এ প্রক্রিয়ায় বকশীগণকে প্রদেশ, সরকার এবং সমমানের প্রশাসনিক ইউনিটে নিয়োগ প্রদান করা হত। প্রত্যেক সহকারী বকশী একজন প্রধান বকশী বা মীর বকশীর নিকট দায়বদ্ধ থাকতেন।  [নাসরীন আক্তার]