মির্জানগর মসজিদ
মির্জানগর মসজিদ যশোর জেলার কেশবপুর পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত কপোতাক্ষ নদের দক্ষিণ তীরে মির্জানগর গ্রামে নওয়াববাড়ি কমপ্লেক্স-এর অভ্যন্তরে টিকে থাকা একমাত্র স্থাপত্য নিদর্শন। জেম্স রেনেলের মানচিত্রে (১৭৮১খ্রি) যশোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে মির্জানগরকে দেখানো হয়েছে। দুই মুগল ফৌজদার মির্জা শাফশিকান (মৃত্যু ১৬৬৪খ্রি) এবং নূরুল্লাহ খান (১৬৯৬ খ্রি যশোরে আসেন) এখানে তাঁদের প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে সময়ে এ অঞ্চল প্রসিদ্ধি অর্জন করে। তাঁরাই মির্জানগরের নওয়াববাড়ি কমপ্লেক্স এবং কিল্লাবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন।
ধ্বংসপ্রায় মসজিদের চারটি দেয়ালের বর্হিভাগ ভেঙ্গে পড়েছে। চারটি অষ্টভুজাকৃতি পার্শ্ববুরুজ বর্তমানে অদৃশ্য এবং এর কাঠামোও ভেঙ্গে পড়েছে। তথাপিও যতটুকু টিকে আছে তার ভিত্তিতে এর মূল আকৃতি ও ডিজাইন পুনঃনির্মান করা সম্ভব। ইমারতটি পরিকল্পনায় আয়তাকার। অভ্যন্তর ভাগ দুটি পার্শ্বস্থ খিলান দ্বারা তিনটি বর্গাকার ‘বে’-তে বিভক্ত, যার অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে। পার্শ্বস্থ খিলান ও দেয়ালের উপর প্রতিষ্ঠিত তিনটি গম্বুজ মসজিদটিকে আবৃত করে আছে। গম্বুজের উত্তরণস্থল সুলতানি বাংলার পেন্ডেন্টিভ দ্বারা উত্থিত। কোণাকুণি এবং পাশবরাবর ইটের সারির স্তর উত্তরের ‘বে’-র উপরের কোণে এখনও দেখা যায়।
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালের প্রধান প্রবেশদ্বার পার্শ্বস্থগুলি থেকে বড়। কিবলা দেয়াল অর্ধ-অষ্টকোণাকার তিনটি মিহরাব দ্বারা সজ্জিত, যার কেন্দ্রীয়টি বড় এবং পেছনের দিকে প্রক্ষিপ্ত ফ্রেম দ্বারা আবদ্ধ। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। মসজিদটি আদিতে মসৃণ প্লাস্টার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, যা এখনও ভেঙ্গে পড়া চার দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
জে. ওয়েস্টল্যান্ড সর্বপ্রথম মির্জানগরের ধ্বংসাবশেষ সম্বন্ধে লেখেন এবং ইমারতটিকে নওয়াব ও ফৌজদারদের বাসভবন হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর অনুসরণে এ. এইচ দানী এবং অন্যান্যরা এটাকে সাধারণ বাসভবন হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু এর অভ্যন্তরে তিনটি মিহরাবের অস্তিত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এটি একটি মসজিদ এবং এখনও পর্যন্ত সি.আই শিটের চারচালা ছাদ দ্বারা আবৃত করে মসজিদ হিসেবেই ব্যবহূত হচ্ছে। [এম.এ বারি]