মিরসরাই উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''মিরসরাই উপজেলা''' ([[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম জেলা]])  আয়তন: ৪৮২.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে সীতাকুন্ড উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা।
'''মিরসরাই উপজেলা''' ([[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম জেলা]])  আয়তন: ৪৮২.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে সীতাকুন্ড উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা।


''জনসংখ্যা'' ৩৬৮৯৫০; পুরুষ ১৮৩৩৫৮, মহিলা ১৮৫৫৯২। মুসলিম ৩১৩৯৭৫, হিন্দু ৪৮৭৮৩, বৌদ্ধ ৩২৩, খ্রিস্টান ৫১৮৪ এবং অন্যান্য ৬৮৫।
''জনসংখ্যা'' ৩৯৮৭১৬; পুরুষ ১৮৭৩২৩, মহিলা ২১১৩৯৩। মুসলিম ৩৪৩৩৭৪, হিন্দু ৪৯২৬৬, বৌদ্ধ ৪৮৫২, খ্রিস্টান ৭০ এবং অন্যান্য ১১৫৪।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: ফেনী। সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং ইছাখালী, মহামায়া, ডোমখালি, হিঙ্গুলী ও মায়ানী খাল উল্লেখযোগ্য।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: ফেনী। সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং ইছাখালী, মহামায়া, ডোমখালি, হিঙ্গুলী ও মায়ানী খাল উল্লেখযোগ্য।
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম  || শহর  || গ্রাম
| শহর  || গ্রাম  || শহর  || গ্রাম
|-
|-
| ২ || ১৬  || ১১৩ || ২০৯ || ২২৯৮৬ || ৩৪৫৯৬৪ || ৭৬৪  || ৫১.৭  || ৫২.
| ২ || ১৬ || ১০৯ || ২১৮ || ৩১২০৬ || ৩৬৭৫১০ || ৮২৬ || ৫১.৭ (২০০১) || ৫৪.৯
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
| colspan="9" | বারইয়ার পৌরসভা
|-
| আয়তন (বর্গ কিমি) || ওয়ার্ড || মহল্লা || লোকসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%)
|-
| - || ৯ || ১৪ || ১১৬০২ || - || ৫৫.৭
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
| colspan="9" | মিরসরাই পৌরসভা
|-
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
| - || ৯ || ২৭ || ১৬২১৮ || - || ৬০.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২৪ নং লাইন: ৪০ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| ১.৭৩ || ২  || ১২৮৬৭  || ৭৪৩৮ || ৪৯.৭
| ১.৭৩ (২০০১) || || ৩৩৮৬ || ৭৪৩৮ (২০০১) || ৪৪.৭
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
৩৪ নং লাইন: ৫০ নং লাইন:
| পুরুষ  || মহিলা
| পুরুষ  || মহিলা
|-  
|-  
| ইছাখালী ২৯ || ১১৩৪১  || ১২৩১৩ || ১৩২৩৮  || ৫০.৯২
| ইছাখালী ২৯ || ১৫৭৫৪ || ১২৭৯২ || ১৫১৮৮ || ৪৭.
 
|-
|-
| ওয়াহেদপুর ৮৯ || ৪৬৮২ || ১১৯৬৯ || ১২৪৯৪  || ৫৬.০৪
| ওয়াহেদপুর ৮৯ || ৪৬৮২ || ৬৬৪৫ || ৮০০০ড় || ৬০.
 
|-
|-
| ওসমানপুর ৭৭ || ৩৩২৬  || ৬৪৭৮ || ৬৯৬৫  || ৫৪.৮০
| ওসমানপুর ৭৭ || ৫০৩৪ || ১১৮৫০ || ১৩১৩১ || ৫৮.
 
|-
|-
| করেরহাট ৩৫ || ৩৬৫৮২  || ১৫৩৪৯ || ১৪৬২৮  || ৪২.৭০
| করেরহাট ৩৫ || ৩৯১৪৪ || ১৭১৭৩ || ১৮২৯৪ || ৪৬.
 
|-
|-
| কাটাছড়া ৪১ || ৩৪৪৬ || ১০৫৮২ || ১১৬০০  || ৫৭.৬৩
| কাটাছড়া ৪১ || ৩৪৪৬ || ১০৭৩০ || ১২৮৬৬ || ৫৬.
 
|-
|-
| খৈয়াছড়া ৪৭ || ১৪৮৩ || ১১৮৪৯ || ১২০৫২  || ৪৮.৪১
| খৈয়াছড়া ৪৭ || ১৪৮৩ || ১১০৮১ || ১২৩৪২ || ৪৯.
 
|-
|-
| জোরারগঞ্জ ৯৫ || ৫৫১৭ || ১৬৩০২ || ১৫৭৩৪  || ৪৫.৭৪
| জোরারগঞ্জ ৯৫ || ৫৫১৭ || ১৭৮২৯ || ১৮৩৫৩ || ৬১.
 
|-
|-
| দূর্গাপুর ১১ || ৩৭৪২ || ৯৯৫০ || ৯৮৫২  || ৫৪.৭০
| দূর্গাপুর ১১ || ৩৭৪২ || ১০০৭৭ || ১১০৫১ || ৫৮.
 
|-
|-
| ধুম ১০ || ৩৩১০  || ৭৬১৯ || ৮০৭৯  || ৫৩.৮০
| ধুম ১০ || ৫৫৮৭ || ৭৭০৬ || ৯০৬৪ || ৬০.
 
|-
|-
| মঘদিয়া ৭১ || ৩৬৭৭  || ১০৮৮৩ || ১১৬৪৯  || ৪৮.১৬
| মঘদিয়া ৭১ || ২৬২৬ || ১০৭৬১ || ১২৬৪৫ || ৫০.
 
|-
|-
| মায়ানী ৫৩ || ৪৫৯০ || ৮৬৪২ || ৯০৬৪  || ৫৩.৫৯
| মায়ানী ৫৩ || ৪৫৯০ || ৮৫১১ || ৯৭৭৪ || ৫৯.
 
|-
|-
| মিঠানালা ৬৫ || ৫৩৩৮ || ১১৪০২ || ১২১৪৪  || ৫৭.৭২
| মিঠানালা ৬৫ || ৫৩৩৮ || ১০৩৯৫ || ১২৭১৪ || ৫৫.
 
|-
|-
| মিরসরাই ৫৯ || ৪৩৬০  || ১৩৯৮৫ || ১৩২৯৯  || ৪৯.৭৪
| মিরসরাই ৫৯ || ২৮১৬ || ৭৯৫৩ || ৮৮৭৫ || ৫৪.
 
|-
|-
| সাহেরখালী ৮৩ || ৫৩৩৫  || ৭৭৬৯ || ৮৪৬২  || ৫৩.২৫
| সাহেরখালী ৮৩ || ৮৬০৯ || ৭৫৭৬ || ৯৩৩৬ || ৫৪.
 
|-
|-
| হাইতকান্দি ১৭ || ৩২৭১ || ৯৪০০ || ৯৫৭২  || ৫৫.০৩
| হাইতকান্দি ১৭ || ৩২৭১ || ৮৭৩৯ || ১০৩১২ || ৫৭.
 
|-
|-
| হিঙ্গুলী ২৩ || ৪৫৬২ || ১২৯১০ || ১২৫৯৭  || ৫৫.৪৮
| হিঙ্গুলী ২৩ || ৪৫৬২ || ১৩৮২৭ || ১৫৩০৬ || ৫২.
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:MirsaraiUpazila.jpg|thumb|right|400px]]
[[Image:MirsaraiUpazila.jpg|thumb|right|400px]]
''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ'' ধুমের শিলা পাথর (শান্তিরহাট), ছুটি খাঁ মসজিদ, পরাগল খাঁ দিঘি, নয়দুয়ারী মসজিদ, জগন্নাথ ধাম (আবু তোরাব), কালীমন্দির (করেরহাট), শান্তিনিকেতন বিহার, অভয়শরণ বিহার।
''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ'' ধুমের শিলা পাথর (শান্তিরহাট), ছুটি খাঁ মসজিদ, পরাগল খাঁ দিঘি, নয়দুয়ারী মসজিদ, জগন্নাথ ধাম (আবু তোরাব), কালীমন্দির (করেরহাট), শান্তিনিকেতন বিহার, অভয়শরণ বিহার।


''ঐতিহাসিক ঘটনাবলি''  ১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গৌড় সুলতান হোসেন শাহ ও নুসরাত শাহের আমলে পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। এর পরে দিল্লীর সম্রাট শেরশাহের ভাই নিজাম শাহ এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে নিজামপুর পরগণার নামকরণ হয় এবং সমগ্র মিরসরাই এলাকা নিজামপুর পরগণার অন্তর্ভুক্ত হয়। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে এই অঞ্চল বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৫৮০ থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ সময় এই অঞ্চল আরাকানীদের শাসনে ছিল। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁ ফেনী নদী পার হয়ে বর্তমান মিরসরাই থানার যে স্থানে সৈন্যদল নিয়ে অবতরণ করেন, সে স্থানের নামকরণ হয় বুজুর্গ উমেদনগর। তাঁর চট্টগ্রাম বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল স্থায়ীভাবে মুগলদের শাসনে চলে যায়। ইংরেজ শাসনামলের শেষদিকে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মিরসরাই উপজেলার দূর্গাপুর ও করেরহাট এলাকা। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মিরসরাই সদরের দক্ষিণে ফেনাফুনি ব্রিজের পাশে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচন্ড লড়াই হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১০০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও শুভপুর সেতু, হিঙ্গুলী সেতু, অছি মিয়ার সেতু ও মস্তাননগরসহ গোটা এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়।
''ঐতিহাসিক ঘটনা'' ১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্রগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গৌড় সুলতান হোসেন শাহ ও নুসরাত শাহের আমলে পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। এর পরে দিল্লীর সম্রাট শেরশাহের ভাই নিজাম শাহ এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে নিজামপুর পরগণার নামকরণ হয় এবং সমগ্র মিরসরাই এলাকা নিজামপুর পরগণার অন্তর্ভুক্ত হয়। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে এই অঞ্চল বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৫৮০ সাল থেকে ১৬৬৬ পর্যন্ত অধিকাংশ সময় এই অঞ্চল আরাকানীদের শাসনে ছিল। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁ ফেনী নদী পার হয়ে বর্তমান মিরসরাই থানার যে স্থানে সৈন্যদল নিয়ে অবতরণ করেন, সে স্থানের নামকরণ হয় বুজুর্গ উমেদনগর। তাঁর চট্টগ্রাম বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল স্থায়িভাবে মুগলদের শাসনে চলে যায়। ইংরেজ শাসনামলের শেষদিকে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ও করেরহাট এলাকা।  
 
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মিরসরাই সদরের দক্ষিণে ফেনাফুনি ব্রিজের পাশে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচ- যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১০০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও শুভপুর সেতু, হিঙ্গুলী সেতু, অছি মিয়ার সেতু ও মস্তাননগরসহ গোটা এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলার ৫টি স্থানে (মিরসরাই ওয়ারলেস, তালবাড়ীয়া, লোহারপুল, মস্তান নগর হাসপাতাল ও ঝুলন্ত ব্রিজ) বধ্যভূমি ও ১টি স্থানে (করেরহাট বাজার) গণকবর রয়েছে। হিজুলী ব্রিজ এলাকায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৫ (মিরসরাই ওয়ারলেস, তালবাড়ীয়া, লোহারপুল, মস্তাননগর হাসপাতাল ও ঝুলন্ত ব্রিজ); গণকবর ১ (করেরহাট বাজার); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (হিজুলী ব্রিজ)।
''বিস্তারিত দেখুন'' মিরসরাই উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।


''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান''  মসজিদ ৬৪০, মন্দির ১৩৭, মাযার ৫০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ছুটি খাঁ মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), দৌলত বিবির মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), মাহাদিয়া মসজিদ (১৭৮০), নয় দুয়ারী মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী), হামিদুল্লাহ খান মসজিদ (ঊনবিংশ শতাব্দী), শাহ জায়েদের (র.) মাযার (৮০৬ হিজরি), আওয়াল কাজী মোয়াক্কেলের (র.) মাযার, হযরত শাহ বদলের (র.) মাযার, হযরত চিনকী মোন্তানের (র.) মাযার, হযরত মিয়া নূর আলী শাহের (র.) মাযার, সুফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর (র.) মাযার, হযরত মীর গফফর খানের মাযার, জগন্নাথ মন্দির (আবু তোরাব বাজার), কালীমন্দির (করেরহাট), হাজীশ্বরাই মন্দির, নেওয়ানপুর মন্দির, বারুণী মেলা (ধুমঘাট)।
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান''  মসজিদ ৬৪০, মন্দির ১৩৭, মাযার ৫০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ছুটি খাঁ মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), দৌলত বিবির মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), মাহাদিয়া মসজিদ (১৭৮০), নয় দুয়ারী মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী), হামিদুল্লাহ খান মসজিদ (ঊনবিংশ শতাব্দী), শাহ জায়েদের (র.) মাযার (৮০৬ হিজরি), আওয়াল কাজী মোয়াক্কেলের (র.) মাযার, হযরত শাহ বদলের (র.) মাযার, হযরত চিনকী মোন্তানের (র.) মাযার, হযরত মিয়া নূর আলী শাহের (র.) মাযার, সুফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর (র.) মাযার, হযরত মীর গফফর খানের মাযার, জগন্নাথ মন্দির (আবু তোরাব বাজার), কালীমন্দির (করেরহাট), হাজীশ্বরাই মন্দির, নেওয়ানপুর মন্দির, বারুণী মেলা (ধুমঘাট)।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৫২.%; পুরুষ ৫৬.%, মহিলা ৪৭.%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নিজামপুর কলেজ (১৯৬৪), মিরসরাই কলেজ (১৯৭৩), বারইয়াহাট কলেজ (১৯৭৪), টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯৮০), দূর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), জোরারগঞ্জ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সরকার হাট এন আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), মিরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিরসরাই লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৮৪), সুফিয়া নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৪), মির্জাবাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯১০)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৫৫.%; পুরুষ ৫৭.%, মহিলা ৫৩.%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নিজামপুর কলেজ (১৯৬৪), মিরসরাই কলেজ (১৯৭৩), বারইয়াহাট কলেজ (১৯৭৪), টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯৮০), দূর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), জোরারগঞ্জ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সরকার হাট এন আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), মিরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিরসরাই লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৮৪), সুফিয়া নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৪), মির্জাবাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯১০)।


''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী'' মাসিক: মিরসরাই, যোগাযোগ; পাক্ষিক: খবরিকা, মিরসরাই চিত্র, মিরসরাই কণ্ঠ, আলোকিত ক্যাম্পাস (অনিয়মিত); অবলুপ্ত: মিরসরাই বার্তা, মিরসরাই দর্পণ।
''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী'' মাসিক: মিরসরাই, যোগাযোগ; পাক্ষিক: খবরিকা, মিরসরাই চিত্র, মিরসরাই কণ্ঠ, আলোকিত ক্যাম্পাস (অনিয়মিত); অবলুপ্ত: মিরসরাই বার্তা, মিরসরাই দর্পণ।
১১২ নং লাইন: ১১৫ নং লাইন:
''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' মৎস্য ২২৬, গবাদিপশু ২৯, হাঁস-মুরগি ৫৭৬, হ্যাচারি ২।
''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' মৎস্য ২২৬, গবাদিপশু ২৯, হাঁস-মুরগি ৫৭৬, হ্যাচারি ২।


''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা ২৩০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৪৩৫ কিমি; রেলপথ ১৬ কিমি; নৌপথ ১১ নটিক্যাল মাইল; রেলস্টেশন ৪।
''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা ২৬০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৪৮৪ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি; নৌপথ ৫৩ কিমি; রেলস্টেশন ৪।


''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পাল্কি, গরুর গাড়ি।
''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পাল্কি, গরুর গাড়ি।
১২৪ নং লাইন: ১২৭ নং লাইন:
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  বাঁশ, মাছ, ধান, আলু, কলা, শাকসবজি।
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  বাঁশ, মাছ, ধান, আলু, কলা, শাকসবজি।


''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৪.৭০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৬.% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।


''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৯২.০৪%, ট্যাপ .৬৭%, পুকুর ৩.২৪% এবং অন্যান্য ৪.০৪%। এ উপজেলার ৩৯% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৯৩.%, ট্যাপ .% এবং অন্যান্য ৪.%। এ উপজেলার ৩৯% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।


''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ৫৬.৯৮% (শহরে ৭১.৭৩% এবং গ্রামে ৫৬.০৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৩০% (শহরে ২১.১১% এবং গ্রামে ৩৫.১৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে .৭৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ৭৬.% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে .% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।


''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১১।
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র'' উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১১।
১৩৪ নং লাইন: ১৩৭ নং লাইন:
''এনজিও'' প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, সেবা, কেয়ার, হাংগার প্রজেক্ট।  [আহমদ মমতাজ]
''এনজিও'' প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, সেবা, কেয়ার, হাংগার প্রজেক্ট।  [আহমদ মমতাজ]


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিরসরাই সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিরসরাই সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Mirsharai Upazila]]
[[en:Mirsharai Upazila]]

১৭:১৪, ৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মিরসরাই উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ৪৮২.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে সীতাকুন্ড উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৯৮৭১৬; পুরুষ ১৮৭৩২৩, মহিলা ২১১৩৯৩। মুসলিম ৩৪৩৩৭৪, হিন্দু ৪৯২৬৬, বৌদ্ধ ৪৮৫২, খ্রিস্টান ৭০ এবং অন্যান্য ১১৫৪।

জলাশয় প্রধান নদী: ফেনী। সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং ইছাখালী, মহামায়া, ডোমখালি, হিঙ্গুলী ও মায়ানী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মিরসরাই থানা গঠিত হয় ১৯০১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৬ ১০৯ ২১৮ ৩১২০৬ ৩৬৭৫১০ ৮২৬ ৫১.৭ (২০০১) ৫৪.৯
বারইয়ার পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১৪ ১১৬০২ - ৫৫.৭
মিরসরাই পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ২৭ ১৬২১৮ - ৬০.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৭৩ (২০০১) ৩৩৮৬ ৭৪৩৮ (২০০১) ৪৪.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইছাখালী ২৯ ১৫৭৫৪ ১২৭৯২ ১৫১৮৮ ৪৭.৭
ওয়াহেদপুর ৮৯ ৪৬৮২ ৬৬৪৫ ৮০০০ড় ৬০.০
ওসমানপুর ৭৭ ৫০৩৪ ১১৮৫০ ১৩১৩১ ৫৮.৪
করেরহাট ৩৫ ৩৯১৪৪ ১৭১৭৩ ১৮২৯৪ ৪৬.৮
কাটাছড়া ৪১ ৩৪৪৬ ১০৭৩০ ১২৮৬৬ ৫৬.৫
খৈয়াছড়া ৪৭ ১৪৮৩ ১১০৮১ ১২৩৪২ ৪৯.৪
জোরারগঞ্জ ৯৫ ৫৫১৭ ১৭৮২৯ ১৮৩৫৩ ৬১.৪
দূর্গাপুর ১১ ৩৭৪২ ১০০৭৭ ১১০৫১ ৫৮.৯
ধুম ১০ ৫৫৮৭ ৭৭০৬ ৯০৬৪ ৬০.৪
মঘদিয়া ৭১ ২৬২৬ ১০৭৬১ ১২৬৪৫ ৫০.৭
মায়ানী ৫৩ ৪৫৯০ ৮৫১১ ৯৭৭৪ ৫৯.৬
মিঠানালা ৬৫ ৫৩৩৮ ১০৩৯৫ ১২৭১৪ ৫৫.৬
মিরসরাই ৫৯ ২৮১৬ ৭৯৫৩ ৮৮৭৫ ৫৪.৪
সাহেরখালী ৮৩ ৮৬০৯ ৭৫৭৬ ৯৩৩৬ ৫৪.৩
হাইতকান্দি ১৭ ৩২৭১ ৮৭৩৯ ১০৩১২ ৫৭.১
হিঙ্গুলী ২৩ ৪৫৬২ ১৩৮২৭ ১৫৩০৬ ৫২.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ধুমের শিলা পাথর (শান্তিরহাট), ছুটি খাঁ মসজিদ, পরাগল খাঁ দিঘি, নয়দুয়ারী মসজিদ, জগন্নাথ ধাম (আবু তোরাব), কালীমন্দির (করেরহাট), শান্তিনিকেতন বিহার, অভয়শরণ বিহার।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্রগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গৌড় সুলতান হোসেন শাহ ও নুসরাত শাহের আমলে পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। এর পরে দিল্লীর সম্রাট শেরশাহের ভাই নিজাম শাহ এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে নিজামপুর পরগণার নামকরণ হয় এবং সমগ্র মিরসরাই এলাকা নিজামপুর পরগণার অন্তর্ভুক্ত হয়। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে এই অঞ্চল বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৫৮০ সাল থেকে ১৬৬৬ পর্যন্ত অধিকাংশ সময় এই অঞ্চল আরাকানীদের শাসনে ছিল। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁ ফেনী নদী পার হয়ে বর্তমান মিরসরাই থানার যে স্থানে সৈন্যদল নিয়ে অবতরণ করেন, সে স্থানের নামকরণ হয় বুজুর্গ উমেদনগর। তাঁর চট্টগ্রাম বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল স্থায়িভাবে মুগলদের শাসনে চলে যায়। ইংরেজ শাসনামলের শেষদিকে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ও করেরহাট এলাকা।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মিরসরাই সদরের দক্ষিণে ফেনাফুনি ব্রিজের পাশে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচ- যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১০০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও শুভপুর সেতু, হিঙ্গুলী সেতু, অছি মিয়ার সেতু ও মস্তাননগরসহ গোটা এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলার ৫টি স্থানে (মিরসরাই ওয়ারলেস, তালবাড়ীয়া, লোহারপুল, মস্তান নগর হাসপাতাল ও ঝুলন্ত ব্রিজ) বধ্যভূমি ও ১টি স্থানে (করেরহাট বাজার) গণকবর রয়েছে। হিজুলী ব্রিজ এলাকায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মিরসরাই উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬৪০, মন্দির ১৩৭, মাযার ৫০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ছুটি খাঁ মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), দৌলত বিবির মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), মাহাদিয়া মসজিদ (১৭৮০), নয় দুয়ারী মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী), হামিদুল্লাহ খান মসজিদ (ঊনবিংশ শতাব্দী), শাহ জায়েদের (র.) মাযার (৮০৬ হিজরি), আওয়াল কাজী মোয়াক্কেলের (র.) মাযার, হযরত শাহ বদলের (র.) মাযার, হযরত চিনকী মোন্তানের (র.) মাযার, হযরত মিয়া নূর আলী শাহের (র.) মাযার, সুফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর (র.) মাযার, হযরত মীর গফফর খানের মাযার, জগন্নাথ মন্দির (আবু তোরাব বাজার), কালীমন্দির (করেরহাট), হাজীশ্বরাই মন্দির, নেওয়ানপুর মন্দির, বারুণী মেলা (ধুমঘাট)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.১%; পুরুষ ৫৭.১%, মহিলা ৫৩.৩%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নিজামপুর কলেজ (১৯৬৪), মিরসরাই কলেজ (১৯৭৩), বারইয়াহাট কলেজ (১৯৭৪), টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯৮০), দূর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), জোরারগঞ্জ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সরকার হাট এন আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), মিরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিরসরাই লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৮৪), সুফিয়া নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৪), মির্জাবাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯১০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: মিরসরাই, যোগাযোগ; পাক্ষিক: খবরিকা, মিরসরাই চিত্র, মিরসরাই কণ্ঠ, আলোকিত ক্যাম্পাস (অনিয়মিত); অবলুপ্ত: মিরসরাই বার্তা, মিরসরাই দর্পণ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাব ১, লাইব্রেরি ২, নাট্যদল ২, সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩, ক্লাব ৬৩, খেলার মাঠ ৭০, স্টেডিয়াম ১।

বিনোদন কেন্দ্র মহুরী প্রজেক্ট, করেরহাট ফরেস্ট রেঞ্জ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৯৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬১%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ১৩.২৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৩%, চাকরি ১৮.০০%, নির্মাণ ১.১৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮.৮৪% এবং অন্যান্য ১২.৩৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৩০%, ভূমিহীন ৪৮.৭০%। শহরে ৩৮.৮২% এবং গ্রামে ৫২.০৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, আলু, বেগুন, শাকসবজি, বাঁশ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, পাট, অড়হর, সরিষা,তিল, তিসি, চীনাবাদাম।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, আনারস, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২২৬, গবাদিপশু ২৯, হাঁস-মুরগি ৫৭৬, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৬০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৪৮৪ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি; নৌপথ ৫৩ কিমি; রেলস্টেশন ৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা কার্পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাইপ মিল, বরফকল, চালকল, বেকারি, ইটভাটা, স্টীল ফার্নিচার, মৎস্য-পোল্ট্রি খাদ্য কারখানা, বিড়ি কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, সেলাই কাজ, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫২, মেলা ৫। আবু তোরাব বাজার, কমর আলী বাজার, মহাজনহাট, বড় দারোগা হাট, করেরহাট, বারইয়া হাট, শান্তিরহাট এবং জোরারগঞ্জ বৈশাখী মেলা, বারুণী স্নান মেলা ও স্বাধীনতা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  বাঁশ, মাছ, ধান, আলু, কলা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৬.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৯%, ট্যাপ ১.৬% এবং অন্যান্য ৪.৫%। এ উপজেলার ৩৯% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১১।

এনজিও প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, সেবা, কেয়ার, হাংগার প্রজেক্ট।  [আহমদ মমতাজ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিরসরাই সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।