মিরপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া)

মিরপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া জেলা)  আয়তন: ৩০৫.০৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৫´ থেকে ২৪°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫০´ থেকে ৮৯°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলা, দক্ষিণে আলমডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, পূর্বে কুষ্টিয়া সদর, পশ্চিমে দৌলতপুর (কুষ্টিয়া), গাঙ্গনী ও আলমডাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৩০১১৫; পুরুষ ১৬৫৫২৯, মহিলা ১৬৪৫৮৬। মুসলিম ৩২২৮৪৫, হিন্দু ৭২৪৩, খ্রিস্টান ৭, বৌদ্ধ ৪ এবং অন্যান্য ১৬।

জলাশয় পদ্মা, কুমার ও গড়াই নদী এবং সাগরখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মিরপুর থানা গঠিত হয় ১৮৮৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১ আগস্ট ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১১৩ ১৮৯ ৩২৮০২ ২৯৭৩১৩ ১০৮২ ৪৮.৫ (২০০১) ৪০.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.৮১ (২০০১) ১৫ ২২৪১৭ ২১৩৮ (২০০১) ৫৬.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৫৪ (২০০১) ১০৩৮৫ ২৪২১ (২০০১) ৫৯.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমবাড়ীয়া ১৩ ৪৮৫৬ ৮৪৪৩ ৮৭৯১ ৪১.৪
আমলা ১৪ ৬৭৩৬ ১৩৯৫৮ ১৩৯২১ ৪৩.৭
কুরশা ৫৮ ৫৬৬১ ১০৯৯৯ ১১৩৮৫ ৩৪.৮
চিথুলিয়া ৪৩ ২৩৩০ ১৫৬৩২ ১৫৫২৩ ৩৯.০
ছাতিয়ান ৩৬ ৬২৯২ ১৩৪৬২ ১৩২৮৬ ৩৭.১
তালবাড়িয়া ৯৪ ৫৪৪৭ ১০৪৭২ ৯৮৫৬ ৩৯.০
পোড়াদহ ৮০ ৬৯৭৩ ১৯৫০৬ ১৯৭১৬ ৪৭.২
ফুলবাড়ীয়া ৭৩ ২৮৮৮ ৭০৮৬ ৬৮৮৬ ৩৯.৩
বহালবাড়িয়া ২১ ৪৮২১ ১৩০৬১ ১২৯৭১ ৪৫.৯
বারুইপাড়া ২৯ ৭৭১৮ ১৪১৫৬ ১৩৯৪৮ ৪৬.১
মালিহাদ ৬৫ ৭৫১৮ ১২৮৪৭ ১২৮২৮ ৩১.০
সরদারপুর ৮৭ ৭৪০৬ ১৪৪৩৭ ১৪৫২৮ ৩৯.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৭৭৪ সালে ডুই বান্নো নামক এক ফরাসী বাংলাদেশে প্রথম নীলচাষ শুরু করার পরের বছর ক্যারল ব্লুম নামীয় একজন ইংরেজ প্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন। ১৮৬০ সালের প্রথম দিকে প্যারী সুন্দরের নেতৃত্বে নীলচাষীরা আমলা কুঠিতে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়া জেলা তিন দিন পূর্ণ হরতাল পালন করে। মহম্মদ অবদুল হক ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আয়ুব খানের বিরুদ্ধে একটি শাসনান্ত্রিক মামলা দায়ের করে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবদুর রাজ্জাক নামক একজন যুবক প্রাণ হারান।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যশোর ক্যান্টেনমেন্ট থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের ১৪৭ জন সৈন্য কুষ্টিয়াতে এসে পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল, থানা, অয়ারলেস অফিস ও টেলিগ্রাফ অফিসে অবস্থান গ্রহণ করে। কুষ্টিয়ার জনসাধারণ ঐ রাত্রেই শহরে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সকালে পাকসেনারা সমস্ত শহরে কারফিউ জারী করে। পরদিন তারা শহরে নানাস্থানে গুলি করে ৭ জন লোককে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শেরপুর যুদ্ধ, কামারপাড়া যুদ্ধ কাকিলাদহ যুদ্ধ, হাসলা যুদ্ধ এবং শুকচা যুদ্ধ।

বিস্তারিত দেখুন মিরপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৮০, মন্দির ১৮, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: আল মোশাররফ জামে মসজিদ, বহুবাড়ীয়া পুরাতন জামে মসজিদ, খাদিমপুর বাজার মসজিদ এবং পোড়াদহের বাবুপাড়া সিংহবাবুদের মন্দির, সদরপুর মন্দির, মিরপুর পৌর মন্দির ও আবদুর রহমানের মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৯%; পুরুষ ৪২.৬%, মহিলা ৪১.২%। কলেজ ১২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪, স্যাটেলাইট স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৯, মক্তব ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৬), মিরপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৯), আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৯), মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), পোড়াদহ হাইস্কুল (১৯২৭), মিরপুর সরকারি পাইলট বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: অরুণোদয়; সাময়িকী: প্রতিধ্বনি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, মহিলা সংগঠন ৭, সিনেমা হল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৫৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯০%, শিল্প ১.০৮%, ব্যবসা ১৩.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৪.৭৫%, নির্মাণ ১.২৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৬% এবং অন্যান্য ৬.৩৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.৭৬%, ভূমিহীন ৪৬.২৪%। শহরে ৩৮.৬২% এবং গ্রামে ৫৫.৩৪% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, আলু, তামাক, সরিষা, পান, সূর্যমুখী ফুল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কলা, কাঁঠাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৫, গবাদিপশু ৯, হাঁস-মুরগি ৫, হ্যাচারি ৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৭৭ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ৪৯ কিমি; কাঁচারাস্তা ৬০৬ কিমি; রেলওয়ে ১৮ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, কটন মিল, সুগারমিল, বিড়ি কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৩। মিরপুর পশুর হাট, খাদিমপুর হাট ও পোড়াদহ কাপড়ের হাট এবং হাজারহাটি গ্রামের বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তামাক, পাট, পান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৬১.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.০%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৭.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৬.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ১৩, পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র ১০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮২৩, ১৮৩৭, ১৮৫৯, ১৮৬৪, ১৮৬৭, ১৮৭১, ১৮৮৭, ১৯০০, ১৯৩০, ১৯৩৮, ১৯৪৮, ১৯৫৪, ১৯৬১ ও ১৯৭১ সালের বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও সাইক্লোনে এ উপজেলার বহু লোকের প্রাণহানী ঘটে এবং ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, বিআরডিবি, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, সেতু, জাগরণ।  [আরিফ নিশির]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।