মিঠাপুকুর উপজেলা

মিঠাপুকুর উপজেলা (রংপুর জেলা)  আয়তন: ৫১৫.৬২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°২৬´ থেকে ২৫°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৬´ থেকে ৮৯°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রংপুর সদর ও পীরগাছা উপজেলা, দক্ষিণে পীরগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর উপজেলা, পূর্বে পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে বদরগঞ্জ উপজেলা ও নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৪৯৬১২; পুরুষ ২৩০২০৭, মহিলা ২১৯৪০৫। মুসলিম ৪০৯৩৬২, হিন্দু ৩৩৬১১, বৌদ্ধ ১৬৭১, খ্রিস্টান ১৪৫৬ এবং অন্যান্য ৩৫১২।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনেশ্বরী, ঘাঘট।

প্রশাসন মিঠাপুকুর থানা গঠিত হয় ১৮৮৫ সালে এবং ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৭ ৩১০ ৩১৪ ১১৬৩৫ ৪৩৭৯৭৭ ৮৭২ ৫৮.৪০ ৪১.২৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৩৬ ১১৬৩৫ ১৮২৯ ৫৮.৪০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইমাদপুর ৪৪ ৯৭০৫ ১৮৩৫৫ ১৭০৮৮ ৩৪.৯৩
কাফ্রিখাল ৫৫ ৮৯২৬ ১৮৫৬৩ ১৭৭৫১ ৩৯.০৮
খোড়াগাছ ৬১ ৮১৩৮ ১২৮৯৮ ১২৬২২ ৩৫.১৪
গোপালপুর ৫০ ৬৯৭৪ ৯৭৭০ ৯৬৫০ ৪২.১৫
চেংমারী ৩৩ ৭৬৬৭ ১২৫১২ ১২৪১৭ ৩৯.৬৬
দুর্গাপুর ৩৯ ৯১৯৯ ২২৬৪২ ২১০৪৯ ৪৯.৩১
পায়রাবন্দ ৮৯ ৬৮২৬ ১৩৮১০ ১৩১৪৭ ৪০.৭৩
বড় হযরতপুর ১৬ ৮২২১ ১৫০৬০ ১৩৯০২ ৪৫.২৭
বড়বালা ১১ ৫৯০৯ ৯৪১৬ ৯১৭৫ ৪১.৪৯
বালারহাট ২২ ৫৭৫৪ ১০৯৪৮ ১০৮১৪ ৪৪.৬১
বালুয়া মাসিমপুর ১০ ৭৫৯৯ ৯৬৮৮ ৯৪৪৯ ৪২.৩৬
ভাঙ্গনী ২৭ ৬৩৬৫ ১২৬৪২ ১১৯৪৯ ৩৯.৬৫
ময়েনপুর ৮৩ ৭৬৭৭ ১২১০৯ ১১৭১৭ ৩৬.২৮
মিলনপুর ৭২ ৬২৮৩ ৯৪৬২ ৯০০৮ ৪৩.০৬
মির্জাপুর ৭৮ ৭৫১৩ ১৩৭৭১ ১২৭৯৬ ৪২.২৪
রাণীপুকুর ৯৪ ৭০৭১ ১২৬৪৪ ১১৯১২ ৪২.৪৫
লতিফপুর ৬৭ ৭৫৮৭ ১৫৯১৭ ১৪৯৫৯ ৪৭.২৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বেগম রোকেয়ার বাড়ি (পায়রাবন্দ), মুগল আমলে নির্মিত লতিফপুর ইউনিয়নের ত্নকা মসজিদ, মিঠাপুকুর গ্রামের তিন গম্বুজ জামে মসজিদ, বৈরাগীগঞ্জ গাজী পীরের মাযার মসজিদ, ভাঙ্গনী গ্রামের তিনগম্বুজ মসজিদ, ধাপ উদয়পুরের রাজা ভবচন্দ্রের বাড়ি ও বাগদেবীর (ধ্বংসপ্রায়) মন্দির, বেনুবন বৌদ্ধ বিহার, আলাদিপুর গ্রামের প্রাচীন মন্দির, ফুলচৌকির জমিদার বাড়ি, বলদীপুকুর মিশন ও গির্জা, মিঠাপুকুর (মুগল আমলে খননকৃত)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ইংরেজ আমলে মোগলহাট ও পাটগ্রামে প্রজা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণে উপজেলার জনগোষ্ঠী সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার পীরগঞ্জ-মিঠাপুকুর সীমান্ত ও দমদমা ব্রিজ এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর লড়াই সংঘটিত হয়। পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা ও লুটতরাজ চালায়। এর মধ্যে পায়রাবন্দ ইউনিয়নের জয়রাম আনোয়ার মৌজার গণহত্যা উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩ (বৈরাগীগঞ্জ গাজী পীরের মাযারের পূর্ব দিক, দমদমা ব্রিজের নীচে, দমদমা বাজার); বধ্যভূমি ৫ (দমদমা ব্রিজের নীচে, দমদমা বাজার, বৈরাগীগঞ্জ গাজী পীরের মাযারের সামনে, মিলনপুরের যমুনেশ্বরী নদী, ঝিনুক সিনেমা হলের পেছনে)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬৫০, মন্দির ৩২, গির্জা ২, মাযার ৪, বৌদ্ধবিহার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: লতিফপুর ইউনিয়নের ত্নকা মসজিদ, মিঠাপুকুর গ্রামের তিন গম্বুজ জামে মসজিদ, বৈরাগীগঞ্জ গাজী পীরের মাযার মসজিদ, ভাংনি গ্রামের তিনগম্বুজ মসজিদ, আলাদিপুর গ্রামের প্রাচীন মন্দির, বলদীপুকুর  গির্জা ও বেনুবন বৌদ্ধ বিহার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৭%; পুরুষ ৪৫.৪৯%, মহিলা ৩৭.৭৫%। কলেজ ১৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪৫, মাদ্রাসা ১১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মিঠাপুকুর কলেজ (১৯৭০), শঠিবাড়ী কলেজ (১৯৭০), শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৮৬, নাট্যদল ১, মিলনায়তন ১, খেলার মাঠ ১৫, সিনেমা হল ৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৪৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৪৩%, শিল্প ০.৫১%, ব্যবসা ১১.২৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৫%, চাকরি ৩.৪৮%, নির্মাণ ০.৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১১% এবং অন্যান্য ৬.৭১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.২%, ভূমিহীন ৪৬.৮%। শহরে ৫০.৪% এবং গ্রামে ৫৩.২৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৫, গবাদিপশু ৭০, হাঁস-মুরগি ১০০, নার্সারি ২২, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৯.৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৩৪০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা হাসকিং মিল ৭৫, স’মিল ২৫, অয়েলমিল ২, আইস ফ্যাক্টরি ১০, বিড়ি ফ্যক্টরি ১, ওয়েল্ডিং কারখানা ২০, ডেইরি এন্ড ফুড প্রোডাক্টস ১, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ১, কোল্ড স্টোরেজ ৪।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ৭৬, মৃৎশিল্প ৫৫, পাটশিল্প ১০, চামড়াশিল্প ১২, বাঁশের কাজ ২৩০, সেলাই কাজ ২০২।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬০, মেলা ১২। শঠিবাড়ী হাট, জায়গীরহাট, শুকুরের হাট, বৈরাতি হাট, রাণীপুকুরহাট, চৌধুরী গোপালপুর হাট, বালূয়াহাট, সেরুডাঙ্গা হাট এবং শঠিবাড়ী দুর্গাপূজার মেলা, মিঠাপুকুর বাজার পূজা মেলা, বৈরাতি বারুণী মেলা ও চৌধুরী গোপালপুর হাট বারুণী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, গম, আখের গুড়, আলু, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১১.৫৩% (গ্রামে ১০.৬৪% এবং শহরে ৪৮.৫৭%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৩১%, ট্যাপ ০.৬৫%, পুকুর ০.৩১% এবং অন্যান্য ৭.৭৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ১২.৬% (শহরে ৩৯.১৮% এবং  গ্রামে ১১.৯৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.৩৯% (শহরে ২৬.২৯% এবং গ্রামে ২৭.৪২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬০.০১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১১, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ্]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মিঠাপুকুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।