মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড  বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে ব্যাংকটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন ছিল যথাক্রমে ১,০০০ মিলিয়ন ও ২০০ মিলিয়ন টাকা। ২০১৯ সালের শেষে এর অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ১০,০০০ ও ৭,৩৮৬ মিলিয়ন টাকায়। বর্তমানে (২০২১) ব্যাংকটির মোট ১১৮টি শাখা এবং ২৩টি এসএমই সেন্টার রয়েছে। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ২,৩৬২। ব্যাংকটির নীতি-নির্ধারণী ক্ষমতা ১০ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের উপর ন্যাস্ত। ব্যবস্থাপনাপনা পরিচালক নির্বাহী প্রধান হিসেবে তিনজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিনজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীর সহায়তায় ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রমকে বহুমুখীকরণ ও ঋণের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে এসএমই-ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, জিডিপিতে বৃহৎ শিল্পের অংশগ্রহণের টেকসই বিকল্প সৃষ্টি তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে দেশের এসএমই-কে অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০০৮ সালকে এসএমই বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। সে মোতাবেক এ খাতে অর্থায়ন প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য এসএমই পণ্যগুলিকে বহুমুখীকরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে মহিলা উদ্যোক্তা ঋণ ও কৃষিভিত্তিক ঋণ।

বিশ্বের ৫৪৭টি ব্যাংকের সাথে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রয়েছে শক্তিশালী প্রতিনিধি ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। বিশ্বের ৩৭৯টি বিখ্যাত ব্যাংকের সাথে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রয়েছে সুইফ্ট রিলেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন (আরএমএ) যার মধ্যে আছে ৪২টি স্থানীয় এবং ৩১১টি বিদেশি ব্যাংক। বিশ্বের অধিকাংশ ট্রেডিং এলাকায় ব্যাংক তার আন্তর্জাতিক ট্রেড ব্যবসা পরিচালনায় সক্ষম। বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে এ ব্যাংকের ইউএস ডলার, ইউরো, জাপানি ইয়েন, এসিইউ-এ ৩২টি নস্ট্র অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব একাউন্টের মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের সুদ ও বাট্টা লাভ করে থাকে। বৈদেশিক সহযোগীদের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দক্ষতার সাথে বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে থাকে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বেশকটি এক্সচেঞ্জ হাউস নিয়ে এমটিবি রেমিট্যান্স অ্যারেঞ্জমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছে; যাতে প্রবাসী ওয়েজ আর্নারগণ দেশে সহজে টাকা পাঠাতে পারেন।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)।

বিবরণ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
অনুমোদিত মূলধন ১০০০০ ১০০০০ ১০০০০
পরিশোধিত মূলধন ৫৭৩৪ ৭০৩৫ ৭৩৮৬
রিজার্ভ ৭৬১০ ৯৬৩০ ৯৪৪০
আমানত ১৬৬১৬০ ১৯১৩৬৯ ১৯০৬০৭
ক) তলবি আমানত ১৮৩৩৭ ২০৬৮৪ ২৪৪৬১
খ) মেয়াদি আমানত ১৪৭৮২৩ ১৭০৬৮৫ ১৬৬১৪৬
ঋণ ও অগ্রিম ১৬৬১৪৫ ১৮৬৭৬৯ ২০০৯৯২
বিনিয়োগ ২৭৩৮৮ ৩৩১৯৫ ৩৫৩৮২
মোট পরিসম্পদ ২২২৪০৬ ২৫৬১৫৭ ২৬৭৯১৩
মোট আয় ২০২৬৫ ২৩৮৮১ ২১২৭৬
মোট ব্যয় ১৫৩৮১ ১৮৭৬৯ ১৭৯৫৩
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ২২৫৮৮৮ ২৩২৪৭৯ ১৯৭৮২৬
ক) রপ্তানি ৬০০৬১ ৬৪৩১৮ ৫৭৮২৮
খ) আমদানি ১১৭৯১৮ ১১৯০০২ ১০২৪০০
গ) রেমিট্যান্স ৪৭৯০৯ ৪৯১৫৯ ৩৭৫৯৮
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ২১২০ ২৩৪০ ২৩৬২
ক) কর্মকর্তা ২১০০ ২৩১৪ ২৩৩৭
খ) কর্মচারি ২০ ২৬ ২৫
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) ৬০২ ৬০৪ ৫৪৭
শাখা (সংখ্যায়) ১১৪ ১১৮ ১১৮
ক) দেশে ১১৪ ১১৮ ১১৮
খ) বিদেশে
কৃষিখাতে
ক) ঋণ বিতরণ ১৫৬২ ৩১৯০ ৩৬৪৪
খ) আদায় ৪০০৫ ১৭৪৮ ৪৪৩৩
শিল্প খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ১০৮৯৬৮ ১৪২৫৫২ ৭২৭৮৩
খ) আদায় ৮৩৯৬২ ১১৬০৩৯ ৯৪৩০৯
খাত ভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য ১৩৩৯ ২৭৮১ ৩৫০৯
খ) শিল্প ৪৫৬০৭ ৫৬৩৬৯ ৫০৩৬৬
গ) ব্যবসা বাণিজ্য ২৫৮৩৭ ৩৪২৫৬ ৬৯৬৯৪
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন
সি.এস.আর ৮০ ৫৩ ২০১

উৎস  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড সুবিধা চালু করেছে। বর্তমানে ব্যাংকের ৭ ধরনের কার্ড রয়েছে, এগুলি হচ্ছে: ডেবিট কার্ড, রেমিট্যান্স কার্ড (প্রি-পেইড), ক্লাসিক কার্ড, গোল্ড ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কার্ড ও হজ্ব কার্ড। গ্রাহকগণ দেশে এবং দেশের বাইরে এসব কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন, কেনাকাটা, ভ্রমণ ইত্যাদি কাজ নির্বিঘেœ করতে পারেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য এবং সিডিবিএল-এর ফুল সার্ভিস ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট হিসেবে এ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে এমটিবি ব্রোকারেজ হাউস মতিঝিল, গুলশান, পল্লবী, উত্তরা এবং চট্রগ্রামের একটি শাখায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমটিবি ইতোমধ্যে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ অনুযায়ী গ্রাহকদের ঋণ প্রদান শুরু করেছে। ২০১৯ সালে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির অংশ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির যথাক্রমে ১.৫ এবং ১.৭ শতাংশ এবং আমানত ও ঋণ অগ্রিমের গড় সুদহার ব্যবধান দাঁড়ায় ৪.১ শতাংশ। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]