মাহমুদ, মামুন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

মাহমুদ, মামুন (১৯২৮-১৯৭১)  পুলিশ কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। প্রকৃত নাম সালাউদ্দীন মাহমুদ। ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ছিলেন চিকিৎসক এবং মাতা সামসুন্নাহার মাহমুদ বিশিষ্ট লেখক ও নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী।

মামুন মাহমুদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতার প্র্যাট মেমোরিয়াল স্কুলে। তিনি ১৯৪৩ সালে কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৪৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ভারত বিভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণসংযোগ বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

মামুন মাহমুদ পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন মহকুমায় মহকুমা পুলিশ সুপার এবং পরে জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মামুন মাহমুদ রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে মামুন মাহমুদ সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৮ সালে আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তিনি ছাত্র মিছিল থেকে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। কর্মজীবনে তিনি সরকারের অযৌক্তিক নির্দেশনা উপেক্ষা করতেন। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি সরকারের বিরাগভাজন হন। তিনি ১৯৬৯ সালের ১ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরে অবাঙালিদের গ্রেফতার করেন এবং ১৯৭০ সালের ১৭ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় গুলি চালানোর সরকারি নির্দেশ অমান্য করেন। এ সময়ে সরকার তাঁকে ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ময়মনসিংহে বদলি করে। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে ৩ মার্চ রাজশাহীতে পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে কয়েকজন বাঙালি নিহত হয়। এর প্রতিবাদে মামুন মাহমুদ তাঁর সরকারি বাসভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করেন।২৬ মার্চ সকালে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ট্রেজারিতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশরা তাকে বাধা দেয়।তখন এদের গ্রেফতার করার জন্য চাপ দিলে মামুন মাহমুদ অস্বীকৃতি জানান।

মামুন মাহমুদ

এদিনই সন্ধ্যায় রংপুর থেকে ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ অয়্যারলেসে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বলে একজন পাকিস্তানি অফিসার তাঁকে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৩ এপ্রিল ভারতীয় বেতার আকাশবাণীর বাংলা খবরে রাজশাহীর ডিআইজি নিহতের কথা প্রচারিত হয়।

সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা মামুন মাহমুদ নিজেও ছিলেন সংস্কৃতিমনা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ববাংলার নাট্য ও ক্রীড়া আন্দোলনে সক্রিয় হন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। মামুন মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, ওয়ারী ক্লাব এবং পুলিশ দলের তালিকাভুক্ত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৫৪ সালে কুড়িগ্রামে মহকুমা পুলিশ অফিসার থাকাকালে তিনি কুড়িগ্রাম ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন রেফারিজ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। মামুন মাহমুদ ছিলেন ১৯৫৬ সাল থেকে প্রকাশিত পুলিশ পত্রিকা ‘ডিটেকটিভ’-এর প্রথম সম্পাদক।

বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মামুন মাহমুদের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এ ছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করেছে মামুন মাহমুদ সড়ক।

[আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]