মাল্টিপল সেক্লরোসিস
মাল্টিপল সেক্লরোসিস (Multiple Sclerosis) হলো মস্তিষ্ক এবং মেরুরজ্জু অর্থ্যাৎ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে অকার্যকর করে দেয় এমন একটি রোগ। মাল্টিপল সেক্লরোসিসে দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্র (ইমিউন সিস্টেম) স্নায়ু তন্তুকে আবৃত করে রাখা মায়েলিন শিথকে আক্রমণ করে এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের বাকি অংশের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রোগটি স্নায়ুসমূহের স্থায়ী ক্ষতি বা অবনতির কারণ হতে পারে। এটি একটি স্বতঃঅনাক্রম্য রোগ বা অটোইমিউন রোগ হিসাবে বিবেচিত হয় যেখানে দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র (ইমিউন সিস্টেম) তার নিজস্ব টিস্যুকে আক্রমণ করে। মাল্টিপল সেক্লরোসিসের ক্ষেত্রে, ইমিউন সিস্টেমের এই ত্রুটি মায়েলিন শিথকে ধ্বংস করে। যখন প্রতিরক্ষামূলক মায়েলিন শিথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ফলস্বরূপ নার্ভ ফাইবার বা স্নায়ুতন্তু উন্মুক্ত হয়, তখন সেই স্নায়ুতন্তু বরাবর ভ্রমণকারী বার্তাগুলি ধীর বা অবরুদ্ধ হতে পারে। কেন মাল্টিপল সেক্লরোসিস কিছু মানুষের হয় কিন্তু অন্যদের হয় না, এর উত্তর এখনো জানা সম্ভব হয়নি। আপাত দৃষ্টিতে জিনগত ও পরিবেশগত কারণসমূহের সংমিশ্রণ দায়ী বলে মনে হয়। মাল্টিপল সেক্লরোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলির পরিসর ব্যাপক এবং স্নায়ুসমূহের ক্ষতির পরিমাণ, কোন স্নায়ু আক্রান্ত তার উপর নির্ভর করে। গুরুতর মাল্টিপল সেক্লরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাধীনভাবে বা একেবারে হাঁটার ক্ষমতা হারাতে পারে, এছাড়া অন্যরা কোনও নতুন উপসর্গ ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের জন্য সুস্থ থাকতে পারেন। মাল্টিপল সেক্লরোসিসে চোখের দৃষ্টির সমস্যাগুলিও সাধারণ, যার মধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, একটি বস্তুকে দুটি দেখা (ডাবল ভিশন) এবং ঝাপসা দৃষ্টি রয়েছে। মাল্টিপল সেক্লরোসিসের কোনো প্রতিকার নেই। ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছেথ (১) বয়স: সাধারণত ২০ এবং ৪০ বছর বয়সের কাছাকাছি ঘটে। (২) লিঙ্গ: মহিলাদের রিল্যাপিং-রিমিটিং (নির্দিষ্ট সময় পরপর উপসর্গ দেখা দেয়া ও উপসর্গ লাঘব হওয়া) মাল্টিপল সেক্লরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। (৩) পারিবারিক ইতিহাস: যদি বাবা-মা বা ভাইবোনদের মধ্যে একজনের মাল্টিপল সেক্লরোসিস থাকে, তবে পরিবারের যে কারো এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। (৪) নির্দিষ্ট সংক্রমণ: অনেক ভাইরাস মাল্টিপল সেক্লরোসিস সংক্রমণের সাথে যুক্ত থাকতে পারে, যার মধ্যে Epstein-Barr, ভাইরাস যা সংক্রামক মনোনিউক্লিওসিস সৃষ্টি করে। (৫) ভিটামিন ডি: দেহে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকা এবং সূর্যালোকের অভাব মাল্টিপল সেক্লরোসিস হওয়ার ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। (৬) কিছু স্বতঃঅনাক্রম্য রোগ বা অটোইমিউন রোগ: যেমন থাইরয়েড রোগ, মারাত্মক রক্তাল্পতা, সোরিয়াসিস (psoriasis), টাইপ-১ ডায়াবেটিস, বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগে মাল্টিপল সেক্লরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। (৭) ধূমপান: ধূমপানকারীরা যারা প্রাথমিক উপসর্গগুলি প্রত্যক্ষ করে তাদের অধূমপায়ীদের তুলনায় দ্বিতীয়বার উপসর্গগুলি প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে যা পুনরায় রিল্যাপিং-রিমিটিং মাল্টিপল সেক্লরোসিস নিশ্চিত করে। [মাহমুদ হোসেন]