মালি
মালি সমাজে মালাকর হিসেবে পরিচিত। এ পেশার লোকজন ফুলের বাগান পরিচর্যা করে। ফুলের মালা তৈরি করে বলে এদের নাম মালাকর। মালাকার শ্রেণি মূলত শূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের মূল দায়িত্ব বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল সংগ্রহ করে হিন্দু মন্দির পুষ্পসজ্জিত করে শোভাবর্ধন করা। তাদের প্রস্ত্ততকৃত গলার মালা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে বিশেষত কালী, কৃষ্ণ ও গণেশ পূজায় পবিত্রতা ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে ব্যবহূত হয়। সম্প্রদায় বিচারে মালিরা হিন্দু সমাজের নীচু জাতের ভূঁইমালি গোষ্ঠীর বেশ কাছাকাছি। ভূঁইমালিদের সবচেয়ে অস্পৃশ্য বলে বিবেচনা করা হয়। মালিরা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত, যথা ফুলগাঁথা মালি ও দোকানি মালি। ফুলগাঁথা মালিদের কাজ হলো সংগৃহীত ফুল, ফুলের পাতা ও ফুলের ডাল বা চারা দিয়ে বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে বিশেষ বিশেষ মালা ও বিভিন্ন অলঙ্কার, খেলনা, ফুলের তোড়া, ফুলের ডালা, বোকেট ইত্যাদি তৈরি করা, আর দোকানি মালি নিজেদের দোকানে ফুল ও ফুলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রয় করে। পেশাগতভাবে ফুল সংগ্রহ, ফুলের মালাসহ বিভিন্ন পুষ্পসামগ্রী তৈরি ও ফুলের বাগান করা ছাড়াও মালিরা কখনও কখনও ফেরিওয়ালা, কুলিগিরি, টিকাদান এবং মন্দির পরিচর্যা ইত্যাদি কাজেও নিজেদের নিয়োজিত করে।
মালাকর পেশাজীবীরা পুষ্প বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। পুষ্প বিষয়ে বিভিন্ন খবরাখবর ও তথ্য তাদের কাছে থাকে, তারা জানে কোন ধরনের বা কোন জাতের ফুল কোন কাজে বা ধর্মীয় উৎসবে ব্যবহার করা যায়, কোন ফুল ব্যবহার করা যায় না, কোন কোন ফুল শুধু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দেবদেবীর আত্মার প্রতি উৎসর্গ করা হয় ইত্যাদি, যেমন ধুতরা ফুল শিব দেবতার, অপরাজিতা কালী দেবীর, বাসক সরস্বতীর এবং অশোক ষষ্ঠীর জন্য পবিত্র। বলা হয় জবাফুল বা চীনাগোলাপ অশুভ লক্ষণের ইঙ্গিতবহ, সে কারণে বিয়ের উৎসবে তা ব্যবহূত হয় না। এটা কালী দেবীকেই উৎসর্গ করা যায়। ধর্মীয় উৎসবগুলিতে মালিরা কড়া সুগন্ধিযুক্ত ফুল হিসেবে চাঁপা, বেলি, গন্ধরাজ এবং হারসিঙ্গার সরবরাহ করে থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মালিদের কাজের প্রকৃতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মালির পেশাও এখন আর কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বা বর্ণের মধ্যে সীমিত নেই এবং অনেক স্থানের মালিরা হিন্দু শুধু সম্প্রদায়ভুক্তও নয়। নগরায়ণের বিস্তৃতি এবং বিভিন্ন অফিস, পার্ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসবের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নির্মিত হচ্ছে বিচিত্র ফুলের বাগান এবং সেসব জায়গায় নিয়োজিত হচ্ছে অধিকসংখ্যক মালি। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নওগাঁ, যশোর, শালিখা, কোটচাঁদপুর, নড়াইল প্রভৃতি স্থানে মালিরা সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে বেশি। [গোফরান ফারুকী]