মাযার

মাযার  শব্দটি আরবি দরগাহ শব্দের প্রতিশব্দ। এর ধাতুগত অর্থ ‘যিয়ারতের স্থান’। মাযার বলতে সাধারণত আওলিয়া-দরবেশগণের সমাধিস্থলকে বোঝায়।

মাযারকে রওযা বা কবরও বলা হয়। এর নিকটবর্তী স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, মকতব ইত্যাদি গড়ে ওঠে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) মদীনার কবরস্থান জান্নাত-আল বাকীতে এবং উহুদযুদ্ধে শাহাদতপ্রাপ্ত সাহাবীদের কবরস্থানে গমন করতেন এবং তাঁদের জন্য দোয়া করতেন। কবরকে মসজিদে পরিণত করা অর্থাৎ সিজদাহ করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

মাযারের প্রতি মুসলমানদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় সুফী তরীকাগুলির প্রভাবের ফলে। সুফীতত্ত্বের অনুসারী মুসলমানরা সুফী দরবেশদের কবরস্থান যিয়ারত করতে পছন্দ করেন। অনেক মাযারে সমাধিস্থ ব্যক্তির উরস অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। একে ঈসালে ছওয়াবের মাহফিল বলে। ঐতিহাসিক মাযারগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াক্ফ সম্পত্তি থাকে এবং খাদিমও থাকেন; অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা উত্তরাধিকারসূত্রে এ পদে অধিষ্ঠিত হন।

ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আগত ইসলাম প্রচারক আওলিয়া-দরবেশদের মাযারগুলি এখনও বিদ্যমান, যথা: আজমীরে খাজা মঈনউদ্দীন চিশতির (র.) মাযার, দিল্লিতে নিযামউদ্দীন আওলিয়ার (র.) মাযার, লাহোরে ফরিদউদ্দীন গঞ্জ-এ-শাক্কারের (র.) মাযার, সিলেটে হযরত শাহ জালালের (র.) মাযার, রাজশাহীর শাহ মখদুম (র.) মাযার, ঢাকায় শাহ আলী বাগদাদী (র.)-এর মাযার, খুলনায় খানজাহান আলী (র.)-এর মাযার ইত্যাদি। চট্টগ্রাম মাযারের শহর হিসেবে খ্যাত, কারণ সেখানে বারো-আওলিয়ার মাযার আছে।  [মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ]