মানসিক ব্যাধি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
মানসিক রোগ একজন ব্যক্তির জীবনের যে কোন একটি অথবা সবকটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করে। মারাত্মক অবস্থা, উপসর্গ, কারণ এবং চিকিৎসা অনুসারে এই রোগের ভিন্নতা দেখা যায়। মানসিক রোগকে বিভিন্ন উপায়ে ভাগ করা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক রোগের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:
মানসিক রোগ একজন ব্যক্তির জীবনের যে কোন একটি অথবা সবকটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করে। মারাত্মক অবস্থা, উপসর্গ, কারণ এবং চিকিৎসা অনুসারে এই রোগের ভিন্নতা দেখা যায়। মানসিক রোগকে বিভিন্ন উপায়ে ভাগ করা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক রোগের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:


মনোবিকার (psychosis)  অন্যতম প্রধান এই মানসিক রোগে চিন্তাশক্তি, অনুভূতি এবং আচরণের সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের অসুস্থতা একজন ব্যক্তিকে সমাজে কাজ করার অনুপোযোগী করে তোলে। মনোবিকারগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি কাজ করে না এবং বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে চিন্তাশক্তির অস্বাভাবিকতা ভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণাগুলি সাধারণত অনুভূতি অথবা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভুল পথে প্রয়োগ করা হয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কোন উপযুক্ত বাহ্যিক উদ্দীপনার অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একটি চেতনাবাহী অনুভূতি বা মতিভ্রম (hallucination) ঘটতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে যে, মনোবিকার কোন অতি প্রাকৃত শক্তি অথবা ভৌতিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট এবং এ জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রায়শই পাগল অথবা উন্মাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
''মনোবিকার'' (psychosis)  অন্যতম প্রধান এই মানসিক রোগে চিন্তাশক্তি, অনুভূতি এবং আচরণের সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের অসুস্থতা একজন ব্যক্তিকে সমাজে কাজ করার অনুপোযোগী করে তোলে। মনোবিকারগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি কাজ করে না এবং বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে চিন্তাশক্তির অস্বাভাবিকতা ভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণাগুলি সাধারণত অনুভূতি অথবা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভুল পথে প্রয়োগ করা হয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কোন উপযুক্ত বাহ্যিক উদ্দীপনার অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একটি চেতনাবাহী অনুভূতি বা মতিভ্রম (hallucination) ঘটতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে যে, মনোবিকার কোন অতি প্রাকৃত শক্তি অথবা ভৌতিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট এবং এ জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রায়শই পাগল অথবা উন্মাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।


মনোবিকার সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে- আঙ্গিক বা দৈহিক (organic) এবং ক্রিয়ামূলক (functional)। মনোবিকারগ্রস্ত একজন রোগীকে উপযুক্ত মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা উচিত।
মনোবিকার সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে- আঙ্গিক বা দৈহিক (organic) এবং ক্রিয়ামূলক (functional)। মনোবিকারগ্রস্ত একজন রোগীকে উপযুক্ত মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা উচিত।
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
ক্রিয়ামূলক মনোবিকারের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক অথবা দেহের অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের কোন সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় না। যদিও এক্ষেত্রে অনির্ধারিত প্রাণরাসায়নিক অথবা অন্যান্য অস্বভাবিকতা দেখা যেতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া এবং চিত্তবৈকল্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়ামূলক মনোবিকার। সিজোফ্রেনিয়া শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে। Schizen অর্থ ভেঙ্গে যাওয়া এবং phren-এর অর্থ মন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানসিক কাজকর্মের বিশৃঙ্খলতা বা যোগাযোগহীনতা। ভ্রান্তি, মতিভ্রম, অসংলগ্ন কথাবার্তা, অসংলগ্ন আচরণ এবং নেতিবাচক ধারণা (নিস্পৃহতা) ইত্যাদি সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল রোগীর মধ্যে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই মনোবিকার রোগ সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ক্রিয়ামূলক মনোবিকারের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক অথবা দেহের অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের কোন সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় না। যদিও এক্ষেত্রে অনির্ধারিত প্রাণরাসায়নিক অথবা অন্যান্য অস্বভাবিকতা দেখা যেতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া এবং চিত্তবৈকল্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়ামূলক মনোবিকার। সিজোফ্রেনিয়া শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে। Schizen অর্থ ভেঙ্গে যাওয়া এবং phren-এর অর্থ মন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানসিক কাজকর্মের বিশৃঙ্খলতা বা যোগাযোগহীনতা। ভ্রান্তি, মতিভ্রম, অসংলগ্ন কথাবার্তা, অসংলগ্ন আচরণ এবং নেতিবাচক ধারণা (নিস্পৃহতা) ইত্যাদি সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল রোগীর মধ্যে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই মনোবিকার রোগ সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়।


নিউরোসিস বা স্নায়ুবিকার'''  '''আবেগজনিত জটিলতা যা প্রাথমিকভাবে দুশ্চিন্তার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্নায়ুবিকার মনোবিকারের তুলনায় কম মারাত্মক। এই রোগে বাহ্যিক বাস্তবতার ক্ষেত্রে কোন বিকৃতি ঘটে না অথবা সুস্পষ্ট ব্যক্তিত্বের বিশৃংখলতা পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু স্নায়ুবিকারগ্রস্ত ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক এবং কর্মদক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবাস্তব এবং অসংগত ভীতি বা দুশ্চিন্তা এ ধরনের জটিলতার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। দুশ্চিন্তাজনিত জটিলতার মধ্যে রয়েছে: আতঙ্ক, ভীতি, সাধারণ দুশ্চিন্তাগত জটিলতা, বাতিকগ্রস্ত জটিলতা, আঘাত-উত্তর চাপজনিত জটিলতা ইত্যাদি। বাংলাদেশে স্নায়ুবিকারগ্রস্ত রোগীদের অধিকাংশই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য যেয়ে থাকে। কিন্তু প্রায়শই তারা দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশা, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার শিকার হয়।
''নিউরোসিস বা স্নায়ুবিকার'' আবেগজনিত জটিলতা যা প্রাথমিকভাবে দুশ্চিন্তার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্নায়ুবিকার মনোবিকারের তুলনায় কম মারাত্মক। এই রোগে বাহ্যিক বাস্তবতার ক্ষেত্রে কোন বিকৃতি ঘটে না অথবা সুস্পষ্ট ব্যক্তিত্বের বিশৃংখলতা পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু স্নায়ুবিকারগ্রস্ত ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক এবং কর্মদক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবাস্তব এবং অসংগত ভীতি বা দুশ্চিন্তা এ ধরনের জটিলতার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। দুশ্চিন্তাজনিত জটিলতার মধ্যে রয়েছে: আতঙ্ক, ভীতি, সাধারণ দুশ্চিন্তাগত জটিলতা, বাতিকগ্রস্ত জটিলতা, আঘাত-উত্তর চাপজনিত জটিলতা ইত্যাদি। বাংলাদেশে স্নায়ুবিকারগ্রস্ত রোগীদের অধিকাংশই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য যেয়ে থাকে। কিন্তু প্রায়শই তারা দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশা, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার শিকার হয়।


ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা  দীর্ঘস্থায়ী অনমনীয়, অসংলগ্ন অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা এবং আচরণ, যা সামাজিক অথবা পেশাগত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। ব্যক্তি বিশেষের সাংস্কৃতিক আদর্শের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই আচরণ গুরুত্বপূর্ণভাবে বিচ্যুত হয় এবং এর ফলে রোগী ও তার পরিবার এবং সমাজের জন্য দুর্দশার কারণ হয়ে ওঠে। ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতার ধরন এবং মারাত্মক অবস্থার ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় এবং এই জটিলতা নবযুবক ও অল্পবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
''ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা''  দীর্ঘস্থায়ী অনমনীয়, অসংলগ্ন অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা এবং আচরণ, যা সামাজিক অথবা পেশাগত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। ব্যক্তি বিশেষের সাংস্কৃতিক আদর্শের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই আচরণ গুরুত্বপূর্ণভাবে বিচ্যুত হয় এবং এর ফলে রোগী ও তার পরিবার এবং সমাজের জন্য দুর্দশার কারণ হয়ে ওঠে। ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতার ধরন এবং মারাত্মক অবস্থার ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় এবং এই জটিলতা নবযুবক ও অল্পবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।


বস্ত্তসংশ্লিষ্ট জটিলতা  দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনঃপুন অধিক মদ্যপান মাদকের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট অসংলগ্ন আচরণ। এ ধরনের আচরণ ব্যক্তিবিশেষ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে আইনগত, সামাজিক অথবা পেশাগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে মাদক সামগ্রী প্রচলনের ব্যাপকতার উপর পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, মাদক গ্রহণকারী অধিকাংশ ব্যক্তিই অবিবাহিত ও বেকার এবং অধিকাংশরই (৭৯.৫%) বয়স বিশ থেকে চৌত্রিশের মধ্যে। প্রাথমিক অবস্থায় মাদক গ্রহণের ধারা থেকে দেখা যায় যে, এদের অধিকাংশই ব্যবহার করছে হেরোইন (৫৪.০৬%) এবং সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ (১.৩৯%) এলকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে। মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
''বস্ত্তসংশ্লিষ্ট জটিলতা''  দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনঃপুন অধিক মদ্যপান মাদকের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট অসংলগ্ন আচরণ। এ ধরনের আচরণ ব্যক্তিবিশেষ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে আইনগত, সামাজিক অথবা পেশাগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে মাদক সামগ্রী প্রচলনের ব্যাপকতার উপর পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, মাদক গ্রহণকারী অধিকাংশ ব্যক্তিই অবিবাহিত ও বেকার এবং অধিকাংশরই (৭৯.৫%) বয়স বিশ থেকে চৌত্রিশের মধ্যে। প্রাথমিক অবস্থায় মাদক গ্রহণের ধারা থেকে দেখা যায় যে, এদের অধিকাংশই ব্যবহার করছে হেরোইন (৫৪.০৬%) এবং সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ (১.৩৯%) এলকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে। মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।


শৈশবকালীন আচরণজনিত জটিলতা বা সমস্যা'''  '''অস্বাভাবিকতা, আচরণগত জটিলতা, আক্রমণাত্মক আচরণ, কর্তব্য কাজে অবহেলা ও অপরাধ, অবসাদ, সিজোফ্রেনিয়া, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, অমনোযোগিতা, যৌন সমস্যা ইত্যাদি শিশুদের অতি পরিচিত আচরণগত সমস্যা। বাংলাদেশে ঢাকার শিশুদের আচরণগত সমস্যার উপর পরিচালিত গবেষণা অনুসারে মায়েদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১১.৮ ভাগ ছেলে এবং শতকরা ১০.৭ ভাগ মেয়ে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১২.৮ ভাগ ছেলে এবং ১১.২ ভাগ মেয়ে আচরণজনিত জটিলতায় ভুগছে। এই গবেষণায় আরও প্রতীয়মান হয় যে, ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় এই সমস্যার অধিক ভোগে। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিশুরা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের চেয়ে বেশি সমস্যায় সম্মুখীন। বস্তিবাসী শিশুদের সমস্যা বস্তিতে বসবাস করে না এমন শিশুদের তুলনায় প্রায়শই অধিক।
''শৈশবকালীন আচরণজনিত জটিলতা বা সমস্যা''  অস্বাভাবিকতা, আচরণগত জটিলতা, আক্রমণাত্মক আচরণ, কর্তব্য কাজে অবহেলা ও অপরাধ, অবসাদ, সিজোফ্রেনিয়া, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, অমনোযোগিতা, যৌন সমস্যা ইত্যাদি শিশুদের অতি পরিচিত আচরণগত সমস্যা। বাংলাদেশে ঢাকার শিশুদের আচরণগত সমস্যার উপর পরিচালিত গবেষণা অনুসারে মায়েদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১১.৮ ভাগ ছেলে এবং শতকরা ১০.৭ ভাগ মেয়ে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১২.৮ ভাগ ছেলে এবং ১১.২ ভাগ মেয়ে আচরণজনিত জটিলতায় ভুগছে। এই গবেষণায় আরও প্রতীয়মান হয় যে, ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় এই সমস্যার অধিক ভোগে। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিশুরা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের চেয়ে বেশি সমস্যায় সম্মুখীন। বস্তিবাসী শিশুদের সমস্যা বস্তিতে বসবাস করে না এমন শিশুদের তুলনায় প্রায়শই অধিক।


বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা  বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহ্যগত পারিবারিক কাঠামো এবং পরিবারের সহযোগিতা আশ্বাসজনিত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এই বৃদ্ধি সংঘটিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেরা দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব, নিদ্রাহীনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস, অমনোযোগিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়।
বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা  বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহ্যগত পারিবারিক কাঠামো এবং পরিবারের সহযোগিতা আশ্বাসজনিত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এই বৃদ্ধি সংঘটিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেরা দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব, নিদ্রাহীনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস, অমনোযোগিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়।
৩৪ নং লাইন: ৩৪ নং লাইন:
বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দেশে আধুনিক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা সুবিধাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য কোন উন্নত কেন্দ্র নেই। তদান্তীন ব্রিটিশ ভারতের জারিকৃত লিউন্যাসি আইন ১৯১২ এখনও এদেশে বলবৎ রয়েছে।
বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দেশে আধুনিক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা সুবিধাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য কোন উন্নত কেন্দ্র নেই। তদান্তীন ব্রিটিশ ভারতের জারিকৃত লিউন্যাসি আইন ১৯১২ এখনও এদেশে বলবৎ রয়েছে।


'''মানসিক বিষণ্ণতা''' (Mental depression) ভাব এবং আবেগের পরিবর্তন, যখন তা প্রকাশ পায় দুঃখ বোধ, নিষ্ক্রিয় ভাব এবং জীবনকে উপভোগ করার সামর্থ্য হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণ দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা মানব জীবনেরই অংশ। প্রিয় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্ত হারিয়ে গেলে যথার্থ আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তা প্রকাশ পায়। দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তখন তা বিষণ্ণতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
'''''মানসিক বিষণ্ণতা''''' (Mental depression) ভাব এবং আবেগের পরিবর্তন, যখন তা প্রকাশ পায় দুঃখ বোধ, নিষ্ক্রিয় ভাব এবং জীবনকে উপভোগ করার সামর্থ্য হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণ দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা মানব জীবনেরই অংশ। প্রিয় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্ত হারিয়ে গেলে যথার্থ আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তা প্রকাশ পায়। দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তখন তা বিষণ্ণতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।


বিষণ্ণতা নানা মাত্রায় হতে পারে। এটি হতে পারে তীব্র (acute) অথবা দীর্ঘমেয়াদী (chronic)। ধরন হতে পারে unipolar অথবা bipolar। ইউনিপোলার বিষণ্ণতায় রোগী এক বা একাধিক বড় ধরনের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়া ছাড়াই। বাইপোলার বিষণ্ণতায় রোগী একবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, আরেকবার ম্যানিয়ায়। এই দুধরনের বিষণ্ণতাকে অন্তর্জাত (এন্ডোজেনাস) বিষণ্ণতাও বলা হয় এবং এদের প্রত্যেকের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
বিষণ্ণতা নানা মাত্রায় হতে পারে। এটি হতে পারে তীব্র (acute) অথবা দীর্ঘমেয়াদী (chronic)। ধরন হতে পারে unipolar অথবা bipolar। ইউনিপোলার বিষণ্ণতায় রোগী এক বা একাধিক বড় ধরনের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়া ছাড়াই। বাইপোলার বিষণ্ণতায় রোগী একবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, আরেকবার ম্যানিয়ায়। এই দুধরনের বিষণ্ণতাকে অন্তর্জাত (এন্ডোজেনাস) বিষণ্ণতাও বলা হয় এবং এদের প্রত্যেকের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
৪৮ নং লাইন: ৪৮ নং লাইন:
বাংলাদেশে বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসায় সাধারণভাবে এন্টিডিপ্রেসান্ট ওষুধ ব্যবহূত হয়। মনোরোগ চিকিৎসক এবং শিক্ষানবীশ মনোরোগ চিকিৎসকগণ মনোবৈকল্য দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি ব্যবহার করে থাকেন। মাঝারি মাত্রার বিষণ্ণতা রোগে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি কাউন্সেলিং বা পরামর্শ প্রদান যথেষ্ট উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। অতি তীব্র মাত্রার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসায় সুফল পাওয়া না গেলে এবং রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পশ্চিমা দেশগুলির ন্যায় বাংলাদেশেও শেষ ব্যবস্থা হিসেবে বৈদ্যুতিক শক্ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশে বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসায় সাধারণভাবে এন্টিডিপ্রেসান্ট ওষুধ ব্যবহূত হয়। মনোরোগ চিকিৎসক এবং শিক্ষানবীশ মনোরোগ চিকিৎসকগণ মনোবৈকল্য দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি ব্যবহার করে থাকেন। মাঝারি মাত্রার বিষণ্ণতা রোগে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি কাউন্সেলিং বা পরামর্শ প্রদান যথেষ্ট উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। অতি তীব্র মাত্রার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসায় সুফল পাওয়া না গেলে এবং রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পশ্চিমা দেশগুলির ন্যায় বাংলাদেশেও শেষ ব্যবস্থা হিসেবে বৈদ্যুতিক শক্ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।


'''মানসিক প্রতিবন্ধী''' (Mental retardation)  মস্তিষ্কের ত্রুটিপূর্ণ বিকাশের ফলে সৃষ্ট অবনমিত (subnormal) বুদ্ধিমত্তা। এতে শৈশবকাল থেকেই বুদ্ধিমত্তার অভাব, বেড়ে ওঠার সময়কালে স্বল্প ও মন্থর মানসিক বিকাশ, খর্বিত শিক্ষণক্ষমতা এবং দুর্বল আচরণগত ও সামাজিক অভিযোজ্যতা দেখা দিতে থাকে। এটি একটি স্থায়ী প্রতিবন্ধিতা, কিন্তু কোন রোগ নয়। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা অত্যন্ত দুর্বল এবং বিচার-বিবেচনার ক্ষমতাও বিকশিত হয় না।
'''''মানসিক প্রতিবন্ধী''''' (Mental retardation)  মস্তিষ্কের ত্রুটিপূর্ণ বিকাশের ফলে সৃষ্ট অবনমিত (subnormal) বুদ্ধিমত্তা। এতে শৈশবকাল থেকেই বুদ্ধিমত্তার অভাব, বেড়ে ওঠার সময়কালে স্বল্প ও মন্থর মানসিক বিকাশ, খর্বিত শিক্ষণক্ষমতা এবং দুর্বল আচরণগত ও সামাজিক অভিযোজ্যতা দেখা দিতে থাকে। এটি একটি স্থায়ী প্রতিবন্ধিতা, কিন্তু কোন রোগ নয়। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা অত্যন্ত দুর্বল এবং বিচার-বিবেচনার ক্ষমতাও বিকশিত হয় না।


বুদ্ধিগত ঘাটতির মাত্রানুসারে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের চারটি দলে ভাগ করা যায়: মৃদু, মাঝারি, মারাত্মক ও সার্বিক। উপস্থাপনা, নিদানতত্ত্ব, সংশ্লিষ্ট ধরন, প্রকোপ, ব্যবস্থাপনা ও ফলাফল দ্বারা প্রতিবন্ধীদের পরস্পর থেকে পৃথক করা যায়। বুদ্ধিগত দক্ষতা সাধারণত একটি প্রমিত বুদ্ধিপরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ্য। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর IQ ৭০ থেকে কম হয়ে থাকে এবং সে দৈনন্দিন কাজকর্ম সঠিকভাবে চালাতে পারে না। মৃদু প্রতিবন্ধীদের IQ ৫০-৭০। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক শিশুদের থেকে সব সময় মৃদু প্রতিবন্ধী শিশুকে পৃথক করা যায় না। মাঝারি ও মারাত্মক প্রতিবন্ধীদের IQ যথাক্রমে ২০-৪৯ এবং ২০-৩০ হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধীর IQ থাকে ২০ থেকেও কম। মারাত্মক ও সার্বিক প্রতিবন্ধীঅনেক শিশুরই মোটর স্নায়ু ও সংজ্ঞাবহ স্নায়ু অত্যন্ত দুর্বল থাকে।
বুদ্ধিগত ঘাটতির মাত্রানুসারে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের চারটি দলে ভাগ করা যায়: মৃদু, মাঝারি, মারাত্মক ও সার্বিক। উপস্থাপনা, নিদানতত্ত্ব, সংশ্লিষ্ট ধরন, প্রকোপ, ব্যবস্থাপনা ও ফলাফল দ্বারা প্রতিবন্ধীদের পরস্পর থেকে পৃথক করা যায়। বুদ্ধিগত দক্ষতা সাধারণত একটি প্রমিত বুদ্ধিপরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ্য। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর IQ ৭০ থেকে কম হয়ে থাকে এবং সে দৈনন্দিন কাজকর্ম সঠিকভাবে চালাতে পারে না। মৃদু প্রতিবন্ধীদের IQ ৫০-৭০। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক শিশুদের থেকে সব সময় মৃদু প্রতিবন্ধী শিশুকে পৃথক করা যায় না। মাঝারি ও মারাত্মক প্রতিবন্ধীদের IQ যথাক্রমে ২০-৪৯ এবং ২০-৩০ হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধীর IQ থাকে ২০ থেকেও কম। মারাত্মক ও সার্বিক প্রতিবন্ধীঅনেক শিশুরই মোটর স্নায়ু ও সংজ্ঞাবহ স্নায়ু অত্যন্ত দুর্বল থাকে।
৬২ নং লাইন: ৬২ নং লাইন:
দেশে মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সোসাইটি ফর দ্য কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন অব মেন্টালি রিটার্ডেড চিলড্রেন বাংলাদেশ (SCEMRCB) মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করে। বর্তমানে গোটা বাংলাদেশে এই সংস্থার ২১টি শাখা রয়েছে। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর দ্য মেনটালি রিটার্ডেড (BIMR) এসব শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং আচরণগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে গঠিত বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পিতামাতাকে পরামর্শ, সেবা ও প্রশিক্ষণ দেয়।
দেশে মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সোসাইটি ফর দ্য কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন অব মেন্টালি রিটার্ডেড চিলড্রেন বাংলাদেশ (SCEMRCB) মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করে। বর্তমানে গোটা বাংলাদেশে এই সংস্থার ২১টি শাখা রয়েছে। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর দ্য মেনটালি রিটার্ডেড (BIMR) এসব শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং আচরণগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে গঠিত বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পিতামাতাকে পরামর্শ, সেবা ও প্রশিক্ষণ দেয়।


'''সিজোফ্রেনিয়া''' (Schizophrenia)  উদ্ভট চিন্তা, ভগ্নমনস্কতা, সামঞ্জস্যহীন আচরণ এবং আবেগ প্রবণতা ও বু্দ্ধিমত্তার অবনতি, এমন উপসর্গ প্রদর্শনকারী এক ধরনের মনোবিকার। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয়ে ভর্তিকৃত অধিকাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এক হিসাবে দেখা গেছে এদেশে প্রায় তেরো লক্ষ লোক (বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ) এই রোগে ভুগছে। যৌবনের প্রারম্ভে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়েই সাধারণত এ বৈকল্য দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সেই সিজোফ্রেনিয়া দেখা দিতে পারে। তথাপি প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ ঘটে ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা এ রোগ নিরাময়ে সাধারণত অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ (Antipsychotic drugs) ব্যবহার করে থাকেন। তবে চিকিৎসার জন্য তাঁরা প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি প্রয়োগ করেন।  [রোকেয়া বেগম]
'''''সিজোফ্রেনিয়া''''' (Schizophrenia)  উদ্ভট চিন্তা, ভগ্নমনস্কতা, সামঞ্জস্যহীন আচরণ এবং আবেগ প্রবণতা ও বু্দ্ধিমত্তার অবনতি, এমন উপসর্গ প্রদর্শনকারী এক ধরনের মনোবিকার। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয়ে ভর্তিকৃত অধিকাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এক হিসাবে দেখা গেছে এদেশে প্রায় তেরো লক্ষ লোক (বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ) এই রোগে ভুগছে। যৌবনের প্রারম্ভে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়েই সাধারণত এ বৈকল্য দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সেই সিজোফ্রেনিয়া দেখা দিতে পারে। তথাপি প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ ঘটে ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা এ রোগ নিরাময়ে সাধারণত অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ (Antipsychotic drugs) ব্যবহার করে থাকেন। তবে চিকিৎসার জন্য তাঁরা প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি প্রয়োগ করেন।  [রোকেয়া বেগম]


''আরও দেখুন'' প্রতিবন্ধী সমস্যা; মানসিক হাসপাতাল।
''আরও দেখুন'' [[মানসিক হাসপাতাল|মানসিক হাসপাতাল]]।


[[en:Mental Illness]]
[[en:Mental Illness]]

০৪:২৫, ৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মানসিক ব্যাধি (Mental illness)  মন এবং আচরণকে প্রভাবিত করে এমন যে কোন ধরনের জটিলতা। বস্ত্তত মানসিক রোগ ব্যক্তির আচরণের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকৃতিগতভাবে আত্মপরাজয়মূলক (self-defeating) এবং অসংলগ্ন। এই আচরণ প্রতিটি ব্যক্তি এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এই রোগে কয়েক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থার উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া এই উপসর্গগুলি মানসিক বা শারীরিক লক্ষণ অথবা উভয় প্রকারেই প্রকাশ পেতে পারে। যদিও বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে ভুগছে, তথাপি এই রোগটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। বাংলাদেশে এই রোগের ব্যাপকতা সম্ভবত অন্যান্য উন্নত দেশের প্রায় সমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মানসিকভাবে অসুস্থ লোকের সংখ্যা প্রায় চুরাশি লক্ষ, অর্থাৎ মোট ১৩ কোটি জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ছয় শতাংশ এই রোগে ভুগছে।

গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে পরিচালিত অল্পসংখ্যক জরিপ, বেসরকারি ক্লিনিক, মানসিক হাসপাতাল এবং বিভিন্ন হাসপাতালের মানসিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায় যে, বাংলাদেশের গ্রামীণ এবং শহুরে সমাজে মানসিক রোগ ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। দেখা গেছে যে, সাধারণ চিকিৎসকদের সাক্ষাৎপ্রার্থী রোগীদের প্রায় শতকরা ত্রিশ ভাগ মানসিক জটিলতা অথবা গুরুত্বপূর্ণ মানসিক কারণজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। গ্রামাঞ্চলের জনগণের মধ্যে পরিচালিত জরিপ থেকে জানা যায় যে, এক হাজার লোকের মধ্যে প্রায় পনেরো জন মারাত্মক মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত এবং আরও এক হাজার জনের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ জন বিভিন্ন ধরনের মনোবিকার এবং মনোদৈহিক সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এই রোগে বেশি ভোগে।

মানসিক রোগ একজন ব্যক্তির জীবনের যে কোন একটি অথবা সবকটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করে। মারাত্মক অবস্থা, উপসর্গ, কারণ এবং চিকিৎসা অনুসারে এই রোগের ভিন্নতা দেখা যায়। মানসিক রোগকে বিভিন্ন উপায়ে ভাগ করা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক রোগের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:

মনোবিকার (psychosis)  অন্যতম প্রধান এই মানসিক রোগে চিন্তাশক্তি, অনুভূতি এবং আচরণের সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের অসুস্থতা একজন ব্যক্তিকে সমাজে কাজ করার অনুপোযোগী করে তোলে। মনোবিকারগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি কাজ করে না এবং বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে চিন্তাশক্তির অস্বাভাবিকতা ভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণাগুলি সাধারণত অনুভূতি অথবা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভুল পথে প্রয়োগ করা হয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কোন উপযুক্ত বাহ্যিক উদ্দীপনার অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একটি চেতনাবাহী অনুভূতি বা মতিভ্রম (hallucination) ঘটতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে যে, মনোবিকার কোন অতি প্রাকৃত শক্তি অথবা ভৌতিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট এবং এ জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রায়শই পাগল অথবা উন্মাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মনোবিকার সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে- আঙ্গিক বা দৈহিক (organic) এবং ক্রিয়ামূলক (functional)। মনোবিকারগ্রস্ত একজন রোগীকে উপযুক্ত মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা উচিত।

আঙ্গিক বা দৈহিক মনোবিকারের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে এবং অন্যান্য দৈহিক ব্যবস্থায় সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। আঙ্গিক মনোবিকার জটিলতা মারাত্মক অথবা দীর্ঘস্থায়ী। মস্তিষ্কের আঙ্গিক জটিলতার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে সচেতনতা হ্রাস পাওয়া এবং মনে রাখা, কথা বলা ও চিন্তাশক্তির বাধাগ্রস্ততা ইত্যাদি। রোগী স্থান কালপাত্র সম্পর্কে ভ্রান্তিতে ভোগে। বয়সের সাথে সাথে মস্তিষ্কের আঙ্গিক অকার্যকারিতার লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে মনোবিকলন এবং প্রলাপ বকা আঙ্গিক মনোবিকারের প্রচলিত ধরন হিসেবে বিবেচিত।

ক্রিয়ামূলক মনোবিকারের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক অথবা দেহের অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের কোন সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় না। যদিও এক্ষেত্রে অনির্ধারিত প্রাণরাসায়নিক অথবা অন্যান্য অস্বভাবিকতা দেখা যেতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া এবং চিত্তবৈকল্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়ামূলক মনোবিকার। সিজোফ্রেনিয়া শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে। Schizen অর্থ ভেঙ্গে যাওয়া এবং phren-এর অর্থ মন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানসিক কাজকর্মের বিশৃঙ্খলতা বা যোগাযোগহীনতা। ভ্রান্তি, মতিভ্রম, অসংলগ্ন কথাবার্তা, অসংলগ্ন আচরণ এবং নেতিবাচক ধারণা (নিস্পৃহতা) ইত্যাদি সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল রোগীর মধ্যে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই মনোবিকার রোগ সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়।

নিউরোসিস বা স্নায়ুবিকার আবেগজনিত জটিলতা যা প্রাথমিকভাবে দুশ্চিন্তার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্নায়ুবিকার মনোবিকারের তুলনায় কম মারাত্মক। এই রোগে বাহ্যিক বাস্তবতার ক্ষেত্রে কোন বিকৃতি ঘটে না অথবা সুস্পষ্ট ব্যক্তিত্বের বিশৃংখলতা পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু স্নায়ুবিকারগ্রস্ত ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক এবং কর্মদক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবাস্তব এবং অসংগত ভীতি বা দুশ্চিন্তা এ ধরনের জটিলতার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। দুশ্চিন্তাজনিত জটিলতার মধ্যে রয়েছে: আতঙ্ক, ভীতি, সাধারণ দুশ্চিন্তাগত জটিলতা, বাতিকগ্রস্ত জটিলতা, আঘাত-উত্তর চাপজনিত জটিলতা ইত্যাদি। বাংলাদেশে স্নায়ুবিকারগ্রস্ত রোগীদের অধিকাংশই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য যেয়ে থাকে। কিন্তু প্রায়শই তারা দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশা, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার শিকার হয়।

ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা  দীর্ঘস্থায়ী অনমনীয়, অসংলগ্ন অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা এবং আচরণ, যা সামাজিক অথবা পেশাগত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। ব্যক্তি বিশেষের সাংস্কৃতিক আদর্শের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই আচরণ গুরুত্বপূর্ণভাবে বিচ্যুত হয় এবং এর ফলে রোগী ও তার পরিবার এবং সমাজের জন্য দুর্দশার কারণ হয়ে ওঠে। ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতার ধরন এবং মারাত্মক অবস্থার ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যক্তিত্বজনিত জটিলতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় এবং এই জটিলতা নবযুবক ও অল্পবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

বস্ত্তসংশ্লিষ্ট জটিলতা  দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনঃপুন অধিক মদ্যপান মাদকের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট অসংলগ্ন আচরণ। এ ধরনের আচরণ ব্যক্তিবিশেষ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে আইনগত, সামাজিক অথবা পেশাগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে মাদক সামগ্রী প্রচলনের ব্যাপকতার উপর পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, মাদক গ্রহণকারী অধিকাংশ ব্যক্তিই অবিবাহিত ও বেকার এবং অধিকাংশরই (৭৯.৫%) বয়স বিশ থেকে চৌত্রিশের মধ্যে। প্রাথমিক অবস্থায় মাদক গ্রহণের ধারা থেকে দেখা যায় যে, এদের অধিকাংশই ব্যবহার করছে হেরোইন (৫৪.০৬%) এবং সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ (১.৩৯%) এলকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে। মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শৈশবকালীন আচরণজনিত জটিলতা বা সমস্যা  অস্বাভাবিকতা, আচরণগত জটিলতা, আক্রমণাত্মক আচরণ, কর্তব্য কাজে অবহেলা ও অপরাধ, অবসাদ, সিজোফ্রেনিয়া, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, অমনোযোগিতা, যৌন সমস্যা ইত্যাদি শিশুদের অতি পরিচিত আচরণগত সমস্যা। বাংলাদেশে ঢাকার শিশুদের আচরণগত সমস্যার উপর পরিচালিত গবেষণা অনুসারে মায়েদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১১.৮ ভাগ ছেলে এবং শতকরা ১০.৭ ভাগ মেয়ে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ১২.৮ ভাগ ছেলে এবং ১১.২ ভাগ মেয়ে আচরণজনিত জটিলতায় ভুগছে। এই গবেষণায় আরও প্রতীয়মান হয় যে, ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় এই সমস্যার অধিক ভোগে। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিশুরা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের চেয়ে বেশি সমস্যায় সম্মুখীন। বস্তিবাসী শিশুদের সমস্যা বস্তিতে বসবাস করে না এমন শিশুদের তুলনায় প্রায়শই অধিক।

বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা  বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহ্যগত পারিবারিক কাঠামো এবং পরিবারের সহযোগিতা আশ্বাসজনিত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এই বৃদ্ধি সংঘটিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বয়স্ক লোকেরা দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব, নিদ্রাহীনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস, অমনোযোগিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনুন্নত। এদেশে সরকারিভাবে মানসিক অসুস্থ লোকের যত্ন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা ১৯৫৭ সালে পাবনায় ষাট শয্যাবিশিষ্ট একটি মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয়। শয্যা সংখ্যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি করে চারশতে উন্নীত করা হয়। বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশকের শুরুর দিকে সাধারণ হাসপাতালগুলির মানসিক বিভাগে মানসিক রোগীদের জন্য বহির্বিভাগীয় চিকিৎসা ব্যাবস্থাদি গ্রহণ করা হয় এবং অভ্যন্তরীণ রোগীদের জন্য অল্প কিছু সংখ্যক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৫ সালে আই.পি.জি.এম.আর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়) মনোরোগবিদ্যার উপর স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকায় উপজেলা চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (National Institute of Mental Health) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিছু বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউট মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ৭০-৮০ জন মনোরোগ বিশারদ রয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ আন্তর্জাতিক মান ও নীতি সমন্বিত ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানে তিনবছর ব্যাপী স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে। এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুগ্মভাবে এবং ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা উন্নতকরণের লক্ষ্য নিয়ে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য সাধারণত ঔষধ ব্যবহার করা হয়। মারাত্মক অবসাদগ্রস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং কার্যকরী চিকিৎসার জন্য Elcetroconvulsive therapy প্রয়োগ করা হয়। আবেগ এবং মানসিক সমস্যার কারণে বিপর্যস্ত রোগীদের সহায়তা দানের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল মনোরোগ বিশারদ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্লিনিক্যাল মনোরোগ বিশারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মনোরোগচিকিৎসা পদ্ধতি সাম্প্রতিককালে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঢাকা এবং অন্যান্য কিছু শহরে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সুবিধাদি পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী এ ধরনের সেবা ও সুবিধাদি খুব অল্প মাত্রায় ভোগ করে থাকে। এখনও মানসিক রোগের ক্ষেত্রে পূর্বসংস্কার, কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা এ দেশে বিভিন্ন এলাকার লোকেদের মধ্যে দেখা যায়। মানসিক অসুস্থতা অতিপ্রাকৃত শক্তির দ্বারা অথবা ভৌতিক শক্তির দ্বারা ঘটে এবং এদের অধিকাংশই অনিরাময় যোগ্য- এটি একটি প্রচলিত বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে মানসিকভাবে অসুস্থ অনেক রোগীই ধর্মীয় ও সনাতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এছাড়া ফকির, কবিরাজ এবং জাদুকরের কাছেও চিকিৎসার জন্য গিয়ে থাকে। এদের অধিকাংশই রোগীদের অসংলগ্ন চিকিৎসা প্রদান করে এবং শোষণ করে।

বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দেশে আধুনিক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা সুবিধাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য কোন উন্নত কেন্দ্র নেই। তদান্তীন ব্রিটিশ ভারতের জারিকৃত লিউন্যাসি আইন ১৯১২ এখনও এদেশে বলবৎ রয়েছে।

মানসিক বিষণ্ণতা (Mental depression) ভাব এবং আবেগের পরিবর্তন, যখন তা প্রকাশ পায় দুঃখ বোধ, নিষ্ক্রিয় ভাব এবং জীবনকে উপভোগ করার সামর্থ্য হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণ দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা মানব জীবনেরই অংশ। প্রিয় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্ত হারিয়ে গেলে যথার্থ আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তা প্রকাশ পায়। দুঃখ বোধ বা বিষাদময়তা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তখন তা বিষণ্ণতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

বিষণ্ণতা নানা মাত্রায় হতে পারে। এটি হতে পারে তীব্র (acute) অথবা দীর্ঘমেয়াদী (chronic)। ধরন হতে পারে unipolar অথবা bipolar। ইউনিপোলার বিষণ্ণতায় রোগী এক বা একাধিক বড় ধরনের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়া ছাড়াই। বাইপোলার বিষণ্ণতায় রোগী একবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, আরেকবার ম্যানিয়ায়। এই দুধরনের বিষণ্ণতাকে অন্তর্জাত (এন্ডোজেনাস) বিষণ্ণতাও বলা হয় এবং এদের প্রত্যেকের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

মানসিক বিষণ্ণতা বাংলাদেশে খুবই সাধারণ। ঢাকার নিকটবর্তী একটি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার প্রায় ২.৯% লোক বিষণ্ণতায় ভুগছে। আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর এক হাসপাতালে মনোরোগ বহির্বিভাগে আগত রোগীদের এক তৃতীয়াংশ রোগীই সাধারণভাবে বিষণ্ণতার শিকার। সাধারণত ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সের মধ্যে বিষণ্ণতার হার বেশি দেখা যায়। বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা বা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্ণতার প্রকোপ অত্যধিক। বাংলাদেশে মহিলাদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি। আক্রান্ত মহিলাদের অধিকাংশই গৃহকর্ত্রী।

বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি শুধুমাত্র আবেগসংশ্লিষ্ট মানসিক অশান্তিতেই ভোগে না, বরং উদ্বুদ্ধকরণ, চিন্তা-ভাবনা, শারীরিক এবং সাধারণ চলাফেরাতেও তা প্রকাশ পায়। একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত নিচে উল্লিখিত এক বা একাধিক উপসর্গে ভুগতে পারে। এগুলি হলো- বিষাদময় অনুভূতি, হতাশা বা সবকিছু অর্থহীন ভাবা, অপরাধবোধ, দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, নিদ্রাহীনতা, চলার গতি ধীর হয়ে যাওয়া বা অস্থিরতা, শক্তি এবং উদ্যম কমে যাওয়া, ধীর গতিতে চিন্তা করা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং মৃত্যুচিন্তা বা আত্মহত্যার প্রবণতা। পশ্চিমা দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিষণ্ণতার উপসর্গসমূহ কিছুটা পৃথক। এগুলি সচরাচর বিষাদময় অনুভূতি এবং অপরাধ বোধের চেয়ে শারীরিক (Somatic) অভিযোগের আকারে প্রকাশিত হয়। নেতিবাচক সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, কুসংস্কার এবং মানসিক উপসর্গের গ্রহণযোগ্যতার অভাবে শারীরিক উপসর্গগুলি বেশিমাত্রায় প্রকটিত হয়। সারা শরীর জ্বলে যাওয়া অনুভব, ব্যথা এবং অন্যান্য অনুভূতি, যেমন- কোন কিছু চেপে বসা, মাথায় তাপ এবং মাথা ব্যথা, দ্রুত হূদস্পন্দন, ঘুমের ব্যাঘাত, যৌন ইচ্ছা বা ক্ষমতা কমে যাওয়া, আন্ত্রিক গোলযোগ ইত্যাদি বাংলাদেশে একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীর অতি সাধারণ শারীরিক উপসর্গ।

বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে বহুবিধ। যেমন- প্রিয়জনকে হারানো, শৈশবে প্রাপ্ত আঘাত এবং দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা। বিভিন্ন দেশে পরিচালিত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণতা কখনও কখনও বংশগতির ধারায় জিনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, বিশেষ করে বাইপোলার (Bipolar) বিষণ্ণতা।

কম মাত্রার নরএপিনেফরিন বিষণ্ণতা ডেকে আনে এবং কম মাত্রার সেরোটনিন অন্যান্য স্নায়ু পরিবাহীগুলির কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলা এনে দেয় এবং মানসিক বিষণ্ণতা ও ম্যানিয়া সৃষ্টি করে। এগুলি হচ্ছে বিষণ্ণতার প্রাণরাসায়নিক কারণ।

বাংলাদেশে বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসায় সাধারণভাবে এন্টিডিপ্রেসান্ট ওষুধ ব্যবহূত হয়। মনোরোগ চিকিৎসক এবং শিক্ষানবীশ মনোরোগ চিকিৎসকগণ মনোবৈকল্য দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি ব্যবহার করে থাকেন। মাঝারি মাত্রার বিষণ্ণতা রোগে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি কাউন্সেলিং বা পরামর্শ প্রদান যথেষ্ট উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। অতি তীব্র মাত্রার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসায় সুফল পাওয়া না গেলে এবং রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পশ্চিমা দেশগুলির ন্যায় বাংলাদেশেও শেষ ব্যবস্থা হিসেবে বৈদ্যুতিক শক্ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

মানসিক প্রতিবন্ধী (Mental retardation)  মস্তিষ্কের ত্রুটিপূর্ণ বিকাশের ফলে সৃষ্ট অবনমিত (subnormal) বুদ্ধিমত্তা। এতে শৈশবকাল থেকেই বুদ্ধিমত্তার অভাব, বেড়ে ওঠার সময়কালে স্বল্প ও মন্থর মানসিক বিকাশ, খর্বিত শিক্ষণক্ষমতা এবং দুর্বল আচরণগত ও সামাজিক অভিযোজ্যতা দেখা দিতে থাকে। এটি একটি স্থায়ী প্রতিবন্ধিতা, কিন্তু কোন রোগ নয়। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা অত্যন্ত দুর্বল এবং বিচার-বিবেচনার ক্ষমতাও বিকশিত হয় না।

বুদ্ধিগত ঘাটতির মাত্রানুসারে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের চারটি দলে ভাগ করা যায়: মৃদু, মাঝারি, মারাত্মক ও সার্বিক। উপস্থাপনা, নিদানতত্ত্ব, সংশ্লিষ্ট ধরন, প্রকোপ, ব্যবস্থাপনা ও ফলাফল দ্বারা প্রতিবন্ধীদের পরস্পর থেকে পৃথক করা যায়। বুদ্ধিগত দক্ষতা সাধারণত একটি প্রমিত বুদ্ধিপরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ্য। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর IQ ৭০ থেকে কম হয়ে থাকে এবং সে দৈনন্দিন কাজকর্ম সঠিকভাবে চালাতে পারে না। মৃদু প্রতিবন্ধীদের IQ ৫০-৭০। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক শিশুদের থেকে সব সময় মৃদু প্রতিবন্ধী শিশুকে পৃথক করা যায় না। মাঝারি ও মারাত্মক প্রতিবন্ধীদের IQ যথাক্রমে ২০-৪৯ এবং ২০-৩০ হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধীর IQ থাকে ২০ থেকেও কম। মারাত্মক ও সার্বিক প্রতিবন্ধীঅনেক শিশুরই মোটর স্নায়ু ও সংজ্ঞাবহ স্নায়ু অত্যন্ত দুর্বল থাকে।

বাংলাদেশে মানসিক প্রতিবন্ধী সম্পর্কে আগ্রহ অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। ১৯৬৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর মানসিক প্রতিবন্ধীগ্রস্ত শিশুদের পিতামাতারা একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ১৯৮০ সালের ২২ জুন ঢাকায় মানসিক প্রতিবন্ধীদের ওপর প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে মানসিক প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা কমবেশি সমান। বাংলাদেশে শৈশবকালীন অক্ষমতা সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকরোগ গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে মারাত্মক ও মৃদু মানসিক প্রতিবন্ধীর হার যথাক্রমে ৫.৯৩ ও ৪.৪৫। বিদ্যমান মারাত্মক মৃদু প্রতিবন্ধীর হার ছেলেদের (৫.০৮) তুলনায় মেয়েদের (৬.৯৪) মধ্যে বেশি। সব ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা ও অক্ষমতা গ্রামাঞ্চলের (৫.৮৪) তুলনায় শহর অঞ্চলে (৬.০৩) অধিক। মৃদু মানসিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে নিম্ন-পর্যায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সংশ্লিষ্ট থাকলেও মারাত্মক মানসিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে নয়। মৃদু মানসিক প্রতিবন্ধীরা বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সরল সামাজিক পরিবেশে সহজেই খাপখাওয়াতে পারে বলে এদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অধিকন্তু, বাংলাদেশের শিক্ষার মানও পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় নিম্ন স্তরের।

বাংলাদেশে মানসিক প্রতিবন্ধীর কারণ নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন, কেননা জন্মনিবন্ধীকরণ এখানে সুসংগঠিত নয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যগত তথ্যাদিও নির্ভুলভাবে রেকর্ড করা হয় না। তবুও বাংলাদেশে মানসিক প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণের জন্য ওয়েসলার ইনটেলিজেন্স স্কেল ফর চিলড্রেন (WISC) এবং ডেনভার ডেভেলপমেন্ট স্ক্রিনিং টেস্ট (DDST) অনূদিত ও প্রমিতকৃত হয়েছে।

মানসিক প্রতিবন্ধীর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ আছে যেগুলি জন্মের পূর্বে, জন্মের মুহূর্তে এবং জন্মের পরে ঘটতে পারে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের শিশুদের ওপর গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে বংশানুসৃত উপাত্ত, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি ও দীর্ঘকালীন প্রসব অবস্থা মানসিক প্রতিবন্ধীর কয়েকটি প্রধান কারণ। দেশের গ্রামাঞ্চলে পরিচালিত অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, শিশুদের মধ্যে মানসিক বৈকল্যের পরিসর অপুষ্টি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। প্রসবপূর্ব বিপদ, শিশুর ক্ষুদ্র বা অপরিণত আকার এবং প্রসব পরবর্তী জটিলতা ইত্যাদি শিশুর গুরুতর মানসিক বৈকল্যের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রসবকালীন অক্সিজেন স্বল্পতা এবং প্রসবকালীন আঘাতে মস্তিকের ক্ষতি পরবর্তীকালে শিশুর মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ঘটায়।

দেশে মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সোসাইটি ফর দ্য কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন অব মেন্টালি রিটার্ডেড চিলড্রেন বাংলাদেশ (SCEMRCB) মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করে। বর্তমানে গোটা বাংলাদেশে এই সংস্থার ২১টি শাখা রয়েছে। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর দ্য মেনটালি রিটার্ডেড (BIMR) এসব শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং আচরণগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে গঠিত বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পিতামাতাকে পরামর্শ, সেবা ও প্রশিক্ষণ দেয়।

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia)  উদ্ভট চিন্তা, ভগ্নমনস্কতা, সামঞ্জস্যহীন আচরণ এবং আবেগ প্রবণতা ও বু্দ্ধিমত্তার অবনতি, এমন উপসর্গ প্রদর্শনকারী এক ধরনের মনোবিকার। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয়ে ভর্তিকৃত অধিকাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এক হিসাবে দেখা গেছে এদেশে প্রায় তেরো লক্ষ লোক (বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ) এই রোগে ভুগছে। যৌবনের প্রারম্ভে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়েই সাধারণত এ বৈকল্য দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সেই সিজোফ্রেনিয়া দেখা দিতে পারে। তথাপি প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ ঘটে ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা এ রোগ নিরাময়ে সাধারণত অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ (Antipsychotic drugs) ব্যবহার করে থাকেন। তবে চিকিৎসার জন্য তাঁরা প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি প্রয়োগ করেন।  [রোকেয়া বেগম]

আরও দেখুন মানসিক হাসপাতাল