মাধবকর
মাধবকর (আনু. ৭ম-৮ম শতক) সংস্কৃত পন্ডিত ও আয়ুর্বেদশাস্ত্রকার। শুধু মাধব নামেও তিনি পরিচিত। তাঁর পিতা ইন্দুকরও ছিলেন একজন পন্ডিত। মাধবের বাঙালিত্ব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশের মতে তিনি বাঙালিই ছিলেন এবং বঙ্গদেশের বৈদ্যকসমাজে তাঁর খুবই প্রসিদ্ধি ছিল। তাঁর রুগ্বিনিশ্চয় গ্রন্থটি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে অধীত হতো এবং পর্যায়রত্নমালা নামক গ্রন্থে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত অনেক শব্দ ব্যবহূত হয়েছে।
মাধব চিকিৎসা বিষয়ে বেশ কয়েকখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং সেগুলি প্রাচীন বাংলার চিকিৎসায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তাঁর রুগ্বিনিশ্চয় গ্রন্থখানি সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। এটি গদবিনিশ্চয় বা নিদান নামেও পরিচিত। এর বিষয়বস্ত্ত রোগনির্ণয়, রোগের চিকিৎসা নয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে এ গ্রন্থখানি রচিত হয়েছে। এর ব্যবহার বাংলার বাইরেও প্রসারিত হয়েছিল। কাশ্মীরে গ্রন্থখানি প্রচলিত ছিল এবং বাংলার বাইরে এর অনেক টীকাগ্রন্থ রচিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, খ্রিস্টীয় আট শতকের শেষভাগ থেকে নয় শতকের প্রথমভাগে কোনো এক সময় এটি আরবি ভাষায় অনূদিত হয়।
মাধবের আরেকটি গ্রন্থের নাম চিকিৎসা। এতে চিকিৎসা বিষয়ক আলোচনা স্থান পেয়েছে। খাদ্যাখাদ্য বিষয়ক তাঁর অপর একখানি গ্রন্থ হচ্ছে কূটমুদ্গর। রসকৌমুদী গ্রন্থে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর পর্যায়রত্নমালা গ্রন্থটি আয়ুর্বেদশাস্ত্রের একটি পরিভাষাকোষ। এছাড়াও দ্রব্যগুণ, আয়ুর্বেদরসশাস্ত্র, ভাবস্বভাব, মুগ্ধবোধ প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁর রচিত বলে মনে করা হয়। [দুলাল ভৌমিক]