মাদারীপুর জেলা

মাদারীপুর জেলা (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন: ১০৪৯.৫৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০০´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৬´ থেকে ৯০°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জেলা, পূর্বে শরিয়তপুর জেলা, পশ্চিমে ফরিদপুর জেলা।

জনসংখ্যা ১০৯৪৪৫৮; পুরুষ ৫৩৮৫৮১, মহিলা ৫৫৫৮৭৭। মুসলিম ৯৭২১২৬, হিন্দু ১২১৪১৮, বৌদ্ধ ৩৬, খ্রিস্টান ৮৫২ এবং অন্যান্য ২৬।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, ঘাঘর নদী ও কুমার। মাদারীপুর বিলরুট ক্যানাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বাকেরগঞ্জ জেলার অধীনে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৮৭৩ সালে মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফরিদপুর জেলার অধীন করা হয়। ১৯৮৪ সালে এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে শিবচর সর্ববৃহৎ (৩৩২.৯০ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা কালকিনি (২০৪.২৮ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১০৪৯.৫৯ ৫৪ ৪১৬ ১০০৬ ১৫৭৮১০ ৯৩৬৬৪৮ ১০৪৩ ৪৮.০
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মহল্লা ও মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কালকিনি ২০৪.২৮ ৭৩ ১১৫ ২০১৭৬৪ ৯৮৮ ৪৬.৩
মাদারীপুর সদর ২৮৩.১৪ ১৫ ১৪৭ ১৮৫ ৩৪৫৭৬৪ ১২২১ ৫১.১
রাজৈর ২২৯.২৭ - ১১ ৯৫ ১৮৭ ২২৮৭১০ ৯৯৮ ৪৮.২
শিবচর ৩৩২.৯০ ১৯ ১০১ ৫১৯ ৩১৮২২০ ৯৫৬ ৪৩.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকবাহিনী সাবজেলার আবদুর রশীদ খানকে সপরিবারে হত্যা করে। রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গ্রামের ৫০ জন গ্রামবাসীকে পাকবাহিনী হত্যা করে। ৮-১০ ডিসেম্বর খলিল বাহিনী মেজর ও ক্যাপ্টেনসহ মোট ৪০ জন পাকসেনাকে বন্দি করে। এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর এই জেলা শত্রুমুক্ত হয়। জেলার ৩টি স্থানে (কলাগাছিয়া, বাহাদুরপুর, মিঠাপুরে) গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.০%; পুরুষ ৫০.১%, মহিলা ৪৫.৯%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজ (১৯৪৮), সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজ (১৯৬৪), রাজৈর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), সাহেবরামপুর কবি নজরুল ইসলাম কলেজ (১৯৭২), কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ (১৯৭২), শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭৩), চরমুগুরিয়া কলেজ (১৯৭৮), সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজ (১৯৮৪), রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজ (১৯৮৫), সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ (১৯৮৯), কমবাড়ি ইউনিয়ন কলেজ (১৯৯০), উৎরাইল হাই স্কুল, চরমুগুরিয়া মার্চেন্টস হাই স্কুল (১৯৩১), ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), মিঠাপুর এল.এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), পাঁচ্চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), রাজৈর-গোপালগঞ্জ কাপালি যুবসংঘ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), আর.এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), মাদবরেরচর আর.এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), ইশিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), কদমবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), শশিকর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), কালকিনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), সাহেবরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), মুন্সি কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি হাইস্কুল (১৯৫০), টেকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), ভান্ডারীকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৩), তাঁতীবাড়ি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), কাঁঠালবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), আড়ুয়াকান্দি নটাখোলা বড়খোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউিশন (১৯০০), শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন (১৯১০), মাদারীপুর পাবলিক ইনস্টিটিউশন (১৯৫৩), রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউিশন (১৯০২), রাজৈর কে.জে.এস.এস মডেল ইনস্টিটিউিশন, ভদ্রাসন জি.সি একাডেমী (১৯১৮), ডিকে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমী (১৯৯৫), চরণাচনা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১২)।

পত্রপত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: সুবর্ণগ্রাম (১৯৯৮), প্রান্ত (২০০১), মাদারীপুর নিউজ (২০০৬), বিশ্লেষণ (২০০৯)। সাপ্তাহিক: সুপ্রভাত (১৯৯১), শাহ মাদার (১৯৯৩), শরীয়তউল্লাহ (১৯৯৬), আজকাল (১৯৯৯), গণসচেতনতা (২০০৬), সুবার্তা (২০০৭)। মাসিক: যুগচেতনা (১৯৯১), পোস্টার (১৯৯১), শান্তি সাময়িকী (১৯৯২), জাবল-ই-নূর (২০০৫); সাহিত্য পত্রিকা: সন্দীপন, কিশলয়, বৈশাখী, ক্যানভাস, বর্ণমালা, নবপ্রভাত; অবলুপ্ত: দৈনিক দিগন্ত (১৯৬০), সাপ্তাহিক জননী বাংলা (১৯৭২), কিশলয় (১৯৮৪), সাপ্তাহিক মাদারীপুর বার্তা (১৯৮৬), সাপ্তাহিক আড়িয়াল খাঁ (১৯৮৯), পাক্ষিক বালারঞ্জিকা (১৮৬৩)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৩৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৯%, শিল্প ০.৮৪%, ব্যবসা ১৫.৪৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৭%, নির্মাণ ১.৭১%, ধর্মীয় সেবা ০.২%, চাকরি ৭.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৭% এবং অন্যান্য ৭.৪৮%।

লোকসংস্কৃতি এ জেলায় গাজীর গান, কীর্তন, ধুয়াগান এবং ত্রিনাথের মেলা, সংক্রান্তি মেলা, রথ মেলা, গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা প্রভৃতির প্রচলন রয়েছে। এছাড়া জেলার মতুয়া সম্প্রদায় (রাজৈর) দুর্গাপূজায় মতুয়া সঙ্গীতের আয়োজন করে।

দর্শনীয় স্থান বা বিনোদন কেন্দ্র হযরত শাহ মাদারের দরগাহ, আউলিয়াপুর নীলকুঠি, চরমুগুরিয়া বন্দর ও বানর বিচরণ কেন্দ্র, পর্বতের বাগান,  আলগী কাজীবাড়ি মসজিদ, ঝাউদি গিরি, শকুনি লেক (মাদারীপুর সদর), রাজা রাম মন্দির, প্রণব মঠ, খালিয়া শান্তিকেন্দ্র, অন্নপূর্ণা মন্দির, গণেশ পাগলের মন্দির (রাজৈর), সেনাপতির দিঘি (কালকিনি), হাজী শরীয়তুল্লাহর মাযার, রাজা বসুর দুর্গামন্দির (শিবচর)।  [শহীদুল হক]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মাদারীপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; মাদারীপুর জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।