মাদারগঞ্জ উপজেলা

মাদারগঞ্জ উপজেলা (জামালপুর জেলা)  আয়তন: ২২৫.৩৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৭´ থেকে ২৪°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪০´ থেকে ৮৯°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলা, দক্ষিণে সরিষাবাড়ী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে মেলান্দহ ও জামালপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে সারিয়াকান্দি উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৩৬০৮; পুরুষ ১৩০৩৩৯, মহিলা ১৩৩২৬৯। মুসলিম ২৫৯০৯০, হিন্দু ৪৪৮১, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ২৬।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা, ঝিনাই, চাতাল। চিড়াধনা বিল ও খরকা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মাদারগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০৪ ১১৯ ৩৩১৬৯ ২৩০৪৩৯ ১১৭০ ৩৯.১ ৩২.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৭৮ ২২ ৩৩১৬৯ ৩০৭৭ ৩৯.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আদারভিটা ১১ ৭১৭০ ১৯৫৪৬ ১৯৮২৩ ৩৬.০
কড়ইচড়া ৭১ ৭৫৩৮ ১৭৩৩৫ ১৮৩৪২ ৩১.৯
গুনারিতলা ৪৭ ৭৫০৫ ১৮৪৩১ ১৯০৮৩ ৩৪.৩
চর পাকেরদহ ৩৫ ৮১৮২ ১৮৪৩৫ ১৮৯১৮ ৩১.৩
জোরখালী ৫৯ ১০৫১৬ ১৬৫৭২ ১৬১২৯ ২৮.২
বালিজুড়ি ২৩ ৭৪৯৩ ১২৩২৬ ১২২৩৪ ২৫.৬
সিধুলি ৮৩ ৪৬২৫ ১১৫০৬ ১১৭৫৯ ৩৫.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, তারতাপাড়া নীলকুঠি (বিলুপ্তপ্রায়)।

মুক্তিযুদ্ধ মাদারগঞ্জ উপজেলার পয়লা গ্রাম ও বাউশি ব্রিজে দু’টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পয়লা গ্রামের যুদ্ধে ৩২ জন পাকসেনা নিহত হয়। বাউশি ব্রিজের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তেমন সুবিধা করতে পারেনি এবং এখানে তারা পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করে। উপজেলার ৭টি স্থানে (কোয়ালীকান্দি, তেঘরিয়া বাজার, জোনাইল, চরগোলাবাড়ী, চরভাটিয়া, কলুর পাট্টা, চরবৌলা) গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন মাদারগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৮৭, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.০%; পুরুষ ৩৫.৮%, মহিলা ৩০.৪%। কলেজ ৬, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬০, এনজিও স্কুল ২, মাদ্রাসা ৩৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাদারগঞ্জ এ.এইচ.জেড সরকারি কলেজ (১৯৬৮), নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), ঝাড়কাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বালিজুড়ি এফ. এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), বালিজুড়ি রওশন আরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), জোনাইল নয়াপাড়া ফাতেমা খান মামুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক পল্লীবাণী (অনিয়মিত), সাহিত্য পত্রিকা: ভেলা, ঊষা, উন্মেষ; অবলুপ্ত: মাসিক মাদারগঞ্জ, মাসিক দৃষ্টিপাত, পল্লীর কাগজ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩২, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ২৬।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭১.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৩%, শিল্প ০.৪%, ব্যবসা ১১.৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৮%, চাকরি ৩.৯৮%, নির্মাণ ১.০২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৯% এবং অন্যান্য ৭.৩৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৩.০৯% এবং ভূমিহীন ৩৬.৯১%। শহরে ৪৭.২৪% এবং গ্রামে ৬৫.৪১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা, আখ, মিষ্টি আলু, মসুর, ছোলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, রসুন, সূর্যমুখী, মাষকলাই, যব, ঢেড়শ, হলুদ, আদা, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, চীনাবাদাম, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, কাঁঠাল, কলা, ফুটি, তরমুজ।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৩৯কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি, সোয়ারি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, তেলকল, চিড়াকল, চানাচুর ফ্যাক্টরি, বেকারি, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প।

হাটবাজার  ও মেলা  হাটবাজার ২২, মেলা ৮। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: বালিজুড়ি হাট, শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ি হাট, জোনাইল হাট ও মহিষবাথান বাজার, তেঘরিয়া বাজার, বাজিতেরপাড়া বাজার, পাটাদহ বাজার, বিনোদটঙ্গী বাজার এবং বালিজুড়ি দুর্গাপূজা মেলা, তেঘরিয়া ঈদ মেলা, মহিষবাথান ঈদ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, সরিষা, ছোলা, মাষকলাই, আদা, শাকসবজি, মিষ্টি আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূিচর আওতাধীন। তবে ২৩.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৩%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৭.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার। [সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো;  মাদারগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।