মাঝি
মাঝি পেশাগতভাবে দেশীয় নৌযান চালনা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাঝিরা নৌকা চালান খাল, বিল, নদী, নালা, ঝিল ও হাওর-বাঁওড়ে। অসংখ্য নদীনালাবেষ্টিত বাংলাদেশে নদীপথে নৌকাই অনেক ক্ষেত্রে যোগাযোগের অন্যতম বাহন। নৌকা বেয়ে চলা যাদের পেশা তারা অঞ্চলভেদে এক এক নামে পরিচিত, যেমন মাল্লা, নাওয়া, নৌকাজীবী, নৌকাচালক, কান্ডারি, পাটনি, কর্ণক ইত্যাদি। তাদের কাজের ধরন, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। যাত্রী বহন করা এবং মালামাল পরিবহণের জন্য বিভিন্ন ধরনের নৌকা আছে। যাত্রীবাহী নৌকা ছোটও হয়, আবার বড় আকারেরও হয়। ছোট আকারের নৌকায় সাধারণত একজন মাঝি থাকে। বড় আকারের নৌকায় দুইজন মাঝি থাকে। মালবাহী নৌকা সাধারণত বড় করা হয় এবং বাধ্যতামূলকভাবে দুইজন বা আরও বেশি মাঝি থাকে। আগেকার দিনে ধনী পরিবারগুলির আনন্দবিহারে যাওয়ার প্রমোদতরীর জন্য স্থায়িভাবে একজন করে মাঝি থাকত।
যদিও নৌকা চালানো মাঝিদের মূল কাজ তথাপি নিকটবর্তী নদীনালা থেকে মাছ ধরার কাজেও তারা অনীহ নয়। বরং মাছ ধরা তাদের জীবিকা নির্বাহের দ্বিতীয় পন্থা। মাছ ধরার কাজে ব্যবহূত নৌকাগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যথা জেলেডিঙ্গি, ডিঙ্গি, পানশি, গয়না, ঘাসি ইত্যাদি। সাধারণত এই নৌকাগুলি হয় দাঁড়বিশিষ্ট। মাঝি দাঁড় বেয়ে চলে অথবা অন্য কেউ দাঁড় বা বৈঠা ধরলে মাঝি নিজেই তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়। অনুকূল হাওয়ার সুবিধা নেওয়ার জন্য নৌকাগুলিতে প্রায়শ পাল তোলা হয়। আর মধ্যে মধ্যে সুবিধার্থে গুন টানা হয়। বড় বড় নৌকাগুলিতে থাকে মাস্ত্তল আর নোঙর। ছোট ছোট নৌকাগুলি স্থির হয়ে থাকার জন্য খুঁটা গেঁড়ে নদীর ধারে নোঙর করে।
আজকাল দূরবর্তী যাত্রার জন্যে স্টিমার এবং বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের নৌকাই যাত্রীবাহী নৌকা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। দ্রুতগতিতে অধিক যাত্রী বহন করার জন্য মোটরইঞ্জিন চালিত নৌকাও ব্যবহূত হয়। দাঁড়টানা মাঝিরা আজকাল নিজেদের পরিবর্তন করেছে ইঞ্জিনের নৌকার মাঝিরূপে। আবার অনেক মাঝিই মাঝিগিরি ছেড়ে নিজেকে কৃষিকাজ, মাছধরা ও ডুবুরির কাজে নিয়োজিত করছে। [এস.এম মাহফুজুর রহমান]