মাছনাশক রাসায়নিক
মাছনাশক রাসায়নিক (Piscicides) মাছ চাষের জন্য জলাশয়ের অবাঞ্ছিত মাছ প্রজাতি মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ব্যবহূত রাসায়নিক দ্রব্য। অতীতে মাছচাষীরা অবাঞ্ছিত মাছ নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করতো। এসব বিষের মধ্যে ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন ও অর্গ্যানোফসফরাস কীটনাশকগুলিও থাকত। অধিকাংশ কীটনাশকেরই অবিশিষ্টাংশ (residue) পরিবেশে দীর্ঘদিন থেকে যায়। তদুপরি এগুলি শুধু লক্ষ্যভূত মাছই মারে না, উপকারী অন্যান্য জলজ প্রাণীও ধ্বংস করে। কিছু অ্যালকালয়ড (উদ্ভিজ্জ) এখন পাওয়া গেছে, যেগুলি মাছের মৃত্যু ঘটাতে অধিক কার্যকর এবং জলীয় বাস্ত্ততন্ত্রের জন্য কম বিপজ্জনক।
অ্যান্টিবায়োটিক Antimycin-A মৎস্যবিষ হিসেবে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং মাছনাশক হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। অবশ্য, পুকুর থেকে অবাঞ্ছিত মাছ সরানোর জন্য উদ্ভিজ্জ মাছনাশক দ্রব্যাদি ব্যবহারই বাঞ্ছনীয়, কেননা এটি লক্ষ্য বর্হিভূত প্রাণীর জন্য অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর। Meliaceae, Rutaceae, Asteraceae, Labiatae ও Canellaceae গোত্রভুক্ত উদ্ভিদের মাছনাশক গুণ রয়েছে।
এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মাছচাষীরা রোটিনোন (rotinone) নামক উদ্ভিদ নির্যাসকে মাছনাশক দ্রব্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। সাধারণত Leguminoceae গোত্রের ৬৮ প্রজাতিতে রোটিনোন রয়েছে। Derris গণের দুই প্রজাতি ও Lonchocarpus গণের কতিপয় প্রজাতিতে যথাক্রমে ৫-৯% ও ৮-১১% রোটিনোন থাকে। শিকারি ও ক্ষতিকর মাছ মারার উচ্চ ক্ষমতা রোটিনোনের আছে। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা অগভীর পানিতে মাছ ধরার জন্য Derris প্রজাতির মূল ব্যবহার করে।
Solanaceae গোত্রের কতকগুলি প্রজাতির উদ্ভিদে নিকোটিন ও নিকোটিনজাতীয় পদার্থ থাকে এবং Nicotiana গণভুক্ত উদ্ভিদের নিশ্চিতই মৎস্যনাশক শক্তি আছে। নিকোটিন বস্ত্তত রোটিনোন থেকে অধিক কার্যকর, কেননা এটি পানিতে সর্বত্র সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে, প্লাঙ্কটোনের কোন ক্ষতি করে না, পানি থেকে দ্রুত অপসারিত হয়। নিকোটিনের নির্যাস শিকারি ও অবাঞ্ছিত মাছের আংশিক বা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার্য।
স্থানীয়ভাবে লভ্য মাছের দেহে বিষক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতাধর উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে মাওরাগুটা (Derris scandens), তুবামূলা (Derris elliptica), কলকে (Thevetia peruviana), বাতুল (Sapium indicum), বননীল (Teprosia purpurea), নাগেশ্বর (Mesua nagassarium), হিজল (Barringtonia acutangula), নীম (Azadirachta indica), কড়ই (Albizia procera), মেহগিনি (Swietneia mahagoni), খয়ের (Acacia catechu), চা (Camellia sinensis) ইত্যাদি। [আবদুল মালেক ভূঁইয়া]