মাঘী পূর্ণিমা
মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি ধর্মীয় উৎসব। এদিন বুদ্ধদেব তাঁর পরিনির্বাণের কথা ঘোষণা করেন। কথিত আছে যে, বুদ্ধের এরূপ সংকল্প গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ ভীষণ ভূকম্পন শুরু হয়। ভিক্ষুসংঘ এর কারণ জানতে চাইলে বুদ্ধ বলেন, তাঁর পরিনির্বাণের সঙ্কল্পের কারণেই এরূপ হয়েছে; অর্থাৎ তথাগতের জন্ম, মৃত্যু ও বুদ্ধত্ব লাভকালে জগৎ এমনিভাবে আলোড়িত হয়।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের কথা শুনে উপস্থিত ভিক্ষুরা বিষণ্ণ ও শোকাভিভূত হলে বুদ্ধ তাঁদের বলেন, ‘মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, এজন্য দুঃখ করা অনুচিত। তোমরা সংকল্পবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত হয়ে ধর্মচর্চা কর, তবেই জন্ম-জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর এই সংসার উত্তীর্ণ হয়ে দুঃখকে জয় করতে পারবে।’ অর্থাৎ এই দিনটির তাৎপর্য হলো, আত্মশক্তির উন্নয়ন এবং সকল প্রকার ক্লেশ বিনাশপূর্বক কল্যাণময় নির্বাণ লাভের সামর্থ্য অর্জন। এ দিনটির আরও একটি শিক্ষা হলো, মানুষ যদি আধ্যাত্মিক সাধনায় পূর্ণতা লাভ করে তাহলে সে নিজের জীবন-মৃত্যুকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
এদিন প্রতিটি বিহারে বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান, প্রদীপপূজা, অনিত্যভাবনা ও ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। দিনটি বৌদ্ধসম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ জনপদে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রাম ও বিহারগুলিতে মেলার আয়োজন করা হয়। এরূপ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মেলা হলো ঠেগরপুনি গ্রামের বুড়া গোঁসাই মেলা (পটিয়া), বিনাজুরি গ্রামের পরিনির্বাণ মেলা (রাউজান), লাটিছড়ি গ্রামের বুদ্ধ মেলা (রাউজান), আবদুল্লাহপুর গ্রামের শাক্যমুনী মেলা (হাটহাজারি), আর্যমিত্র মহাপরিনির্বাণ মেলা (রাউজান) প্রভৃতি। [সুকোমল বড়ুয়া]