মাইজভান্ডারি গান
মাইজভান্ডারি গান মাইজভান্ডারি তরিকার অনুসারীদের গীত মরমি গান। প্রায় একশ বছর আগে চট্টগ্রামে মাইজভান্ডারি তরিকার উদ্ভব ঘটে। সৈয়দ আহমদউল্লাহ (১৮২৬-১৯০৬) এ ধারার প্রবর্তক। এটি একটি আধ্যাত্মিক সাধনার ধারা।
আহমদউল্লাহ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার মাইজভান্ডার গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ইসলামের প্রতি আস্থা রেখেই মারিফত ধারায় জিকির ও হালকা রীতিতে ধ্যান করতেন। তাঁর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য ও মানবিক উদারতায় আকৃষ্ট হয়ে ভক্তরা মাইজভান্ডারে একত্র হয়ে জিকিরাদিতে অংশগ্রহণ ও দোয়া-দরুদ পাঠ করত। মাইজভান্ডারি তরিকার ধর্মসাধনার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক গানেরও চর্চা হতো এবং মাইজভান্ডার গ্রামের নামানুসারে এর নাম হয় মাইজভান্ডারি গান। মাইজভান্ডারি গান মূলত আল্লাহ, নবী, অলি-আউলিয়া, গদিনশিন পীরগণের মাহাত্ম্য ও প্রশস্তিমূলক আধ্যাত্মিক গান। ভক্তরা এরূপ গান গেয়ে ধর্মপিপাসা ও আত্মশুদ্ধি সাধন করে।
অদ্যাবধি শতাধিক ভক্তকবি সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন। গানগুলির কিছু কিছু সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয়েছে, বাকিগুলি হারিয়ে গেছে। চট্টগ্রামের কবিয়াল রমেশ শীল মাইজভান্ডারি গান রচনা করে ও গেয়ে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর রচিত ‘গাউসুল আজম মাইজভান্ডারি স্কুল খুইলাছে’, ‘ওকি চমৎকার ভান্ডারে এক আজব কারবার’, ‘তুমি দমের কলে পুতুল নাচাও চিনতে পারি না’, ‘আমার প্রাণে খোঁজে মাইজভান্ডার’ ইত্যাদি গান ভাব ও সুরে এ ধারার মর্ম ও গভীরতাকে স্পর্শ করেছে। ভান্ডারে মওলা, শান্তি ভান্ডার ও আশেকমালা নামে তাঁর তিনখানি গানের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।
রমেশ শীল ছাড়াও আবদুল হাদি, আবদুল গনি, বজলুল করিম, আবদুল্লাহ, মাহবুব-উল আলম প্রমুখ মাইজভান্ডারি গান রচনা করে সুনাম অর্জন করেন। ঐশীপ্রেম, মানবপ্রীতি, নৈতিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতা এ গানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এর ভাব, ভাষা ও সুর নির্মল ভক্তিরসের সঞ্চার করে। রচয়িতার ভণিতা থাকলেও বাউল গানের অনুরূপ এ গান মেজাজে ও আঙ্গিকে লোকসঙ্গীতের শ্রেণীভুক্ত।
মাইজভান্ডারি গান একটি জীবন্ত ধারা। দেশের নানা স্থানে এ গান প্রসার লাভ করেছে এবং ভক্তের কণ্ঠ ছেড়ে তা সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রেডিও-টেলিভিশনেও প্রচারিত হচ্ছে; এমনকি ক্যাসেটের মাধ্যমেও তা প্রচারিত হচ্ছে। [ওয়াকিল আহমদ]