মাইক্রোবায়োম

মাইক্রোবায়োম (Microbiome) আমাদের শরীর সাহায্যকারী এবং ক্ষতিকারক জীবাণুর আশ্রয়স্থল। সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে বসবাসকারী জীবাণুদের সম্পূর্ণ সংগ্রহশালাকে মাইক্রোবায়োটা বলা হয়। মানুষের মধ্যে নিজের কোষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি সংখ্যক জীবাণু থাকে। মানুষের মাইক্রোবায়োটা ১০-১০০ ট্রিলিয়ন সিম্বাওটিক জীবাণু নিয়ে গঠিত যাদের বেশিরভাগই অন্ত্রে পাওয়া যায়। মাইক্রোবায়োটাতে উপস্থিত জিনোমগুলি মাইক্রোবায়োম নামে পরিচিত যা মানুষের জিনোমের চেয়ে জটিল। মানব দেহের উন্নয়ন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টির জন্য মাইক্রোবায়োম গুরুত্বপূর্ণ। মাইক্রোবায়োম আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ সৃষ্টিকারী অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে এবং ভিটামিন বি ১২, থায়ামিন এবং রিবোফ্লাভিন এবং ভিটামিন কে তৈরি করে।

মাইক্রোবায়োম সংক্রামক রোগের সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় যেমন ক্রোন ডিজিজ এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম-এ অবদান রাখে। জীবাণু স¤প্রদায়ের উপস্থিতি নির্ধারণ করে একজন ব্যক্তি কিভাবে ওষুধের চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া দেখায় । মায়ের মাইক্রোবায়োটার প্রকৃতির কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হতে পারে। চর্বিহীন এবং স্থূল যমজদের অন্ত্রে মাইক্রোবায়োমের স¤প্রদায়ের বৈচিত্র্যে ভিন্নতা থাকে। স্থূল যমজদের মধ্যে মাইক্রোবায়োমের বৈচিত্র্য কম দেখা যায় কিন্তু বেশি পরিমাণে উৎসেচক (এনজাইম) থাকে যা খাদ্য হজম করার এবং শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের কম বৈচিত্র্য টাইপ-১ ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির সাথে যুক্ত বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। মানব মাইক্রোবায়োমে জীবাণুর বৈচিত্র্যের আরও ব্যাপক ধারণা নতুন থেরাপির সুযোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি মাথায় রেখে, ‘হিউম্যান মাইক্রোবায়োম প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত বিশ্বব্যাপী গবেষণা উদ্যোগগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ দ্বারা স্পন্সর করা মানব মাইক্রোবায়োম ম্যাপ করছে। [এ.এইচ.এম নুরুন নবী]