মহাদেবপুর উপজেলা

মহাদেবপুর উপজেলা (নওগাঁ জেলা)  আয়তন: ৩৯৭.৬৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৮´ থেকে ২৫°০১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৮´ থেকে ৮৮°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পত্নীতলা উপজেলা, দক্ষিণে মান্দা ও নওগাঁ সদর উপজেলা, পূর্বে বদলগাছী এবং নওগাঁ সদর উপজেলা, পশ্চিমে নিয়ামতপুর এবং পোরশা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯২৮৫৯; পুরুষ ১৪৬৯০৫, মহিলা ১৪৫৯৫৪। মুসলিম ২৩৩১৮৩, হিন্দু ৫২৫৭১, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ৪১৭ এবং অন্যান্য ৬৬৮৫।

জলাশয় প্রধান নদী: আত্রাই, শিব।

প্রশাসন মহাদেবপুর থানা গঠিত হয় ১৮৯৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ৩০৬ ৩০১ ১৫৬২৬ ২৭৭২৩৩ ৭৩৬ ৬৯.৮ ৪৮.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.২৬ ১৫৬২৬ ২১৫২ ৬৯.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর গ্রাম ৪৫ ৭৪৪৪ ১৪৬১৫ ১৪৬২৪ ৪৮.৮
এনায়েতপুর ৩৮ ১১৪০৯ ১৪৭৮৮ ১৪৯৫৭ ৪৮.২
খাজুর ৫৭ ১০৯৭২ ১৫৯২৪ ১৫৯৭৩ ৪৮.৫
চান্দাশ ১৯ ৭৮২৫ ১৩১২১ ১৩৩৯৭ ৫০.২
চেরাগপুর ২৮ ১০৩১১ ১২০০৪ ১১৯১৯ ৫০.৬
ভীমপুর ১৫ ৮২৭৫ ১৪০৮২ ১৩৭৬৭ ৪৮.০
মহাদেবপুর ৬৬ ৯৯৯৭ ২০৩৯০ ১৯৫৫৮ ৫৬.৮
রাইগাঁ ৭৬ ১০২৮৭ ১৫৮৯১ ১৫৪৩৮ ৪৬.৪
সাফাপুর ৮৫ ৮৩৯৮ ১২৬০১ ১২৭০৫ ৪৭.৬
হাতুড় ৪৭ ১২৮১৬ ১৩৪৮৯ ১৩৬১৬ ৫০.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ জমিদার সতীশ রায়চৌধুরীর বাড়ি (বর্তমানে সরকারি কলেজ ভবন), ১০৮ কক্ষবিশিষ্ট মাটির দ্বিতল বাড়ি, আদ্যবাড়ি মন্দির (খাজুর), রঘুনাথ জিউ মন্দির, খোসলাহারা দিঘি, আলতা দিঘি, ভীমসাগর, কানচকুড়ি।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তিযুদ্ধে এ এলাকায় পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় ১টি গণকবর ও ৩টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন মহাদেবপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৬০, মন্দির ১৩, তীর্থস্থান ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৮%; পুরুষ ৫২.৮%, মহিলা ৪৬.৮%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৮, কিন্ডার গার্টেন ৩, মাদ্রাসা ২৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মহাদেবপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৭), জিগাতলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), মহাদেবপুর সর্বমঙ্গল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় (১৯২১), জন্তিগ্রাম টিএ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), বাগডোব উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), চান্দাশ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), সরস্বতীপুর হাইস্কুল (১৯৪০), ধনজইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), কালুশহর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), জোয়ানপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৪), জাহাঙ্গীরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৩), হামিদপুর জিগাতলা উচ্চ বিদ্যালয়, জিগাতলা মাইনর স্কুল (১৯২৩), বাছরা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০০), এনায়েতপুর বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মহাদেবপুর সমাচার।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্রীড়া সংগঠন ৩২, ক্লাব ১৫, থিয়েটার গ্রুপ ১, মহিলা সংগঠন ২, যাত্রাপার্টি ১, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ৫৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৮.৬৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫২%, শিল্প ০.৮৬%, ব্যবসা ৮.০১১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯১%, চাকরি ২.৯৩%, নির্মাণ ০.৬%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৩.২৫%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মিষ্টি আলু, কাউন, যব, তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচু, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৫, গবাদিপশু ৮৫, হাঁস-মুরগি ৪০, হ্যাচারি ১১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪০ কিমি; নৌপথ ৩৭ কিমি। হ্যালিপ্যাড ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা অটোরাইসমিল ১, অয়েলমিল ১৩, ফ্লাওয়ারমিল ২৫, স’মিল ২৬, আইস ফ্যাক্টরি ৫, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ১, লজেন্স ফ্যাক্টরি ১, বিড়িফ্যাক্টরি ২, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৫, ইটভাটা ১৭।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৫৫০, লৌহশিল্প ৭৫, মৃৎশিল্প ৩২৫, তাঁতশিল্প ১২, দারুশিল্প ১৪০, সূচিশিল্প ৩৫০, বাঁশের কাজ ২৫০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৬, মেলা ১। মহাদেবপুর হাট, মাতাজী হাট, সতী হাট, পাঁটাকাটা হাট, স্বরস্বতীপুর হাট ও চকগৌরী হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, চাল, তরমুজ, আখের গুড়, কলা, পেঁপে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.২%, ট্যাপ ২.৪% এবং অন্যান্য ৩.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ অঞ্চলে ৩৩.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৭.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, ক্লিনিক ৬, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩৫।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। [চিত্তরঞ্জন মন্ডল]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মহাদেবপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।