মসলা
মসলা (Spice) খাদ্যের স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে ব্যবহার্য যে কোন উদ্ভিদ, উদ্ভিদের অংশ বা ফুল, ফল ও বীজ। সুগন্ধ ও উদ্বায়ী তৈল থাকার জন্যই মসলার কদর। খাদ্যের স্বাদ বাড়াতে সহায়তা করলেও মসলা কোন খাদ্য নয়, এগুলির তেমন পুষ্টিমান নেই। গ্রীষ্মমন্ডলীয় কিছু উদ্ভিদ থেকেই প্রধানত মসলা সংগৃহীত হয়। মসলা ছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যের প্রথম ও প্রধান পণ্য। মসলা অনুসন্ধান একদা বিশ্ব ইতিহাসের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল। প্রাচ্যের মসলাসমৃদ্ধ দ্বীপগুলিতে যাতায়াতের সমুদ্রপথ আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধানী সমুদ্রযাত্রায় ভাস্কো-ডা-গামা, কলম্বাস, ম্যাগেলান ও অন্যান্য নাবিক এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
মসলা গাছের বিভিন্ন অংশই মসলার উৎস। গুরুত্বপূর্ণ মসলার মধ্যে আদা, হলুদ, সারসাপারিলা (sarsaparilla) এবং অ্যানজেলিকা (angelica) পাওয়া যায় কন্দমূল থেকে; দারচিনি ও ক্যাশিয়া (নিরেস দারচিনি) গাছের ছাল থেকে, লবঙ্গ, কেপার (capers) ও জাফরান ফুল থেকে; ধনিয়া, মেথি, গোলমরিচ, জিরা, মরিচ ও মৌরি ফল থেকে; এলাচি ও জায়ফল বীজ থেকে এবং তুলসী, ধনিয়াপাতা ও লেমনগ্রাস পাতা থেকে সংগৃহীত হয়।
খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে বিভিন্ন প্রকার মসলার পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে বেশকিছু মসলার চাষ হয় এবং প্রায় সব ধরনের খাবারেই এগুলি ব্যবহূত হয়। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা প্রচুর মসলা ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে। বাংলাদেশে সাধারণত আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া, মেথি, গুয়ামুরি ও কালোজিরা চাষ হয়।
বাংলাদেশে ২০০৪-০৫ সালে বিভিন্ন ধরনের মসলা উৎপাদনকারী উদ্ভিদের আবাদি জমি ও মসলা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২৩,৬১৭ একর এবং ২৩,৮৬৫ মে টন। শাকসবজি ও মাছ রান্নায় ধনিয়ার কচি পাতা প্রায় সর্বদাই ব্যবহূত হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ মসলা হলো এলাচি, লবঙ্গ, জায়ফল, জিরা ও পোস্তদানা। বাংলাদেশে বিশেষ কিছু মসলা একত্রে মিশিয়ে (পাঁচ ফোড়ন) সবজি ও ডাল রান্নায় ব্যবহূত হয়। মিশানো আরেকটি প্রিয় মসলা হলো ‘গরম মসলা’। এতে থাকে লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারচিনি ও এলাচি, যা বিশেষ ধরনের মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি রান্নায় অপরিহার্য। এগুলি বিভিন্ন খাবার ও নানা ধরনের মিষ্টি ও মিষ্টান্ন তৈরিতেও ব্যবহূত হয়। গোলমরিচ, আদা, মরিচ, রসুন, লবঙ্গ, জোয়ান এবং মেথির মতো কিছু মসলা সনাতন ও লোকজ ঔষধ হিসেবেও ব্যবহূত হয়ে আসছে। [মোস্তফা কামাল পাশা]