মধুখালী উপজেলা

মধুখালী উপজেলা (ফরিদপুর জেলা)  আয়তন: ২৩০.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৮´ থেকে ২৩°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বালিয়াকান্দি এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলা, দক্ষিণে বোয়ালমারী ও মোহাম্মদপুর  উপজেলা (মাগুরা), পূর্বে ফরিদপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা (মাগুরা)।

জনসংখ্যা ২০৪৪৯২; পুরুষ ১০১৭১৯, মহিলা ১০২৭৭৩। মুসলিম ১৭২০৩০, হিন্দু ৩২২৩২, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ৩৫ এবং অন্যান্য ১৯৩।

জলাশয় প্রধান নদী: গড়াই-মধুমতি, কুমার, চন্দনা, বারাসিয়া।

প্রশাসন মধুখালী থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৩০ ২৪২ ১৩৪০০ ১৯১০৯২ ৮৮৬ ৬৩.৬ ৫১.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৫৭ ১৩৪০০ ৩৭৫৪ ৬৩.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কামারখালী ৪২ ৪৯৯৪ ৯২৫৬ ৯৭১৮ ৫৩.১
গজনা ৩১ ৮২৯৮ ১৫২৬৮ ১৫১৩৯ ৫১.৩
জাহাপুর ৩৭ ৩৭৬৩ ৬৪৮৭ ৬৩২৫ ৫১.৮
ডুমাইন ২১ ৬২৭৬ ১১২৭২ ১১৬২৭ ৫৪.২
নোয়াপাড়া ৭৩ ৬২২০ ১৩০৫৬ ১২৭১৪ ৫৫.৮
বাগাট ১০ ৩৯৭১ ৮৩১০ ৮৫৩২ ৫৪.০
মধুখালী ৫২ ৬৮৫৮ ১৫৫৩০ ১৫৭৬৮ ৫০.৯
মেঘচামি ৬৩ ৮৪৪৪ ১০৫৮৯ ১০৪৬৮ ৫০.৯
রায়পুর ৮৪ ৮২৮১ ১১৯৫১ ১২৪৮২ ৫০.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মথুরাপুরের ৭০ ফুট উঁচু দেয়াল (আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত), ভূষণার মুকুন্দরায়ের (মতান্তরে সীতারাম) কাচারি ও দিঘি, বেল্টনের নীলকুঠি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে মধুখালী থানার চন্দনা বারাসিয়া নদীর পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সংঘটিত লড়াইয়ে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে মধুখালী ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার জন্য ঘটনাস্থলে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে স্থানীয় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। উপজেলায় ১টি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মধুখালী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫০, মন্দির ১৪০, গির্জা ১, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বনমালীদিয়ার মাযার ও মসজিদ, পশ্চিম ঘোড়া খোলা মসজিদ, মাকড়াইল মাযার ও মসজিদ, মধুখালী বাজার জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৫%; পুরুষ ৫৪.২%, মহিলা ৫০.৭%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭, স্যাটেলাইট স্কুল ১৪, মাদ্রাসা ৫৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কোরকদি রাসবিহারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), আড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭, ক্লাব ৪৫, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ৪।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৫৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৬%, শিল্প ০.৭৪%, ব্যবসা ১৩.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.০৩%, চাকরি ৯.৭৪%, নির্মাণ ১.৬১%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৩% এবং অন্যান্য ৪.৫৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৭৬%, ভূমিহীন ৩৯.২৪%। শহরে ৩৭.৪৬% এবং গ্রামে ৬২.৩৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল আখ, পাট, ধান, গম, ছোলা, সরিষা, মরিচ, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, মিষ্টি আলু, যব, তিসি, তিল, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, বেল, তাল, খেজুর, নারিকেল।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২৭ কিমি; রেলপথ ১০ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, বরফকল, আটাকল, চালকল।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৭। মধুখালী, কামারখালী, বাগাট হাট এবং থানাঘাট মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চিনি, মরিচ, নারিকেল, খেজুর গুড়, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ৩.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৭.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ২, প্রাইভেট ক্লিনিক ৪।

এনজিও ব্র্যাক, আশা। [সিরাজুল এহসান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো;  মধুখালী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।