মজুমদার, ফণীভূষণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''মজুমদার, ফণীভূষণ '''(১৯০১-১৯৮২)  রাজনীতিক। জন্ম ১৯০১ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা সতীশচন্দ্র মজুমদার। ফণীভূষণ মজুমদার মাদারীপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, বাঁকুড়া কলেজ থেকে আইএসসি এবং কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি কলকাতা রিপন কলেজ থেকে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন।
[[Image:Majumder%20Fanibhushan.jpg|thumb|400px|right|ফণীভূষণ মজুমদার]]
'''মজুমদার, ফণীভূষণ''' (১৯০১-১৯৮২)  রাজনীতিক। জন্ম ১৯০১ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা সতীশচন্দ্র মজুমদার। ফণীভূষণ মজুমদার মাদারীপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, বাঁকুড়া কলেজ থেকে আইএসসি এবং কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি কলকাতা রিপন কলেজ থেকে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন।


ফণীভূষণ মজুমদার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে বিপ-বী পার্টিতে যোগ দেন এবং গুপ্ত সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯২৫ সালে মাদারীপুর শান্তি সেনাবাহিনীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তিনি ১৯৩০ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কারা ভোগ করেন। মুক্ত হয়ে তিনি ১৯৩৮ সালে মাদারীপুর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনে ভূমিকা রাখেন। তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বেঙ্গল ফরওয়ার্ড ব-কের সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৪০ সালে নেতাজীর সাথে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৬ সালে মুক্তি লাভ করেন।
ফণীভূষণ মজুমদার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে বিপ-বী পার্টিতে যোগ দেন এবং গুপ্ত সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯২৫ সালে মাদারীপুর শান্তি সেনাবাহিনীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তিনি ১৯৩০ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কারা ভোগ করেন। মুক্ত হয়ে তিনি ১৯৩৮ সালে মাদারীপুর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনে ভূমিকা রাখেন। তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বেঙ্গল ফরওয়ার্ড ব-কের সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৪০ সালে নেতাজীর সাথে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৬ সালে মুক্তি লাভ করেন।
৬ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৪৮ সালে মাদারীপুর মহকুমা তাঁতী সমবায় সমিতি গঠন করেন। ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রথমে ১৯৪৮ সালে এবং পরে ১৯৪৯-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম থেকে তিনি এ দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৬২ পর্যন্ত অন্তরীণ থাকেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময় মুক্তি লাভ করেন।
ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৪৮ সালে মাদারীপুর মহকুমা তাঁতী সমবায় সমিতি গঠন করেন। ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রথমে ১৯৪৮ সালে এবং পরে ১৯৪৯-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম থেকে তিনি এ দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৬২ পর্যন্ত অন্তরীণ থাকেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময় মুক্তি লাভ করেন।


ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কাউন্সিলের (যশোর-ফরিদপুর) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। এ সময় তিনি ভারতের লোকসভায়ও ভাষণ দেন।
[[Image:Majumder%20Fanibhushan.jpg|thumbফণীভূষণ মজুমদার]]
 
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কাউন্সিলের (যশোর-ফরিদপুর) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। এ সময় তিনি ভারতের লোকসভায়ও ভাষণ দেন।


ফণীভূষণ মজুমদার স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় খাদ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বায়ত্তশাসন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ছিলেন। সামরিক শাসনামলে ১৯৭৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ আলী আকবর]
ফণীভূষণ মজুমদার স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় খাদ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বায়ত্তশাসন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ছিলেন। সামরিক শাসনামলে ১৯৭৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ আলী আকবর]

০৭:১৮, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ফণীভূষণ মজুমদার

মজুমদার, ফণীভূষণ (১৯০১-১৯৮২)  রাজনীতিক। জন্ম ১৯০১ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা সতীশচন্দ্র মজুমদার। ফণীভূষণ মজুমদার মাদারীপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, বাঁকুড়া কলেজ থেকে আইএসসি এবং কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি কলকাতা রিপন কলেজ থেকে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন।

ফণীভূষণ মজুমদার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে বিপ-বী পার্টিতে যোগ দেন এবং গুপ্ত সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯২৫ সালে মাদারীপুর শান্তি সেনাবাহিনীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তিনি ১৯৩০ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কারা ভোগ করেন। মুক্ত হয়ে তিনি ১৯৩৮ সালে মাদারীপুর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনে ভূমিকা রাখেন। তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বেঙ্গল ফরওয়ার্ড ব-কের সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৪০ সালে নেতাজীর সাথে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৬ সালে মুক্তি লাভ করেন।

ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৪৮ সালে মাদারীপুর মহকুমা তাঁতী সমবায় সমিতি গঠন করেন। ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রথমে ১৯৪৮ সালে এবং পরে ১৯৪৯-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম থেকে তিনি এ দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৬২ পর্যন্ত অন্তরীণ থাকেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময় মুক্তি লাভ করেন।

ফণীভূষণ মজুমদার ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কাউন্সিলের (যশোর-ফরিদপুর) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। এ সময় তিনি ভারতের লোকসভায়ও ভাষণ দেন।

ফণীভূষণ মজুমদার স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় খাদ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বায়ত্তশাসন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ছিলেন। সামরিক শাসনামলে ১৯৭৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ আলী আকবর]