মজলিস আউলিয়া মসজিদ
মজলিস আউলিয়া মসজিদ ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানার পাথরাইল গ্রামে অবস্থিত। এ গ্রামে বিরাট একটি দিঘির পশ্চিম পার্শ্বে ইটের দেয়াল দ্বারা ঘেরা যে ইমারত কমপ্লেক্সটি রয়েছে, তার ভেতরে আছে একটি মসজিদ ও একটি মাযার। কমপ্লেক্সটি স্থানীয়ভাবে সুফি সাধক মজলিস আব্দুল্লাহ খানের বলে পরিচিত। এটি মজলিস আউলিয়া নামে সমধিক খ্যাত।
মসজিদটি বর্তমানে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটি আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। বাইরের দিকে উত্তর-দক্ষিণে এর পরিমাপ ২৫.৬০ মিটার এবং পূর্বপশ্চিমে ১২.৬৫ মিটার। ইমারতটির বহির্ভাগে চারটি কোণে (বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থায়) অষ্টভুজাকৃতি বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলি ছাদের কার্নিস পর্যন্ত উঠে গেছে এবং এগুলি ‘মোল্ডিং’ নকশা দ্বারা ভাগ করা, যার চিহ্ন এখনও অনেক স্থানে সুস্পষ্ট। মসজিদটির পূর্বদিকের সম্মুখভাগ পাঁচটি খিলানপথ দ্বারা সজ্জিত। উত্তর ও দক্ষিণে একইরূপ দুটি খিলানপথ রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে পাঁচটি দ্বিকেন্দ্রিক কুলুঙ্গি মিহরাব রয়েছে, যেগুলি মূলত পূর্বদিকের পাঁচটি প্রবেশপথের মুখোমুখি। সবগুলি মিহরাবই খিলানযুক্ত। এর মাঝেরটি বড় ও একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। ‘ব্যাটেলমেন্ট’ ও কার্নিসগুলি বাঁকানোভাবে তৈরি।
ইমারতটির অভ্যন্তরভাগ চারটি ইটের স্তম্ভের একটি সারির সমন্বয়ে দুটি লম্বালম্বি আইলে বিভক্ত। ‘বে’গুলি আড়াআড়িভাবে তৈরি এবং পূর্বদিকের পাঁচটি প্রবেশপথ ও পশ্চিমদিকের পাঁচটি মিহরাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
‘বে’-র সংখ্যা পাঁচটি, ফলে অভ্যন্তরে ১০টি বর্গক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, প্রতিটি একটি গম্বুজ দ্বারা আবৃত। গম্বুজাকৃতির পুরোছাদটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। গম্বুজগুলি স্তম্ভের উপর পরস্পর ছেদকারী খিলানের সাহায্যে নির্মিত এবং এর প্রতিটি কোণে ছিল বাংলার স্থানীয় পেন্ডেন্টিভ। এ কৌশল এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। মসজিদটি প্রচুর টেরাকোটা নকশা দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল, অনেকটাই তাঁতীপাড়া মসজিদ ও বাঘা মসজিদ এর মতো। বিভিন্ন অলঙ্কৃত নকশা যেমন- লতাপাতা, গোলাপ, খাঁজকাটা খিলান, ঝুলন্ত নকশা এখনও দরজা ও মিহরাবের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় সুস্পষ্ট।
পরিকল্পনা ও অলংকরণ সমৃদ্ধিতে মসজিদটি পুরোপুরি রাজশাহীর বাঘা মসজিদের (১৫২৩) সঙ্গে তুলনীয়। এটি সম্ভবত ষোলো শতকের শেষের দিকে হোসেনশাহী আমলের স্থাপত্যকর্ম। [এম.এ বারি]