মকসুদ, সৈয়দ আবুল
মকসুদ, সৈয়দ আবুল (১৯৪৬-২০২১) মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, লেখক, কবি ও মানবতাবাদী। সৈয়দ আবুল মকসুদ মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে ২৩শে অক্টোবর ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সালেহা বেগম ও সৈয়দ আবুল মাহমুদের পুত্র। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন তিনি অতিবাহিত করেন নিজ গ্রামে এবং তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন, কিন্তু পরবর্তীতে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার জন্য রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাপ্তাহিক পত্রিকা নবযুগ-এর সাংবাদিক হিসেবে আবুল মকসুদের চাকরিজীবনের শুরু। এরপর তিনি ন্যাপের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক জনতা’য় কিছুদিন কাজ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন এবং তাতে বিশেষ অবদান রাখেন। ১৯৭২-এ পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি 'বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়' যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ ও বিএনপি-জামায়াতের মৌলবাদ সমর্থনের প্রতিবাদে এই সংস্থা থেকে অবসর নেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
সৈয়দ আবুল মকসুদ নিয়মিত বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কলাম লেখার পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনী এবং সাহিত্য সমালোচনা। তিনি রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা ভাসানীর মতো বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কর্মজীবন নিয়ে বিস্তৃত গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘যুদ্ধ ও মানুষের মুর্খতা’ (১৯৮০), ’মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’ (১৯৯৪), ‘গান্ধী, নেহরু ও নোয়াখালী’ (২০০৮), ‘ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু’ (২০১১), ‘রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন’ (২০১২), ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০২১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি সৈয়দ আবুল মকসুদ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র রেখে গিয়েছেন। [গোবিন্দ চক্রবর্তী]