ভূ-জল পৃষ্ঠ
ভূ-জল পৃষ্ঠ (Groundwater Table) মাটি ও শিলার উপরিভাগ যা জলসিক্ত থাকে অর্থাৎ জলসংপৃক্তির (zone of saturation) উপরিতল বা ভূ-জলের উপরিতল। এর উচ্চতা ভূ-সংস্থান এবং বৃষ্টিপাত বা অন্যান্য সূত্র থেকে পানির অনুপ্রবেশের কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রাকৃতিকভাবে ভূ-জল পৃষ্ঠ উপরিতল ভূ-সংস্থানেরই মৃদুতর প্রতিরূপ। ভূগর্ভস্থ পানি সাধারণত উচ্চস্থানের ভূ-জল পৃষ্ঠ থেকে নিম্নস্থানের দিকে ধাবিত হয়। ভূ-জল পৃষ্ঠ ঢালু হলে ভূগর্ভস্থ পানি প্রবহমান থাকে। আর ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহের অনুপস্থিতি জল পৃষ্ঠে সমতল অবস্থা নির্দেশ করে। ভূ-জল পৃষ্ঠ যখন ভূ-পৃষ্ঠের বরাবর হয়, তখন প্রাকৃতিক ঝরণার সৃষ্টি হয়। অগভীর ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের ভূগর্ভস্থ পানি সাধারনত: উত্তর থেকে ক্রমান্বয়ে দক্ষিন দিকে প্রবাহিত হয়, ভূস্তরের উচ্চতার কারনে এটা হয়। ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। এক বছরের একটি হাইড্রোগ্রাফ দেয়া যেতে পারে,যা বার্ষিক উঠানামা দেখায়।
বাংলাদেশে ভূ-জল পৃষ্ঠের গভীরতা ১ মিটারের কম থেকে ৩০ মিটারের বেশি হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে ভূ-জল পৃষ্ঠ সবচেয়ে অগভীর; আর সবচেয়ে গভীর ভূ-জল পৃষ্ঠ বরেন্দ্রভূমি ও ঢাকা শহরে (ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটারেরও বেশি নিচে)। এই গভীরতা পানির বাৎসরিক সঞ্চারণ (recharge) ও নির্গমণের (discharge) কারণে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন রকম হয়। বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমের শেষদিকে ভূ-জল পৃষ্ঠ সবচেয়ে অগভীর এবং এপ্রিল/মে মাসে সবচেয়ে গভীর। স্থানীয় জল-ভূতাত্ত্বিক অবস্থা, ভূমিস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ ও ভূমিস্থ পানির প্রাকৃতিক নিষ্ক্রমণ ভেদে ভূ-জল পৃষ্ঠের মৌসুমি ওঠানামা এক মিটারের কম থেকে দশ মিটারের বেশি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে সেচকার্যের জন্যে ভূমিস্থ পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলন করে নেওয়ার ফলে ভূ-জল পৃষ্ঠ গভীরতায় ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সারা দেশে পর্যবেক্ষণ কূপের জাতীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে একবার ভূ-জল পৃষ্ঠ গভীরতা পরিমাপ করে। খননকৃত কূপ ও পর্যবেক্ষণ কূপ এই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত। [কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ]