ভূঁইয়া, আবদুল মান্নান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ভূঁইয়া, আবদুল মান্নান '''(১৯৪৩-২০১০)'''  '''রাজনীতিক।  ১৯৪৩ সালের ৩ জানুয়ারি নরসিংদীর  শিবপুর উপজেলার আসাদনগর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুল হাই ভূঁইয়া এবং মাতা রহিমা বেগম।  আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৫৮ সালে শিবপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৫ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন।
[[Image:BhuiyanAbdulMannan.jpg|thumb|right|400px|আবদুল মান্নান ভূঁইয়া]]
'''ভূঁইয়া, আবদুল মান্নান''' (১৯৪৩-২০১০) রাজনীতিক।  ১৯৪৩ সালের ৩ জানুয়ারি নরসিংদীর  শিবপুর উপজেলার আসাদনগর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুল হাই ভূঁইয়া এবং মাতা রহিমা বেগম।  আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৫৮ সালে শিবপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৫ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন।


আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজে অধ্যায়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ ছাত্রসংসদের সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এসময়ে বামপন্থি ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ডিগ্রি পরীক্ষার পূর্বে তাঁকে গ্রেফতার করে বেশ কিছুদিন কারা অন্তরীণ রাখা হয়। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দু’বছর পর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজে অধ্যায়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ ছাত্রসংসদের সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এসময়ে বামপন্থি ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ডিগ্রি পরীক্ষার পূর্বে তাঁকে গ্রেফতার করে বেশ কিছুদিন কারা অন্তরীণ রাখা হয়। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দু’বছর পর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৭ নং লাইন: ৮ নং লাইন:


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কয়েক হাজার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে তিনি নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কয়েক হাজার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে তিনি নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
[[Image:BhuiyanAbdulMannan.jpg|thumb|right|আবদুল মান্নান ভূঁইয়া]]


স্বাধীনতার পর মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপের কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং নরসিংদীতে কৃষক সমিতি সংগঠিত করেন। তিনি দীর্ঘসময় মওলানা ভাসানীর  নেতৃত্বে কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
স্বাধীনতার পর মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপের কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং নরসিংদীতে কৃষক সমিতি সংগঠিত করেন। তিনি দীর্ঘসময় মওলানা ভাসানীর  নেতৃত্বে কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

০৬:৫৫, ১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া

ভূঁইয়া, আবদুল মান্নান (১৯৪৩-২০১০) রাজনীতিক।  ১৯৪৩ সালের ৩ জানুয়ারি নরসিংদীর  শিবপুর উপজেলার আসাদনগর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুল হাই ভূঁইয়া এবং মাতা রহিমা বেগম।  আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৫৮ সালে শিবপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৫ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন।

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজে অধ্যায়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ ছাত্রসংসদের সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এসময়ে বামপন্থি ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ডিগ্রি পরীক্ষার পূর্বে তাঁকে গ্রেফতার করে বেশ কিছুদিন কারা অন্তরীণ রাখা হয়। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দু’বছর পর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৪-১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মনোহরদী কলেজ এবং শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন।  প্রায় একই সময়ে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কয়েক হাজার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে তিনি নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।

স্বাধীনতার পর মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপের কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং নরসিংদীতে কৃষক সমিতি সংগঠিত করেন। তিনি দীর্ঘসময় মওলানা ভাসানীর  নেতৃত্বে কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

১৯৭৬-১৯৭৭ সালে মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপ থেকে বের হয়ে আসেন এবং ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ইউপিপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৭৯ সালে ইউপিপি থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহবায়ক মনোনীত হন। এছাড়া তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৮০-এর দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৯১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপির মহাসচিব মনোনীত হন। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৯৬ সালে  এবং পুনরায় ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত  স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মান্নান ভূঁইয়া ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব ছিলেন।

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দেশের সবক’টি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে লিয়াজঁ রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০১০ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [ঊর্মি হোসেন]