ভট্টাচার্য, দেবু

দেবু ভট্টাচার্য

ভট্টাচার্য, দেবু (১৯৩০-১৯৯৪)  গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক। জন্ম ১৯৩০ সাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থেকে আসা এক পরিবারে। তাঁর পিতৃদত্ত নাম প্রাণকুমার ভট্টাচার্য, স্কুলে তাঁর নাম নিবন্ধিত হয় দেবদাস ভট্টাচার্য হিসেবে। দেবু ভট্টাচার্য ১৯৫০ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল থেকে চিত্রকলা বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। তাঁর শিক্ষক ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন আর পরবর্তীকালে তিনি শিল্পী কামরুল হাসান ও এস.এম সুলতানের সাহচর্য পান।

পেশাগত জীবনে শিল্পচর্চা বেছে না নিয়ে দেবু ১৯৪৫ সালে যোগ দেন তিমিরবরণ পরিচালিত একটি অর্কেস্ট্রা গ্রুপে। এখানেই তিনি গীতিকার হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন, গড়ে ওঠেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। নৃত্য এবং নাটকেও দেবুর বিশেষ আগ্রহ ছিল।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গীতিকারদের অন্যতম দেবু ভট্টাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল সঙ্গীত শিল্পী প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি অবাঙালি (মূলত পশ্চিম পাকিস্তানি) শিল্পীদের দ্বারা বাংলা গান গাওয়ানোর জন্য গান রচনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত গায়ক মেহেদী হাসান ও আহমদ রুশদী এবং বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী বশীর আহমদ, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, ফেরদৌসী রহমান, রুনা লায়লা প্রমুখের মাধ্যমে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা সঙ্গীত ও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। দেবু ভট্টাচার্যের অনুপ্রেরণাতেই কণ্ঠশিল্পী সুরাইয়া মুলতানীকর এবং সঙ্গীত পরিচালক আলতাফ মাহমুদ বড় মাপের শিল্পী হিসেবে গড়ে ওঠেন।

দেবু খুব অল্প বয়স থেকেই বাঁশি বাজানোর পারদর্শিতা দেখান এবং ১৯৫০ নাগাদ ভারতীয় ধ্রুপদী রাগে বাজানো তার কয়েকটি বাঁশি সঙ্গীতের রেকর্ড বাজারে আসে। গজল ও গীতসহ দেবুর সকল গানই একটি নিজস্ব রীতি ও বৈশিষ্ট্যে ব্যঞ্জনাময়। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি ধ্রুপদী, আধুনিক ও লোকসঙ্গীত ধারার যত সঙ্গীত রচনা করেছেন সেগুলিতে স্থানীয় ও পাশ্চাত্য ধ্রুপদী ঘরানার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। প্রায় তিন দশক পরও তাঁর সব গান এখনও সমান আবেদনময়। টেলিভিশন ও মঞ্চে তার জীবনের সর্বশেষ উপস্থাপনা ছিল জ্যাজ শিল্পী চিকো হেরম্যান-এর সঙ্গে একটি যৌথ ফ্ল্যুট-সিম্ফনি।

দেবু ভট্টাচার্য বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক কবির দেশপ্রেমমূলক কবিতাকে ভিত্তি করে সঙ্গীত রচনা করেছেন। সেরা চলচ্চিত্র গীতিকার হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৯৭ সালে তাঁকে একুশে পদকে সম্মানিত (মরণোত্তর) করা হয়। দেবু ভট্টাচার্য ১৯৯৪ সালে মুত্যৃবরণ করেন।  [মাহবুব আলম]