ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(সংশোধন)
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা''' ([[চট্টগ্রাম বিভাগ|চট্টগ্রাম বিভাগ]])  আয়তন: ১৯২৭.১১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৯´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে মেঘনা নদী, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা।
'''ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা''' ([[চট্টগ্রাম বিভাগ|চট্টগ্রাম বিভাগ]])  আয়তন: ১৮৮১.২০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৯´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে মেঘনা নদী, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা।


''জনসংখ্যা'' ২৩৯৮২৫৪; পুরুষ ১২০৫৫৫২, মহিলা ১১৯২৭০২। মুসলিম ২১৯৫৫৮৩, হিন্দু ২০১৮৪৩, বৌদ্ধ ১৮৭, খ্রিস্টান ৯০ এবং অন্যান্য ৫৫১।
''জনসংখ্যা'' ২৮৪০৪৯৮; পুরুষ ১৩৬৬৭১১, মহিলা ১৪৭৩৭৮৭। মুসলিম ২৬২৭৮১০, হিন্দু ২১১৮৯৯, বৌদ্ধ ১১৮, খ্রিস্টান ৩৮৯ এবং অন্যান্য ২৮২।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, বুড়ি, কুলকুলিয়া।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, বুড়ি, কুলকুলিয়া।


''প্রশাসন'' ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম ত্রিপুরা) জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৯ সালে শহরটি পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৪০.৫৭ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা আখাউড়া (৯৯.২৮ বর্গ কিমি)।
''প্রশাসন'' ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম ত্রিপুরা) জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৯ সালে শহরটি পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৩৭.৩৪ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা আখাউড়া (৯৮.০৪ বর্গ কিমি)।


{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-  
|-  
| ১৯২৭.১১  || ৮  || ৪ || ৯৮  || ১০২৪  || ১৩৩১  || ৩৩৬১৮৪  || ২০৬২০৭০  || ১২৪৪  || ৩৯.৪৬
| ১৮৮১.২০ || || ৪ || ১০০ || ৯২৪ || ১৩২৪ || ৪৪৮৪৯৩ || ২৩৯২০০৫ || ১৫১০ || ৪৫.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || উপজেলা  ||  পৌরসভা  ||  ইউনিয়ন  || মৌজা  ||  গ্রাম  ||  জনসংখ্যা ||  ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || উপজেলা  ||  পৌরসভা  ||  ইউনিয়ন  || মৌজা  ||  গ্রাম  ||  জনসংখ্যা ||  ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-  
|-  
| আখাউড়া || ৯৯.২৮  || ১ || ৫ || ১০৭  || ১১৩  || ১৩০৩১৯  || ১৩১৩  || ৫০.
| আখাউড়া || ৯৮.০৪ || ১ || ৫ || ৯০ || ১১২ || ১৪৫২১৫ || ১৪৮১ || ৫২.
|-  
|-
| আশুগঞ্জ || ৬৭.৫৯ || - || ৭  || ৩০ || ৩৮  || ১৪৫৮২৮  || ২১৫৮  || ৪৬.২
| আশুগঞ্জ || ৬৭.৫৯ || - || || ৩০ || ৪১ || ১৮০৬৫৪ || ২৬৭৩ || ৫১.২
|-  
|-
| কসবা || ২০৯.৭৬  || ১ || ১০ || ১৬০  || ২২২  || ২৭১২৩১  || ১২৯৩  || ৪৩.
| কসবা || ২০৯.৭৭ || ১ || ১০ || ১৩৮ || ২০৯ || ৩১৯২২১ || ১৫২২ || ৫০.
|-  
|-
| নবীনগর || ৩৫৩.৬৬  || ১ || ২০  || ১৫৫ || ১৯৬  || ৪২০৩৮৩  || ১১৮৯  || ৩৭.
| নবীনগর || ৩৫০.৩২ || ১ || ২১ || ১৫৫ || ২০০ || ৪৯৩৫১৮ || ১৪০৯ || ৪৩.
|-  
|-
| নাসিরনগর || ৩১১.৬৬  || - || ১৩ || ১০০  || ১২৯  || ২৫৫৬৬৮  || ৮২০  || ২৭.
| নাসিরনগর || ২৯৪.৩৬ || - || ১৩ || ৯৮ || ১২৮ || ৩০৯০১১ || ১০৫০ || ৩৪.
|-  
|-
| বাঞ্ছারামপুর || ২১৭.৩৮  || - || ১৩ || ৭৬  || ১১৮  || ২৭৮২৪০  || ১২৮০  || ৩৫.
| বাঞ্ছারামপুর || ১৮৭.৩০ || - || ১৩ || ৭৫ || ১২১ || ২৯৮৪৩০ || ১৫৯৩ || ৩৮.
|-  
|-
| ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর || ৪৪০.৫৫  || ১  || ২১  || ৩২০  || ৩৭৫  || ৬২৫৪৮৪  || ১৪২০  || ৪৪.
| ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর || ২৩৭.৩৪ || ১ || ১১ || ১০৩ || ১৪৬ || ৫২১৯৯৪ || ২১৯৯ || ৫৩.৪
|-  
|-
| সরাইল || ২২৭.২২  || - || ৯ || ৭৬  || ১৪০  || ২৭১১০১  || ১১৯৩  || ৩২.৯
| বিজয়নগর || ২২১.১৭ || - || ১০ || ১৬৮ || ২২৬ || ২৫৭২৪৭ || ১১৬৩ || ৪২.
|-
| সরাইল || ২১৫.২৭ || - || ৯ || ৬৭ || ১৪১ || ৩১৫২০৮ || ১৪৬৪ || ৪০.৯
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:BrahmanbariaDistrict.jpg|thumb|400px|right]]
[[Image:BrahmanbariaDistrict.jpg|thumb|400px|right]]
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি''  ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া জেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। এ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রগুলো হল আকছিনা, আখাউড়া, আসাদনগর, আড়াইবাড়ী, ইব্রাহীমপুর, কালীকচ্ছা, কুল্লাপাথর, চন্দ্রপুর, চারগাছ, চেকপোস্ট সড়ক, ঝগড়ার চর, তারাগণ, তুল্লাপাড়া, দেবগ্রাম, দরুইন, দুর্গারামপুর, দশদোনা, নবীনগর সদর, ফুলবাড়ীয়া, বায়েক, মিরপুর, লতোয়ামুড়া, শাহবাজপুর, হরিয়াবহ এবং ক্ষীরণাল। ২৮ মার্চ মেজর  [[মোশাররফ, মেজর জেনারেল খালেদ|খালেদ মোশাররফ]] এর নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হানাদার মুক্ত হয়, কিন্তু ১৬ এপ্রিল পাকবাহিনী বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে পুনরায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া দখল করে নেয়। ১৪ এপ্রিল আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, শাহজাহান, ল্যান্স নায়েক আঃ হাই, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং সিপাহী আব্দুর রহমান শহীদ হন। ১৮ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলার দরুইনে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুখোমুখি লড়াইয়ে  [[কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা|বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল]]  শহীদ হন। এ গ্রামেই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালকে সমাহিত করা হয়। ৫ মে সরাইল উপজেলায় লেফটেন্যান্ট হেলাল মুর্শেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুরে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করলে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ২২ নভেম্বর কসবা উপজেলার লতোয়ামুড়া ও চন্দ্রপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কুল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনী আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতুর আশুগঞ্জের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংস করার পর পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছে এমন ধারণা থেকেই যৌথবাহিনী আশুগঞ্জ দখল করতে অগ্রসর হয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র পাকবাহিনী অগ্রসরমান ১৮ রাজপুত বাহিনীর উপর প্রচন্ড হামলা চালায়। হামলায় মিত্রবাহিনীর ৪ জন সেনা অফিসারসহ ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নাসিরনগর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান শহীদ হন এবং তুল্লাপাড়া গ্রামের বটতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে একজন রাজাকারসহ ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছা বাজারের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের মাইন বিস্ফোরণে দুটি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পাকবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও সরাইলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হন। ৫ আগস্ট বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পাকবাহিনী উজানচর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে গণহত্যা চালায়। ১৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলার নাসিরনগর সদর, কুন্ডা, বোলাকোট ও গোকর্ণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাকবাহিনীর হামলায় বহুসংখ্যক নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উপজেলার কাউতলী, পৈরতলা, সিঙ্গারবিল, নাটাই, মজলিশপুর, বিজেশ্বর, রামরাইল ও আটলায় পাকবাহিনী প্রায় ২০৪ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী বুধন্তী ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামে ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সরাইল উপজেলার বিটঘর এলাকায় পাকবাহিনী ৭০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। আশুগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী সন্দেহভাজন লোকজনদের ধরে এনে সাইলো বধ্যভূমিতে নির্যাতন করে হত্যা করে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫ জন।
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া জেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। এ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রগুলো হল আকছিনা, আখাউড়া, আসাদনগর, আড়াইবাড়ী, ইব্রাহীমপুর, কালীকচ্ছা, কুল্লাপাথর, চন্দ্রপুর, চারগাছ, চেকপোস্ট সড়ক, ঝগড়ার চর, তারাগণ, তুল্লাপাড়া, দেবগ্রাম, দরুইন, দুর্গারামপুর, দশদোনা, নবীনগর সদর, ফুলবাড়ীয়া, বায়েক, মীরপুর, লতোয়ামুড়া, শাহবাজপুর, হরিয়াবহ এবং ক্ষীরণাল। ২৮ মার্চ মেজর [[মোশাররফ, মেজর জেনারেল খালেদ|খালেদ মোশাররফ]] এর নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হানাদার মুক্ত হয়, কিন্তু ১৬ এপ্রিল পাকবাহিনী বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে পুনরায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া দখল করে নেয়। ১৪ এপ্রিল আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, শাহজাহান, ল্যান্স নায়েক আঃ হাই, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং সিপাহী আব্দুর রহমান শহীদ হন। ১৮ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলার দরুইনে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুখোমুখি লড়াইয়ে [[কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা|বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল]] শহীদ হন। এ গ্রামেই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালকে সমাহিত করা হয়। ৫ মে সরাইল উপজেলায় লেফটেন্যান্ট হেলাল মুর্শেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করলে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ২২ নভেম্বর কসবা উপজেলার লতোয়ামুড়া ও চন্দ্রপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কুল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনী আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতুর আশুগঞ্জের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংস করার পর পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছে এমন ধারণা থেকেই যৌথবাহিনী আশুগঞ্জ দখল করতে অগ্রসর হয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র পাকবাহিনী অগ্রসরমান ১৮ রাজপুত বাহিনীর উপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। হামলায় মিত্রবাহিনীর ৪ জন সেনা অফিসারসহ প্রায় ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নাসিরনগর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান শহীদ হন এবং তুল্লাপাড়া গ্রামের বটতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে একজন রাজাকারসহ ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছা বাজারের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের মাইন বিস্ফোরণে দুটি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পাকবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও সরাইলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হন। ৫ আগস্ট বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পাকবাহিনী উজানচর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে গণহত্যা চালায়। ১৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলার নাসিরনগর সদর, কুণ্ডা, বোলাকোট ও গোকর্ণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাকবাহিনীর হামলায় বহুসংখ্যক নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উপজেলার কাউতলী, পৈরতলা, সিঙ্গারবিল, নাটাই, মজলিশপুর, বিজেশ্বর, রামরাইল ও আটলায় পাকবাহিনী প্রায় ২০৪ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী বুধন্তী ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামে প্রায় ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সরাইল উপজেলার বিটঘর এলাকায় পাকবাহিনী প্রায় ৭০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। আশুগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী সন্দেহভাজন লোকজনদের ধরে এনে সাইলো বধ্যভূমিতে নির্যাতন করে হত্যা করে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা  ৫ জন। জেলার ৬টি স্থানে (খারঘর, নবীনগর পাইলট হাইস্কুল মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে, নবীনগর থানা কম্পাউন্ডের দক্ষিণাংশে, মগরা গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়, আখাউড়া ত্রিপুরা সীমানাস্থ সেনারবাদী, লালপুর বাজার) গণকবর, আশুগঞ্জ সাইলো এলাকায় ১টি বধ্যভূমি, লক্ষ্মীপুর, কোল্লাপাথর, শিমরাইল ও জমশেরপুরে মোট ৮টি শহীদ সমাধি রয়েছে; ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ ও ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি অবস্থিত।
 
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' গণকবর ৬ (খারঘর, নবীনগর পাইলট হাইস্কুল মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে, নবীনগর থানা কম্পাউন্ডের দক্ষিণাংশে, মগরা গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়, আখাউড়া ত্রিপুরা সীমানাস্থ সেনারবাদী, লালপুর বাজার), বধ্যভূমি ১ (আশুগঞ্জ সাইলো), স্মৃতিস্তম্ভ ৩, ভাস্কর্য ১, শহীদ সমাধি ৮ (লক্ষ্মীপুর, কোল্লাপাথর, শিমরাইল ও জমশেরপুর)। এছাড়া আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি অবস্থিত।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৩৯.৪৬%; পুরুষ ৪২.২৬%; মহিলা ৩৬.৬৯%। আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৩৯, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩০, ভোকেশনাল স্কুল ৪, মুক বধির বিদ্যালয় ১, মহিলা কুটিরশিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১, কিন্ডার গার্টেন ৬৩, মাদ্রাসা ৩৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৮), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৪), নবীনগর সরকারি কলেজ (১৯৬৯), শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭২), বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭৩), সরাইল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৮৪), নাসিরনগর মহাবিদ্যালয় (১৯৮৭), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬০), অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৫), সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), গুনিয়ক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৭), কসবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), রামকানাই হাই একাডেমী (১৯০১), চাতালপুর ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বিদ্যাকুট অমর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), কৈতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কুটি অটল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ফান্দাউক পন্ডিত রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), জমশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), মডেল সরকারি গার্লস হাইস্কুল (১৯৩৬), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০),  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল (১৯৪১), মিরাসানী পলিটেকনিক একাডেমী (১৯৪৮), আদমপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৭), দাঁতমন্ডল এরফানিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯৫০), বাঞ্ছারামপুর সোবহানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮১), রাধানগর কালিকাপুর রাহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৩)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪৫.%; পুরুষ ৪৫.%; মহিলা ৪৪.%। আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৩৯, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩০, ভোকেশনাল স্কুল ৪, মুক বধির বিদ্যালয় ১, মহিলা কুটিরশিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১, কিন্ডার গার্টেন ৬৩, মাদ্রাসা ৩৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৮), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৪), নবীনগর সরকারি কলেজ (১৯৬৯), শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭২), বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭৩), সরাইল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৮৪), নাসিরনগর মহাবিদ্যালয় (১৯৮৭), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬০), অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৫), সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), গুনিয়ক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৭), কসবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), রামকানাই হাই একাডেমী (১৯০১), চাতালপুর ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বিদ্যাকুট অমর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), কৈতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কুটি অটল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ফান্দাউক পন্ডিত রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), জমশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), মডেল সরকারি গার্লস হাইস্কুল (১৯৩৬), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০),  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল (১৯৪১), মিরাসানী পলিটেকনিক একাডেমী (১৯৪৮), আদমপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৭), দাঁতমন্ডল এরফানিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯৫০), বাঞ্ছারামপুর সোবহানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮১), রাধানগর কালিকাপুর রাহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৩)।


''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৫১.৬২%, অকৃষি  শ্রমিক ৩.৩৮%, শিল্প ১.৬৬%, ব্যবসা ১৬.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৯%, নির্মাণ ১.৩৯%, চাকরি ৭.৭০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৬৮% এবং অন্যান্য ১০.৪২%।
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৫১.৬২%, অকৃষি  শ্রমিক ৩.৩৮%, শিল্প ১.৬৬%, ব্যবসা ১৬.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৯%, নির্মাণ ১.৩৯%, চাকরি ৭.৭০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৬৮% এবং অন্যান্য ১০.৪২%।
৫৯ নং লাইন: ৫৯ নং লাইন:
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Brahmanbaria District]]
[[en:Brahmanbaria District]]

১৬:০৫, ২৮ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা (চট্টগ্রাম বিভাগ)  আয়তন: ১৮৮১.২০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৯´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে মেঘনা নদী, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা।

জনসংখ্যা ২৮৪০৪৯৮; পুরুষ ১৩৬৬৭১১, মহিলা ১৪৭৩৭৮৭। মুসলিম ২৬২৭৮১০, হিন্দু ২১১৮৯৯, বৌদ্ধ ১১৮, খ্রিস্টান ৩৮৯ এবং অন্যান্য ২৮২।

জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, বুড়ি, কুলকুলিয়া।

প্রশাসন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম ত্রিপুরা) জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৯ সালে শহরটি পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৩৭.৩৪ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা আখাউড়া (৯৮.০৪ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১৮৮১.২০ ১০০ ৯২৪ ১৩২৪ ৪৪৮৪৯৩ ২৩৯২০০৫ ১৫১০ ৪৫.৩
জেলার অন্যান্য তথ্য
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
আখাউড়া ৯৮.০৪ ৯০ ১১২ ১৪৫২১৫ ১৪৮১ ৫২.৭
আশুগঞ্জ ৬৭.৫৯ - ৩০ ৪১ ১৮০৬৫৪ ২৬৭৩ ৫১.২
কসবা ২০৯.৭৭ ১০ ১৩৮ ২০৯ ৩১৯২২১ ১৫২২ ৫০.৭
নবীনগর ৩৫০.৩২ ২১ ১৫৫ ২০০ ৪৯৩৫১৮ ১৪০৯ ৪৩.৬
নাসিরনগর ২৯৪.৩৬ - ১৩ ৯৮ ১২৮ ৩০৯০১১ ১০৫০ ৩৪.৯
বাঞ্ছারামপুর ১৮৭.৩০ - ১৩ ৭৫ ১২১ ২৯৮৪৩০ ১৫৯৩ ৩৮.৫
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর ২৩৭.৩৪ ১১ ১০৩ ১৪৬ ৫২১৯৯৪ ২১৯৯ ৫৩.৪
বিজয়নগর ২২১.১৭ - ১০ ১৬৮ ২২৬ ২৫৭২৪৭ ১১৬৩ ৪২.১
সরাইল ২১৫.২৭ - ৬৭ ১৪১ ৩১৫২০৮ ১৪৬৪ ৪০.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া জেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। এ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রগুলো হল আকছিনা, আখাউড়া, আসাদনগর, আড়াইবাড়ী, ইব্রাহীমপুর, কালীকচ্ছা, কুল্লাপাথর, চন্দ্রপুর, চারগাছ, চেকপোস্ট সড়ক, ঝগড়ার চর, তারাগণ, তুল্লাপাড়া, দেবগ্রাম, দরুইন, দুর্গারামপুর, দশদোনা, নবীনগর সদর, ফুলবাড়ীয়া, বায়েক, মীরপুর, লতোয়ামুড়া, শাহবাজপুর, হরিয়াবহ এবং ক্ষীরণাল। ২৮ মার্চ মেজর খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হানাদার মুক্ত হয়, কিন্তু ১৬ এপ্রিল পাকবাহিনী বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে পুনরায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া দখল করে নেয়। ১৪ এপ্রিল আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, শাহজাহান, ল্যান্স নায়েক আঃ হাই, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং সিপাহী আব্দুর রহমান শহীদ হন। ১৮ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলার দরুইনে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুখোমুখি লড়াইয়ে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল শহীদ হন। এ গ্রামেই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালকে সমাহিত করা হয়। ৫ মে সরাইল উপজেলায় লেফটেন্যান্ট হেলাল মুর্শেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করলে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ২২ নভেম্বর কসবা উপজেলার লতোয়ামুড়া ও চন্দ্রপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কুল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনী আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতুর আশুগঞ্জের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংস করার পর পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছে এমন ধারণা থেকেই যৌথবাহিনী আশুগঞ্জ দখল করতে অগ্রসর হয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র পাকবাহিনী অগ্রসরমান ১৮ রাজপুত বাহিনীর উপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। হামলায় মিত্রবাহিনীর ৪ জন সেনা অফিসারসহ প্রায় ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নাসিরনগর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান শহীদ হন এবং তুল্লাপাড়া গ্রামের বটতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে একজন রাজাকারসহ ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছা বাজারের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের মাইন বিস্ফোরণে দুটি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পাকবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও সরাইলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হন। ৫ আগস্ট বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পাকবাহিনী উজানচর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে গণহত্যা চালায়। ১৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলার নাসিরনগর সদর, কুণ্ডা, বোলাকোট ও গোকর্ণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাকবাহিনীর হামলায় বহুসংখ্যক নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উপজেলার কাউতলী, পৈরতলা, সিঙ্গারবিল, নাটাই, মজলিশপুর, বিজেশ্বর, রামরাইল ও আটলায় পাকবাহিনী প্রায় ২০৪ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী বুধন্তী ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামে প্রায় ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সরাইল উপজেলার বিটঘর এলাকায় পাকবাহিনী প্রায় ৭০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। আশুগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী সন্দেহভাজন লোকজনদের ধরে এনে সাইলো বধ্যভূমিতে নির্যাতন করে হত্যা করে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫ জন। জেলার ৬টি স্থানে (খারঘর, নবীনগর পাইলট হাইস্কুল মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে, নবীনগর থানা কম্পাউন্ডের দক্ষিণাংশে, মগরা গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়, আখাউড়া ত্রিপুরা সীমানাস্থ সেনারবাদী, লালপুর বাজার) গণকবর, আশুগঞ্জ সাইলো এলাকায় ১টি বধ্যভূমি, লক্ষ্মীপুর, কোল্লাপাথর, শিমরাইল ও জমশেরপুরে মোট ৮টি শহীদ সমাধি রয়েছে; ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ ও ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি অবস্থিত।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৩%; পুরুষ ৪৫.৭%; মহিলা ৪৪.৯%। আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৩৯, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩০, ভোকেশনাল স্কুল ৪, মুক বধির বিদ্যালয় ১, মহিলা কুটিরশিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১, কিন্ডার গার্টেন ৬৩, মাদ্রাসা ৩৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৮), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৪), নবীনগর সরকারি কলেজ (১৯৬৯), শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭২), বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭৩), সরাইল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৮৪), নাসিরনগর মহাবিদ্যালয় (১৯৮৭), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬০), অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৫), সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), গুনিয়ক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৭), কসবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), রামকানাই হাই একাডেমী (১৯০১), চাতালপুর ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বিদ্যাকুট অমর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), কৈতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কুটি অটল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ফান্দাউক পন্ডিত রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), জমশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), মডেল সরকারি গার্লস হাইস্কুল (১৯৩৬), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০),  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল (১৯৪১), মিরাসানী পলিটেকনিক একাডেমী (১৯৪৮), আদমপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৭), দাঁতমন্ডল এরফানিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯৫০), বাঞ্ছারামপুর সোবহানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮১), রাধানগর কালিকাপুর রাহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৩)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৬২%, অকৃষি  শ্রমিক ৩.৩৮%, শিল্প ১.৬৬%, ব্যবসা ১৬.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৯%, নির্মাণ ১.৩৯%, চাকরি ৭.৭০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৬৮% এবং অন্যান্য ১০.৪২%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, প্রজাবন্ধু, আজকের হালচাল, তিতাস কণ্ঠ, দিনদর্পণ; সাপ্তাহিক: অগ্নিবাণী; পাক্ষিক: সকালের সূর্য; ত্রৈমাসিক: সিড়ি, নাসির-নগর বার্তা, প্রত্যাশা, আশুগঞ্জ সংবাদ, একুশে আলো, কলমের কথা, সরাইল যুগে যুগে, সরাইল বার্তা, মুক্তপ্রবাহ, অনুপম বার্তা। অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক ঊষা, তিতাস; মাসিক: হিরা, মান্দাস, পরিচয়, পল্লী প্রদীপ, রায়ত বন্ধু, চুন্টা প্রকাশ (১৯২২); পাক্ষিক: বেলাশেষে (১৯৯৩)।

লোকসংস্কৃতি জারি গান, সারি গান, বাউল গান, কবি গান, যাত্রা গান, পালা গান, আধ্যাত্মিক গান, লোকসঙ্গীত, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, ছড়া, পুঁথি, কিচ্ছা-কাহিনী উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান কাল ভৈরব, ফারুকী পার্কের স্মৃতিসৌধ, সৌধ হীরন্ময়, হাতীর পুল, কেল্লা শহীদ মাজার, গঙ্গাসাগর দিঘি, উলচাপাড়া মসজিদ, কাজী মাহমুদ শাহ (রহ) মাযার, ছতুরা শরীফ, নাটঘর মন্দির, বিদ্যাকুট সতীদাহ মন্দির। [শেখ মোহাম্মদ সাঈদুল্লাহ লিটু]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।