ব্রণ

ব্রণ (Acne) ব্রণ বা একনি হলো ত্বকের পিলোসিবাসিয়াস ইউনিটের একটি ব্যাধি। আমাদের ত্বক ফানেল বা নলাকৃতি অতিক্ষুদ্র খাদ বা গহ্বর সমৃদ্ধ একটি আবরণ। ত্বকের অতিক্ষুদ্র এই গহ্বরগুলোকে হেয়ার ফলিকল বলে, যা থেকে একটি চুল গজায়। চুলের ফলিকল, চুলের খাদ এবং সেবাসিয়াস গ্রন্থি এই তিনটিকে সমষ্টিগত ভাবে পিলোসিবাসিয়াস ইউনিট বা একক বলা হয়। পিলোসিবাসিয়াস ইউনিট একটি জটিল, গতিশীল, ৩-ডি কাঠামো। এখানে বিপাকীয়, ইমিউনোলজিক্যাল এবং অনান্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। সাধারন অবস্থায় সেবাসিয়াস গ্রন্থি তার নালীর মাধ্যমে হেয়ারফলিকলে সেবাম নিঃসরণ করে।

সেবাম হল ট্রাইগ্লিসারাইড, মোম-এস্টার, স্কোয়ালিন, কোলেস্টেরল ইত্যাদি স্নেহজাতীয় দ্রব্যের একটি মিশ্রণ। সেবাম মিশ্রণটি ত্বকের উপর পৃষ্ঠে নিঃসৃত হয়ে একটি পাতলা ফ্যাটি ফিল্ম বা তৈলাক্ত আবরণ তৈরি করে ত্বককে সুরক্ষিত, নমনীয় এবং জলরোধী করে শরীরকে পানিশূণ্যতা থেকে রক্ষা করে। সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালীপথের মুখটি বন্ধ হয়ে গেলে সিবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ যেমন চুলের অংশ, মৃত ত্বক-কোষ, ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের ধ্বংসাবশেষ ফলিকল থেকে নির্গত হতে না পেরে সেখানে জমে বাইরের দিকে ফেঁপে ফুলে ওঠে। তখন প্রদাহ দেখা দেয়। এটাই ত্বকের ব্রণ বাএকনি নামে পরিচিত। সিবাসিয়াস নালীর অবরুদ্ধ মুখটা লালচে, সাদাটে বা কালো রং ধারন করে, তখন এদেরকে পিম্পল বলে।

ব্রণ সৃষ্টির প্রকৃতি বা প্যাথোজেনেসিসএকটি জটিল প্রক্রিয়া। সিবাসিয়াস গ্রন্থির কোষগুলির মাত্রাতিরিক্ত বিভাজনের ফলে গ্রন্থিটির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (সেবেসিয়াস হাইপারপ্লাসিয়া), হেয়ারফলিকলের কেরাটিনোসাইট নামক কোষগুলোর অতি-বিভাজন এবং সেখান থেকে কেরাটিন নামক প্রোটিনটির অতিরিক্ত উৎপাদন (ফলিকুলার হাইপারকেরাটিনাইজেশন), প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াাম নামক জীবাণুটির মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিস্তার (ব্যাকটেরিয়াল হাইপারকোলোনাইজেশন) ইত্যাদির জন্য ব্রণ হয়ে থাকে। এছাড়াও শরীরের ইমিউন প্রতিক্রিয়ায় জড়িত কিছু প্রোটিন যেমন প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন ইন্টারলিউকিন-১ এবং টিউমার নেক্রোসিসফ্যাক্টর এর নিঃসরণ, উচ্চ সিবাম ঘনত্ব এবং প্রদাহ ইত্যাদি প্রক্রিয়া ব্রণ বাএকনি সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়। ব্রণ তার ব্যাপকতা, জটিলতা এবং ক্লিনিকাল অভিব্যক্তির পরিসরের কারণে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। ব্রণ ভালগারিস হলো এককভাবে সবচেয়ে সাধারণ চর্মরোগ যা আনুমানিক ৭৫% কিশোর ছেলে এবং ৭০% কিশোরী মেয়েদের হয়। ব্রণ যে কোনো বয়সে হতে পারে। সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত না হলেও হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, অ্যালকোহল, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে ব্রণ হয়। বংশগত কারণও ব্রণ সৃষ্টিতে জড়িত। [মো. শাহাদাত হোসেন]