ব্রজমোহন কলেজ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''ব্রজমোহন কলেজ''' বি এম কলেজ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৮৮৪ সালের ২৭ জুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে মহাত্মা [[দত্ত, অশ্বিনীকুমার|অশ্বিনীকুমার দত্ত]] তাঁর পিতা কলকাতার জজ ব্রজমোহন দত্তের নামে ব্রজমোহন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে অশ্বিনীকুমার তাঁর পিতার নিকট থেকে এটিকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তরের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ব্রজমোহন দত্তের জীবদ্দশায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। তবে অশ্বিনীকুমার ১৪ জুন, ১৮৮৯ সালে বি এম স্কুলের সঙ্গে এফ.এ ক্লাস খুলে এটিকে একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে রূপান্তর করেন। ১৮৯৮ সালে কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যক্ষ রো সাহেবের সহায়তায় বড় লাট কলেজটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। এ কলেজের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফাদার স্ট্রং এবং প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীকে (১৮৮৯-১৮৯০) নিয়োগ দেওয়া হয়।
'''ব্রজমোহন কলেজ''' বি এম কলেজ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৮৮৪ সালের ২৭ জুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে মহাত্মা [[দত্ত, অশ্বিনীকুমার|অশ্বিনীকুমার দত্ত]] তাঁর পিতা কলকাতার জজ ব্রজমোহন দত্তের নামে ব্রজমোহন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে অশ্বিনীকুমার তাঁর পিতার নিকট থেকে এটিকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তরের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ব্রজমোহন দত্তের জীবদ্দশায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। তবে অশ্বিনীকুমার ১৪ জুন, ১৮৮৯ সালে বি এম স্কুলের সঙ্গে এফ.এ ক্লাস খুলে এটিকে একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে রূপান্তর করেন। ১৮৯৮ সালে কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যক্ষ রো সাহেবের সহায়তায় বড় লাট কলেজটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। এ কলেজের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফাদার স্ট্রং এবং প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীকে (১৮৮৯-১৮৯০) নিয়োগ দেওয়া হয়।


[[Image:BMCollegeBarisal.jpg|thumb|right|400px|ব্রজমোহন কলেজ]]
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় দক্ষিণ অঞ্চলের নেতৃত্বদানে অশ্বিনীকুমার ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রধান ভূমিকা ছিল। ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সিটি কলেজের অধ্যক্ষদ্বয় যথাক্রমে মি জেমস ও হেরম্ব মিত্রকে বি এম স্কুল ও বি এম কলেজ পরিদর্শনে পাঠানো হয়। পরিদর্শকের পক্ষপাতমূলক রিপোর্টের ফলে কলেজটি স্বীকৃতি না পেলেও তা উত্তরোত্তর সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে। ১৯০৭ সালে ইংরেজ সরকারের ঢাকা বিভাগের ইনস্পেক্টর তল্লীবাহ ও ড. পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায় কলেজটির বিরুদ্ধে অনেকগুলি অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার সঙ্গে এসব অভিযোগ খন্ডন করেন। ১৯০৮ সালে ড. পি.কে রায় কলেজ পরিদর্শনে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেন। তদন্তে কলেজের কোন দোষ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে অনুমোদন দিতে হয়। তবে এরপরও সমস্যা থেকে কলেজটি পুরোপুরি রক্ষা পায় নি। আকস্মিকভাবেই অশ্বিনীকুমার ও তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে এলাহাবাদে অন্তরীণ অবস্থায় রাখলে কলেজটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা ধৈর্য সহকারে একযোগে নিঃস্বার্থ সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে কলেজের কাজ চালাতে থাকেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত এলাহাবাদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বরিশালে আসার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনের অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। কলেজের অবনতির কথা ভেবে স্থানীয় অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার রেভারেন্ড এল স্ট্র কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে একটা সম্মানজনক মীমাংসার জন্য এগিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলন]] অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ায় সরকারের অবদমনমূলক তৎপরতাও কমে যায়। ১৯১২ সালে কলেজের স্বত্বাধিকারীরা দলিল করে কলেজের স্বত্বাধিকার ত্যাগ করেন এবং কলেজের পরিচালনার দায়িত্ব একটি কাউন্সিল অব ট্রাস্টি-র ওপর ন্যস্ত করেন।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় দক্ষিণ অঞ্চলের নেতৃত্বদানে অশ্বিনীকুমার ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রধান ভূমিকা ছিল। ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সিটি কলেজের অধ্যক্ষদ্বয় যথাক্রমে মি জেমস ও হেরম্ব মিত্রকে বি এম স্কুল ও বি এম কলেজ পরিদর্শনে পাঠানো হয়। পরিদর্শকের পক্ষপাতমূলক রিপোর্টের ফলে কলেজটি স্বীকৃতি না পেলেও তা উত্তরোত্তর সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে। ১৯০৭ সালে ইংরেজ সরকারের ঢাকা বিভাগের ইনস্পেক্টর তল্লীবাহ ও ড. পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায় কলেজটির বিরুদ্ধে অনেকগুলি অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার সঙ্গে এসব অভিযোগ খন্ডন করেন। ১৯০৮ সালে ড. পি.কে রায় কলেজ পরিদর্শনে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেন। তদন্তে কলেজের কোন দোষ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে অনুমোদন দিতে হয়। তবে এরপরও সমস্যা থেকে কলেজটি পুরোপুরি রক্ষা পায় নি। আকস্মিকভাবেই অশ্বিনীকুমার ও তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে এলাহাবাদে অন্তরীণ অবস্থায় রাখলে কলেজটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা ধৈর্য সহকারে একযোগে নিঃস্বার্থ সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে কলেজের কাজ চালাতে থাকেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত এলাহাবাদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বরিশালে আসার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনের অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। কলেজের অবনতির কথা ভেবে স্থানীয় অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার রেভারেন্ড এল স্ট্র কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে একটা সম্মানজনক মীমাংসার জন্য এগিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলন]] অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ায় সরকারের অবদমনমূলক তৎপরতাও কমে যায়। ১৯১২ সালে কলেজের স্বত্বাধিকারীরা দলিল করে কলেজের স্বত্বাধিকার ত্যাগ করেন এবং কলেজের পরিচালনার দায়িত্ব একটি কাউন্সিল অব ট্রাস্টি-র ওপর ন্যস্ত করেন।
[[Image:BMCollegeBarisal.jpg|thumb|right|ব্রজমোহন কলেজ
]]


১৯১২ সালের পর ব্রজমোহন কলেজ সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকে এবং কলেজের জন্য পঞ্চাশ বিঘা জমির উপর প্রয়োজনীয় বাড়ি, ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য যাবতীয় সবকিছুই অশ্বিনীকুমারের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে। অশ্বিনীকুমার দত্ত আইন ব্যবসায় ছেড়ে দিয়ে নিজেই ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন এবং কিছুদিনের মধ্যে বি.এ ও বি.এল ক্লাস চালু করে কলেজটিকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসেন। বর্তমানে কলেজটি ১২৬ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। কলেজ ক্যাম্পাসটি ১৯১৭ সালে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ও ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় কলেজটি পুনরায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র ও শিক্ষক ভারতে চলে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কলেজের দ্বি-বার্ষিক ও ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিয়ে স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে পুনরায় কলেজের অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সরকার ১৯৫৯ সালে কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি শ্রেণিতে পাঠদানের পাশাপাশি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি সরকারিকরণ করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট কোর্স বাতিল করা হয়।
১৯১২ সালের পর ব্রজমোহন কলেজ সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকে এবং কলেজের জন্য পঞ্চাশ বিঘা জমির উপর প্রয়োজনীয় বাড়ি, ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য যাবতীয় সবকিছুই অশ্বিনীকুমারের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে। অশ্বিনীকুমার দত্ত আইন ব্যবসায় ছেড়ে দিয়ে নিজেই ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন এবং কিছুদিনের মধ্যে বি.এ ও বি.এল ক্লাস চালু করে কলেজটিকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসেন। বর্তমানে কলেজটি ১২৬ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। কলেজ ক্যাম্পাসটি ১৯১৭ সালে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ও ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় কলেজটি পুনরায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র ও শিক্ষক ভারতে চলে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কলেজের দ্বি-বার্ষিক ও ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিয়ে স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে পুনরায় কলেজের অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সরকার ১৯৫৯ সালে কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি শ্রেণিতে পাঠদানের পাশাপাশি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি সরকারিকরণ করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট কোর্স বাতিল করা হয়।

০৫:৫৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ব্রজমোহন কলেজ বি এম কলেজ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৮৮৪ সালের ২৭ জুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত তাঁর পিতা কলকাতার জজ ব্রজমোহন দত্তের নামে ব্রজমোহন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে অশ্বিনীকুমার তাঁর পিতার নিকট থেকে এটিকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তরের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ব্রজমোহন দত্তের জীবদ্দশায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। তবে অশ্বিনীকুমার ১৪ জুন, ১৮৮৯ সালে বি এম স্কুলের সঙ্গে এফ.এ ক্লাস খুলে এটিকে একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে রূপান্তর করেন। ১৮৯৮ সালে কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যক্ষ রো সাহেবের সহায়তায় বড় লাট কলেজটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। এ কলেজের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফাদার স্ট্রং এবং প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীকে (১৮৮৯-১৮৯০) নিয়োগ দেওয়া হয়।

ব্রজমোহন কলেজ

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় দক্ষিণ অঞ্চলের নেতৃত্বদানে অশ্বিনীকুমার ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রধান ভূমিকা ছিল। ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সিটি কলেজের অধ্যক্ষদ্বয় যথাক্রমে মি জেমস ও হেরম্ব মিত্রকে বি এম স্কুল ও বি এম কলেজ পরিদর্শনে পাঠানো হয়। পরিদর্শকের পক্ষপাতমূলক রিপোর্টের ফলে কলেজটি স্বীকৃতি না পেলেও তা উত্তরোত্তর সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে। ১৯০৭ সালে ইংরেজ সরকারের ঢাকা বিভাগের ইনস্পেক্টর তল্লীবাহ ও ড. পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায় কলেজটির বিরুদ্ধে অনেকগুলি অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার সঙ্গে এসব অভিযোগ খন্ডন করেন। ১৯০৮ সালে ড. পি.কে রায় কলেজ পরিদর্শনে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেন। তদন্তে কলেজের কোন দোষ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে অনুমোদন দিতে হয়। তবে এরপরও সমস্যা থেকে কলেজটি পুরোপুরি রক্ষা পায় নি। আকস্মিকভাবেই অশ্বিনীকুমার ও তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে এলাহাবাদে অন্তরীণ অবস্থায় রাখলে কলেজটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা ধৈর্য সহকারে একযোগে নিঃস্বার্থ সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে কলেজের কাজ চালাতে থাকেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত এলাহাবাদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বরিশালে আসার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনের অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। কলেজের অবনতির কথা ভেবে স্থানীয় অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার রেভারেন্ড এল স্ট্র কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে একটা সম্মানজনক মীমাংসার জন্য এগিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে স্বদেশী আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ায় সরকারের অবদমনমূলক তৎপরতাও কমে যায়। ১৯১২ সালে কলেজের স্বত্বাধিকারীরা দলিল করে কলেজের স্বত্বাধিকার ত্যাগ করেন এবং কলেজের পরিচালনার দায়িত্ব একটি কাউন্সিল অব ট্রাস্টি-র ওপর ন্যস্ত করেন।

১৯১২ সালের পর ব্রজমোহন কলেজ সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকে এবং কলেজের জন্য পঞ্চাশ বিঘা জমির উপর প্রয়োজনীয় বাড়ি, ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য যাবতীয় সবকিছুই অশ্বিনীকুমারের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে। অশ্বিনীকুমার দত্ত আইন ব্যবসায় ছেড়ে দিয়ে নিজেই ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন এবং কিছুদিনের মধ্যে বি.এ ও বি.এল ক্লাস চালু করে কলেজটিকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসেন। বর্তমানে কলেজটি ১২৬ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। কলেজ ক্যাম্পাসটি ১৯১৭ সালে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ও ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় কলেজটি পুনরায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র ও শিক্ষক ভারতে চলে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কলেজের দ্বি-বার্ষিক ও ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিয়ে স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে পুনরায় কলেজের অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সরকার ১৯৫৯ সালে কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি শ্রেণিতে পাঠদানের পাশাপাশি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি সরকারিকরণ করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট কোর্স বাতিল করা হয়।

দক্ষিণাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করা খুবই ব্যয়বহুল ছিল। তাই স্বাধীনতার পর ছাত্রসমাজের দাবির মুখে সরকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালা তৈরি করে। এ নীতিমালার আওতায় কলেজের ১৯৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়সমূহে স্নাতক সম্মান চালু করা হয়। একই বছর বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও রসায়নে স্নাতকোত্তর শ্রেণি খোলা হয়। যেসব বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছিল না সেসব বিষয়ের স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়তে হতো। ১৯৮৫ সালে প্রতিটি স্নাতক বিষয়ের স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করার নীতিমালা কার্যকর করা হয়। বর্তমানে ১৮টি বিষয়ে অনার্স এবং ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর চালু আছে। ২০০১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী কলেজে মোট ১৪৭ জন শিক্ষক এবং ২১,২১৫ জন ছাত্রছাত্রী আছে। কলেজে ছাত্রদের জন্য ৩টি (মুসলিম হোস্টেল, মহাত্মা অশ্বিনীকুমার হোস্টেল, কবি জীবনানন্দ দাশ হিন্দু হোস্টেল) এবং মেয়েদের জন্য চারতলা ভবনের ১টি হোস্টেল (বনমালী গাঙ্গুলী মহিলা হোস্টেল) রয়েছে। কলেজের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০,০০০। এখানে ১টি বাণিজ্য ভবন, ২টি কলা ভবন, ৪টি বিজ্ঞান ভবন ও ৩টি খেলার মাঠ রয়েছে। এছাড়া দুই প্রান্তে দুটি দিঘি কলেজের সৌন্দর্যকে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর।  [মো তুহীন মোল্লা]