বোলান গান
বোলান গান শিবের গাজন উপলক্ষে গেয় একপ্রকার আঞ্চলিক লোকগীতি। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এ গানের প্রচলন বেশি। নৃত্য-গীত-অভিনয় সমন্বয়ে এ গান পরিবেশিত হয়।
বোলান গানের দল গঠিত হয় গায়ক-বাদকদের সমন্বয়ে। একজন ওস্তাদ দলের নেতৃত্ব দেয়। অল্প বয়সের কিশোর নটিবেশে নর্তকী ও গায়িকার ভূমিকা পালন করে। এদিক থেকে আলকাপ গানের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তফাৎ এই যে, আলকাপ গান নির্ধারিত আসরে গাওয়া হয়, আর বোলান দলের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গান পরিবেশন করে।
বোলান গান বাঁধা হয় পালার আকারে। এর মুখ্য বিষয় পৌরাণিক কাহিনী। তবে সামাজিক বিষয় ও সমসাময়িক ঘটনা নিয়েও গান রচনা করা হয়। এতে লঘু-গুরু উভয় বিষয়েরই স্থান আছে। গুরু বিষয় খন্ডগীতি, আর লঘু বিষয় রঙপাঁচালি নামে পরিচিত। রঙপাঁচালিতে কৌতুক ও হাল্কা রসের বিষয় থাকে, কিন্তু তা কোনোক্রমেই ভাঁড়ামি বা অশ্লীলতার পর্যায়ে পৌঁছায় না।
বন্দনাগীতির মাধ্যমে বোলান গান শুরু হয় এবং পরে পাঁচালির ঢঙে মূল পালা গীত হয়। গানের পর সংলাপ ও উক্তি-প্রত্যুক্তির মাধ্যমে কিছু তত্ত্বকথা ব্যক্ত করা হয় এবং শেষে থাকে লঘু রসের রঙপাঁচালি। এ অংশে নাচ-গানেরও আয়োজন করা হয় দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য।
বোলান গানের শিল্পীরা হয় অপেশাদার। অবকাশ সময়ে গ্রামের উৎসাহী যুবকরা দল গঠন করে এবং বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি গান বেঁধে দেন। যন্ত্রীর অভাব হলে সে ক্ষেত্রে ভাড়া করে আনা হয়। সবটাই অস্থায়ী। যুগের পরিবর্তন এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বোলান গান ক্রমশ লোপ পেয়ে যাচ্ছে। [ওয়াকিল আহমদ]