বেসরকারি হাসপাতাল ও কিনিক
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের জন্য বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ক্লিনিকে সাধারণত অনাবাসিক রোগীরাই চিকিৎসা পায়। ব্রিটিশ আমল থেকেই সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে স্বাস্থ্যসেবাকে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এই ধারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও অব্যাহত রয়েছে। বিশ শতকের নববই দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে চিকিৎসাখাত ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতের মনোযোগ আকর্ষণ করতে থাকে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই সরকারি খাতের বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্যায়ে পরিচালিত। হাতে-কলমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে দেশের সব সরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে হাসপাতাল রয়েছে। দেশের একমাত্র চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে এ ধরনের ব্যবস্থা।
বিশ শতকের নববই দশকে হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কিছু স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক গড়ে উঠতে থাকে। এই ক্লিনিকগুলি বিভিন্ন নামে অভিহিত, যেমন মেডিক্যাল সেন্টার, নার্সিং হোম, হাসপাতাল ইত্যাদি। আদর্শ হাসপাতালের কিছু বৈশিষ্ট্য এই ক্লিনিকগুলির রয়েছে, কিন্তু এগুলি আয়তনে অপেক্ষাকৃত ছোট; সাধারণত ১০-৫০ শয্যাবিশিষ্ট এবং মানসম্মত আদর্শ হাসপাতালের চিকিৎসা-সুবিধার সবগুলি এসব ক্লিনিকে থাকে না। এই ক্লিনিকগুলির কিছু সাধারণ ধরনের, যেখানে চিকিৎসা ও সাধারণ অস্ত্রোপচারে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু অল্প সংখ্যক ক্লিনিক আবার চক্ষুরোগ বা হূদরোগ চিকিৎসার মতো বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। আবাসিক ক্লিনিকগুলির মধ্যে অধিকাংশই দেশের প্রধান প্রধান শহরে অবস্থিত- ৬ বিভাগীয় সদরে, ৬৪ জেলা সদরে এবং ৪৬১ উপজেলা সদরে। এ ধরনের বেসরকারি ক্লিনিকগুলির অধিকাংশ এবং নিশ্চিতভাবেই সর্বোত্তমগুলি রয়েছে রাজধানী ঢাকায়। তবু জনসংখ্যার তুলনায় এ ধরনের ক্লিনিকের সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতির জন্য দুটি বিষয় বিবেচ্য হতে পারে। প্রথমত, এই চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধু উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, দেশ ছোট হওয়ায় চিকিৎসার্থী নিজেরাই কয়েক ঘণ্টায় সহজেই রাজধানীতে চলে আসতে পারেন। ঢাকা শহরে এই রকম ছোট ও বড় আবাসিক ক্লিনিকের সংখ্যা কয়েক‘শ।
দেশে মাত্র কয়েকটি আদর্শ বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলির অধিকাংশই বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সংযুক্ত। এরকম বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২টির বেশি। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত কিছু পুরাতন বেসরকারি হাসপাতালও রয়েছে। ঢাকার অদূরে মির্জাপুরে অবস্থিত কুমুদিনী হাসপাতাল দেশের একটি প্রাচীনতম ও সুপরিচিত বেসরকারি হাসপাতাল। ইদানিং বিত্তবান লোকেরা প্রিয়জনের স্মৃতি রক্ষার্থে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছেন, যদিও সংখ্যা খুবই কম। অধিকন্তু, কমিউনিটি হাসপাতালও স্থাপিত হচ্ছে যেগুলি পুরোপুরি ব্যক্তিগত নয়, কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত। উন্নত চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগীদের বিদেশগমন রোধে কয়েকটি বেসরকারি ও অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে রোগনির্ণয় খাতে। বিশ শতকের আশির দশকের শুরু পর্যন্ত রোগনির্ণয় বস্ত্তত রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা, কিছু জীবাণু কালচার, প্রচলিত বায়োক্যামিকাল টেস্ট, রঞ্জনরশ্মি ইত্যাদি সাধারণ পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে রোগনির্ণয় কার্যক্রমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। অনেকগুলি বেসরকারি ক্লিনিকেরই এখন ইমেজিং, আলট্রাসনোগ্রাফি, হরমোন পরীক্ষা, সংক্রমণ পরীক্ষার মতো রোগনির্ণয়ের উন্নততর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]