বেলকুচি উপজেলা

বেলকুচি উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৫৮.৮৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৩´ থেকে ২৪°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৭´ থেকে ৮৯°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে শাহজাদপুর এবং চৌহালি উপজেলা, পূর্বে কালিহাতি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, পশ্চিমে কামারখন্দ ও উল্লাপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৫২৮৩৫; পুরুষ ১৭৯৭৩৮, মহিলা ১৭৩০৯৭। মুসলিম ৩৩৩৭৩৫, হিন্দু ১৮৯৪৯, বৌদ্ধ ৮, খ্রিস্টান ৫০ এবং অন্যান্য ৯৩।

জলাশয় যমুনা ও হুরাসাগর নদী এবং চন্ডীবিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বেলকুচি থানা গঠিত হয় ১৯২১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০০ ১৩১ ৭৫৩৬৪ ২৭৭৪৭১ ২২২১ ৪৯.৬ ৪৪.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯ ১৪ ৭৫৩৬৪ ৩৯৬৭ ৪৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দৌলতপুর ৫৪ ৫১৪৯ ৪৫২৫৯ ৪২৯৭৭ ৪৫.২
ধুকুরিয়া বেড়া ৬৭ ৭৪৭২ ২৯৩৭০ ২৮৬৬৯ ৪৩.৪
বড়ধুল ১৩ ৭২৬৯ ৯৭৩০ ৯৬৬৬ ৩৬.২
বেলকুচি ২৭ ৩০৯৫ ৫০৪০ ৫০৪৯ ২৮.৮
ভাঙ্গাবাড়ী ৪০ ৫৮৭৭ ২৬৮২২ ২৬৫৫৮ ৫২.৩
রাজাপুর ৮১ ৬১৭৮ ২৪৩৪৩ ২৩৯৮৮ ৪২.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা বাঁধে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের তামাই পশ্চিমপাড়া কবরস্থানের উত্তর পাশে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন বেলকুচি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৪১, মন্দির ৭২, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: আজগড়া মারকাজ জামে মসজিদ ও সোহাগপুর কালীবাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৭%; পুরুষ ৪৮.২%, মহিলা ৪৩.১%। কলেজ ১৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৭, কেজি স্কুল ২৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৩, মাদ্রাসা ২৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বেলকুচি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), বেলকুচি আই আই মহিলা কলেজ (১৯৮৭), বেলকুচি মহিলা কলেজ (১৯৯৮), দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৯), বানিয়াগাতি কারিগরি বিজ্ঞান কলেজ (২০০১), শ্যাম কিশোর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (১৯১৩), সতীনাথ একাডেমী, সোহাগপুর এস.কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), সোহাগপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), সায়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), মেঘুল্লা সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৫৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ৬, মহিলা সমিতি ১৪৫, ক্লাব ৪২, খেলার মাঠ ১৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২২.২২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৩৬%, শিল্প ৩৪.৩৮%, ব্যবসা ১৯.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯২%, চাকরি ৪.৮২%, নির্মাণ ১.০৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৫% এবং অন্যান্য ৯.৩৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪১.৯২%, ভূমিহীন ৫৮.০৮%। শহরে ২৪.৫৫% এবং গ্রামে ৪৩.০৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, ডাল, বাদাম, যব, কাউন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, কলা, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৫১৩, গবাদিপশু ৪২, হাঁস-মুরগি ৩৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৭৭ কিমি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প ৫০৩২, বাঁশের কাজ ১২, বেতের কাজ ১০, কাঠের কাজ ২২৬।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৭, মেলা ৩। সোহাগপুর হাট, মুকন্দগাতি হাট ও কান্দাপাড়া হাট এবং সোহাগপুরে নৌকা বাইচের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, সরিষা, তাঁতবস্ত্র।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৫.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রযেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৯%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ২.৬%। এ উপজেলার ৭% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৪.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা এবং ১৯৯৩ সালের টর্নেডোতে এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, কৃষি ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, এসডিএস, টিএমএসএস। [মো. রফিকুল ইসলাম]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বেলকুচি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।