বেভারীজ, অ্যানেট সুসানা অ্যাক্রয়েড
বেভারীজ, অ্যানেট সুসানা অ্যাক্রয়েড (১৮৪২-১৯২৯) বাংলার নারী শিক্ষা সংস্কার কাজের জন্য এবং প্রাচ্যবিশারদ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের ওরস্টারশায়ারের স্টাউরব্রিজের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অ্যানেট তাঁর যুগে মেয়েদের জন্য লভ্য শিক্ষার মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৮৬০ সাল থেকে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত লন্ডনের বেডফোর্ড কলেজে লেখাপড়া করেন এবং শিক্ষা গ্রহণের শেষে কিছুদিন কাজ করেন। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডে কেশবচন্দ্র সেন এর বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার নারী শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীসময়ে তিনি বিখ্যাত বঙ্গীয় ব্রাহ্ম (Brahma) সংস্কারের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং জনজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৮৭৩ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর প্রচেষ্টার ফলে কলকাতায় ১২ জন ছাত্রী নিয়ে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যানেটের কঠোর তত্ত্বাবধানে স্কুলটি পশ্চিমা ধাঁচে পরিচালিত হচ্ছিল। ১৮৭৫ সালের ৬ এপ্রিল অ্যানেট তাঁর পরিকল্পনায় হতাশ হয়ে বারাসাতে কর্মরত আই.সি.এস সদস্য হেনরী বেভারীজকে বিয়ে করেন এবং স্কুলটির প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রগতিশীল ব্রাহ্ম সমাজের কাছে হস্তান্তর করেন। স্কুলটি কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ১৮৭৬ সালে ’বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ (Banga Mahila Vidyalaya) নামে পুনরায় চালু হয়। ১৮৭৮ সাল নাগাদ বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য স্কুলটিকে বেথুন স্কুলের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
তাঁর বিয়ের পর বাংলা নারী শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন একজন যোগ্য নেতৃত্ব হারায়। অ্যানেট একজন জেলা জজের স্ত্রী হিসেবে ব্যস্ত জীবন কাটালেও সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ মর্যাদায় তিনি বর্তমান বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা ও বিহারে ভ্রমণ করে সময় কাটান।
মধ্যযুগীয় ভারতীয় গ্রন্থাবলির নির্ভরযোগ্য ইংরেজি অনুবাদ ছিল অ্যানেটের স্থায়ী অবদান। জীবনের শেষভাগে তিনি ফারসি ও তুর্কি ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং প্রাচ্য ভাষা গবেষণার জগতে প্রবেশ করেন; এক্ষেত্রে তাঁর স্বামী একজন সহযোদ্ধা ও সঙ্গী ছিলেন। তিনি একজন স্বীকৃত প্রাচ্য ভাষাবিদ এবং ফার্সি ও তুর্কি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাবলির অনুবাদক ছিলেন। এ অনুবাদগুলির মধ্যে ছিল গুলবদন বেগমের হুমায়ুননামা এবং বাবুরনামার নতুন অনুবাদ। এ অনুবাদগুলিকে পান্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ বলে গণ্য করা হয়। রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল অ্যানেট তৎকালীন ইংল্যান্ডে বিকাশমান নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। তিনি পিটফোর্ডের নারী ভোটাধিকার বিরোধী দলের সেক্রেটারি ছিলেন। পুত্র লর্ড উইলিয়ম বেভারীজের লন্ডনের বাড়িতে বৃদ্ধা অবস্থায় ৮৭ বছর বয়সে অ্যানেটের মৃত্যু হয়। বেভারীজ তাদের নিজস্ব চিঠিপত্রের সমৃদ্ধ সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করে রচিত পিতা-মাতার জীবনী India Called Them -এ অ্যানেট ও হেনরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। [সোনিয়া আমিন]