বেগ, এম.এ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৫:৩৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
এম.এ বেগ

বেগ, এম.এ (১৯৩১-১৯৯৮)  আলোকচিত্রশিল্পী। পুরো নাম মঞ্জুর আলম বেগ, তবে এম.এ বেগ নামেই অধিক পরিচিত। এম.এ বেগ ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক সাধারণ শিক্ষালাভের পর তিনি বহির্বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে আলোকচিত্রের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। সে সময় করাচিতে অবস্থিত পাক বিমান বাহিনীর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে আলোকচিত্রের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত করাচিতে ইউনেস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় মাইক্রোফিল্ম তৈরীর ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া লন্ডনের কোডাক ফটোগ্রাফিক স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে কোডাক কালার ফিল্ম কোর্স, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব রিপ্রোগ্রাফিক টেকনোলজি থেকে ১৯৭৬ সালে ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা, যুক্তরাজ্যের র‌্যাঙ্ক জেরক্স ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১৯৭৮ সালে জেরক্স পিপিসি কোর্স, নয়াদিল্লিতে ইউনেস্কো ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তথ্যকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা (১৯৮০-৮১) প্রভৃতি প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

এম.এ বেগ তাঁর বহুল কর্মময় জীবন শুরু করেন ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে যোগদানের মধ্য দিয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি ইউ.এস.আই.এস (United States Information Services)-এর ঢাকা ও ময়মনসিংহ কেন্দ্র (১৯৫৫-১৯৫৭), করাচিতে অবস্থিত প্যান্সডক (PANSDOC - Pakistan National Scientific Documentation Centre) ন্যাশনাল ডকুমেন্টেশন সেন্টার (১৯৫৭-১৯৬০), ঢাকাস্থ রক্সি ফটোগ্রাফিক স্টোর (১৯৬০-১৯৬৩), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ  ব্যান্সডক (BANSDOC)-এর রিপ্রোগ্রাফিকস ডিভিশনের প্রধান (১৯৬৩-১৯৮৮) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এম.এ বেগ সরকারি  শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়-এর অডিও ভিজুয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (১৯৬৩-১৯৬৬) এবং  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগের আলোকচিত্র ও  গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট (১৯৭৭-১৯৭৯)-এর শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক হাসপাতাল (বারডেম)-এর মেডিক্যাল আলোকচিত্র উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এম.এ বেগ ১৯৬০ সালে বেগ আর্ট ইনস্টিটিউট অফ ফটোগ্রাফি নামে দেশের প্রথম আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন যার কর্মকান্ড আজও অব্যাহত রয়েছে। তিনি  বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি-এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ছিলেন। আলোকচিত্রকে শিল্পচর্চার একটি মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলতে বেগ অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। আলোকচিত্রের ওপর তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আধুনিক ফটোগ্রাফি, ফটোগ্রাফি ফরমুলা, ফটোগ্রাফি ডাইজেস্ট, রঙ্গিন ফটো প্রিন্টিং, ডার্করুম সলুশন। দেশে ও বিদেশে আলোকচিত্রের ওপর তাঁর তিনশ-এর অধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

এম.এ বেগ তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে ও বিদেশে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। এগুলির মধ্যে রয়েছে সেন্টো ফটো কনটেস্ট পুরস্কার (ব্রোঞ্জ পদক), আঙ্কারা (১৯৬৮); এসিসিইউ ইউনেস্কো পদক, জাপান (১৯৭৬); এসিসিইউ রোটারী পদক,

জাপান (১৯৭৭); টপ প্রাইজ ফটোকিনা, জার্মানি (১৯৭৮); ফুজি পদক, যুক্তরাজ্য (১৯৮৬); ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার ইত্যাদি। জার্মানিতে ১৯৮৭ সালে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি লা আর্ট ফটোগ্রাফিক (ফিয়াপ)-এর ১৯তম কংগ্রেসে এসফিয়াপ (ESFIAP)-এ সম্মানিত হন; কলকাতায় ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত এফপিএডি-এর প্রথম কনফারেন্সে আলোকচিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অনারারি এফপিএডি’ লাভ করেন এবং সে বছরের জন্য বিশ্বের সেরা এগারোজন আলোকচিত্রীর অন্যতম একজন বলে বিবেচিত হন। ১৯৮২ সালে ওয়ার্ল্ড ভিউ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন্স-এর সম্মানিত আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি-র সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অনারারি ফেলোশীপ’ লাভ করেন। ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফিক কাউন্সিল (আই.আই.পি.সি) ১৯৯১ সালে এম.এ বেগকে ‘এ.এস.আই.আই.পি.সি’ (ASIIPC) সম্মাননা, কলকাতা বইমেলা ’৯৭ তে ফটোগ্রাফিক চর্চা সম্মাননা এবং ১৯৯৭ সালে ‘এফ.এস.আই.আই.পি.সি’ সম্মাননা প্রদান করে। আলোকচিত্রের এ প্রবাদপুরুষকে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এবং ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফটোগ্রাফারস ১৯৯৮ সালে ‘আলোকচিত্রাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।

খ্যাতিমান এ আলোকচিত্রশিল্পী ১৯৯৮ সালের ২৬ জুলাই ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।  [বায়েজীদ আকতার]