বেগমগঞ্জ উপজেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:২৭, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))

বেগমগঞ্জ উপজেলা (নোয়াখালী জেলা)  আয়তন: ২৫৫.৯৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫২´ থেকে ২৩°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সোনাইমুড়ি ও চাটখিল উপজেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী সদর, কবিরহাট ও সেনবাগ উপজেলা, পূর্বে সেনবাগ উপজেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর সদর ও চাটখিল উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫২০১১৪; পুরুষ ২৫৯৮১১, মহিলা ২৬০৩০৩। মুসলিম ৪৯৩৫০৬, হিন্দু ২৬৪৭২, খ্রিস্টান ৪৫, বৌদ্ধ ১৯ এবং অন্যান্য ৭২।

জলাশয় ডাকাতিয়া নদী ও ওয়াপদা খাল।

প্রশাসন বেগমগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৯২ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৬ ১৭৮ ২০৫ ১০৪২৮৫ ৪১৫৮২৯ ১৮০১ ৫৩.৬৩ ৫৪.০৯


পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.২৬ ১৯ ৬০৪৯৫ ৩৯৬৩ ৫৭.৬৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২০.৭১ ৪৩৭৯০ ২১১৪ ৫৯.৩২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমানুল্লাপুর ১২ ২৭৪৪ ১১৯৬৯ ১২৩৬১ ৫৬.০৪
আলাইরাপুর ১০ ৩৯০৫ ১৬১৯৪ ১৭০৭৯ ৬০.৭৪
এখলাসপুর ৪২ ৪৭০৫ ১৯১৩৬ ১৮৯৫৮ ৫৮.৯৮
কাদিরপুর ৬৩ ৩৫৫৮ ১০৯১৭ ১১৭৫৭ ৪৯.৬১
কুতুবপুর ৬৬ ৩০৫৭ ১১০৭৫ ১১৮৮২ ৫৮.০৯
গোপালপুর ৪৫ ৪১৩৭ ১৪৬৫৭ ১৫৪৪৯ ৫৪.১৩
ছয়আনি ২৮ ৫১৪৮ ১৫৩০৮ ১৫৮৭০ ৫৫.১১
জিরতলী ৫৬ ৩৮০৫ ১১৭৮৯ ১২১০৮ ৫৮.৭২
দূর্গাপুর ৩৮ ২৮১২ ১৩৫৪৮ ১৩৬৩১ ৫৭.৩৬
নরোত্তমপুর ৪৯ ১৫৭৮ ৭৪৮৫ ৭৩৩৪ ৪৫.৮২
বেগমগঞ্জ ২৪ ১৬৯৯ ৮১১৭ ৮১৪০ ৪৬.৬৩
মিরওয়ারিশপুর ৭০ ৩০৫৯ ১৩৮২৭ ১৪৬০০ ৪৯.৫৯
রসুলপুর ৮৪ ৪৪২৮ ১৩৬৬৪ ১৩৫৬৮ ৫২.৬৯
রাজগঞ্জ ৮০ ৪৫১৯ ১৭৮১৯ ১৮৬২৭ ৫৪.৪৭
শরীফপুর ৮৭ ৩৬৬৭ ১১৪০৯ ১২০৩০ ৫৩.৯৩
হাজীপুর ৫২ ২১৭৫ ৭৯৬৮ ৭৫৫৩ ৫৩.৫৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলের গোপালপুর চৌধুরী বাড়ির মসজিদ।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা স্তিমিত করার লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী এক শান্তিমিশনে উপজেলায় আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কের আমিনবাজারে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই হয়। ২ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা চন্দ্রগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াহাট বাজারে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও লুটপাট করে। ৬ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ২ (চৌমুহনী ও সোনাইপুর)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ  ৩১০, মন্দির ১৪, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: গোপালপুর চৌধুরী বাড়ি মসজিদ, আলাইপুর জামে মসজিদ, রসুলপুর জামে মসজিদ, দোয়ালিয়া বাজার জামে মসজিদ, বেগমগঞ্জ জামে মসজিদ।

বেগমগঞ্জ উপজেলা

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.২২%; পুরুষ ৫৭.২৫%, মহিলা ৫৪.৭০%। টেক্সটাইল কলেজ ১, যুবপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯০, মাদ্রাসা ৩২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বেগমগঞ্জ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, বেগমগঞ্জ ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, চৌমুহনী সালেহ আহমদ কলেজ, ঘাটলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), হাজীপুর এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), কেবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), বাবুপুর জিরতলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বেগমগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জাতীয় নিশান, নোয়াখালীর খবর, বাংলাদেশের খবর, সচিত্র নোয়াখালী, বাংলা সমাচার, খোলা ডাক, আজকের সমাবেশ; সাপ্তাহিক: চলমান নোয়াখালী, জাতীয় বাংলাদেশ; অবলুপ্ত: পূর্ব বঙ্গবাসী, নোয়াখালী সম্মিলনী, দেশের বাণী, মাসিক আশা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩, লাইব্রেরি ১০, অডিটোরিয়াম ১, নাট্যমঞ্চ, ২, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ২, শিশু-সংগঠন ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১।

দর্শনীয় স্থান রাণীর দিঘি, জিরতলী ইউনিয়নের রঙ্গমালার দীঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৫.৭৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৮%, শিল্প ০.৯৭%, ব্যবসা ১৭.৬৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬৩%, চাকরি ২০.২৩%, নির্মাণ ১.৬৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১২.৫৪% এবং অন্যান্য ১৪.০০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৩০%, ভূমিহীন ৪৩.৭০%। শহরে ৪১.২৫% এবং গ্রামে ৫৮.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চিনাবাদাম, ডাল, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, অড়হর, চীনা।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, জাম, পেয়ারা, পেঁপে, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ১২১, গবাদিপশু ১১০, হ্যাচারি ৭, নার্সারি ৫৪০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৭ কিমি; রেলপথ ২১ কিমি; রেলস্টেশন ৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাটকল, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল, বিস্কুট কারখানা, আইসক্রীম কারখানা, রাসায়নিক দ্রব্য কারখানা, ইটভাটা, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, চারু ও কারুশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৫। বেগমগঞ্জ বাজার, চৌমুহনী বাজার, সোনাইমুড়ি বাজার, রাজগঞ্জ বাজার, কাদিরপুর বাজার, দক্ষিণ রামপুর বাজার, বাংলা বাজার এবং বটতলী মেলা, মুল্লুক ময়দানের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রাকৃতিক সম্পদ  প্রাকৃতিক গ্যাস।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   নারিকেল, শুঁটকি মাছ, চাল, হোগলার চাটাই, বিস্কুট, সরিষার তেল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৬১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৯.৩২%, ট্যাপ ১০.২০%, পুকুর ১৫.০৩% এবং অন্যান্য ৫.৪৫%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৩.৪১% (গ্রামে ২৭.৪৮% ও শহরে ৬৯.৬২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.২১% (গ্রামে ৫৭.৯৫% ও শহরে ২৪.২৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৩৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৮, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪১, ক্লিনিক ৭।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর জলোচ্ছ্বাসে এবং ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট।

[সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বেগমগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।