বিষাক্তপদার্থ

বিষাক্তপদার্থ (Toxin) হলো বিভিন্ন উপাদানে গঠিত অণু যা বিভিন্নভাবে কোষ, ক্ষুদ্রজীব এবং প্রাণির প্রতি বিষাক্ত বৈশিষ্ট্য দেখায়। উদ্ভিদ এবং এর বীজের বিষাক্ত প্রকৃতি বহু শতাব্দী ধরে সুপরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে প্রাকৃতিক বিষের প্রথম তথ্য এবং বর্ণনা পাওয়া গেছে ইবারস প্যাপিরাসে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০ অব্দে, ডায়োস্কোরাইডস তার মেটেরিয়া মেডিকা গ্রন্থে উৎসের উপর নির্ভর করে বিষাক্তপদার্থসমূহকে উদ্ভিজ্জ বিষাক্তপদার্থ, প্রাণিজ বিষাক্তপদার্থ এবং খনিজ বিষাক্তপদার্থে শ্রেণিবদ্ধ করেছিলেন। জৈবিক বিষাক্তপদার্থসমূহ হলো প্রোটিন বা আমিষ। সুতরাং বিষাক্তপদার্থ বা টক্সিনগুলিকে এমন সব জৈব অণু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পোকামাকড়, গাছপালা, মেরুদণ্ডী এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের দ্বারা উৎপাদিত। টক্সিন সংক্রমণ তৈরি করে না। বিষাক্তপদার্থগুলি মূলত উৎপাদকের আত্মরক্ষার জন্য উৎপাদিত হয়, তবে তারা শ্বাস, ইনজেকশন, শোষণের মাধ্যমে অন্যান্য জীবগুলিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিষাক্তপদার্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অন্যান্য জীবের কোষে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। কিছু টক্সিন কোষ ঝিল্লির ক্ষতি করে এবং ফলস্বরূপ টিস্যু এবং বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। এই ধরনের বিষের প্রভাব প্রায়ই অপরিবর্তনীয় এবং স্বাস্থ্যের স্থায়ী ক্ষতি করে। কিছু বিষাক্তপদার্থ জৈব সন্ত্রাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং উদাহরণগুলো হলো অ্যারিসিন (arericin), বোটুলিনাম (botulinum), ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিজেনস (Clostridium perfrigens), এপসিলসন (epsilson), কনোটক্সিন (conotoxins), শিগাটক্সিন (shigatoxins), স্যাক্সিটক্সিন (saxitoxins), টেট্রোডোটক্সিন (tetrodotoxins), মাইকোটক্সিন (mycotoxins) এবং নিকোটিন (nicotine)। সুপরিচিত টক্সিন রাইসিন (ricin) প্রোটিন সংশ্লেষণকে ব্লক করে অনেকগুলো অঙ্গে বিষাক্ততা (মাল্টিঅর্গান টক্সিসিটি) ঘটায় এবং পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রে বটুলিনাম অ্যাসিটাইলকোলিন ব্লক করে যার ফলে পেশী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। কিছু টক্সিন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী (কার্সিনোজেন) হিসেবেও কাজ করতে পারে যেমন- আফলাটক্সিন (aflatoxins)। [এ.কে.এম মাহবুব হাসান]