বিশ্বাস, বসন্তকুমার

বিশ্বাস, বসন্তকুমার (১৮৯৫-১৯১৫)  বিপ্লবী এবং যুগান্তর গ্রুপের একজন কর্মী। তাঁর জন্ম ১৮৯৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলার অন্তর্গত পরগাছাতে। তিনি যুগান্তর গ্রুপের নেতা অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও  রাসবিহারী বসুর নিকট সশস্ত্র কর্মকান্ডের দীক্ষা নেন।

১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে দিল্লির উন্মুক্ত রাস্তায়  লর্ড হার্ডিঞ্জএর ওপর বোমা নিক্ষেপ করে বসন্ত কুমার বিশ্বাস ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ১৯১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি যখন তাঁর পিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পালন করছিলেন, তখন তাঁকে নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। ১৯১৪ সালের ২৩ মে দিল্লিতে দিল্লি-লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি শুরু হয় এবং ৫ অক্টোবর বসন্তকুমারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। সরকার তাঁকে মৃত্যুদন্ড দিতেই বেশি আগ্রহী ছিল। তাই লাহোর হাইকোর্টে একটি আপীল দাখিল করা হয় এবং বিচারের নামে একটি প্রহসন অনুষ্ঠিত হয়। আম্বালা জেলে বসন্ত বিশ্বাসের ফাইলে কারচুপি করা হয়। ফাইলে তার বয়স দুবছর বাড়িয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, তিনি তার কৃত অপরাধের তীব্রতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন। এখন পর্যন্ত জেলের ফাইলে এ ভুলের সংশোধন করা হয়নি। বসন্তকুমার বিশ্বাসকে ফাঁসি দ্বারা মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

১৯১৫ সালের ১১ মে বসন্তকুমার বিশ্বাস অত্যন্ত শান্ত ও অবিচলিত মনে ফাঁসির মঞ্চে উঠেন। পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে মাত্র বিশ বছর বয়সে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়ে বসন্তকুমার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ আত্মত্যাগী হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন। দেশের জন্য তাঁর এই ত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনটি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। একটি নদীয়ার মুরাগাছা স্কুলের সামনে; দ্বিতীয়টি কৃষ্ণনগরে রবীন্দ্র ভবনের পাশে এবং তৃতীয়টি টোকিও-র মাদাম তেতসু-কোং-হিওচি-এর বাগানে। শেষোক্ত ফলকটি রাসবিহারী বসু তাঁর তরুণ অনুসারীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করিয়েছিলেন।  [সোমদত্ত মন্ডল]